পুরুষশূন্য গ্রাম
পুলিশি ‘সন্ত্রাসে’ কুঁকড়ে রয়েছে দোগাছি গ্রাম
গ্রামেরই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টার অভিযোগে রবিবার গর্জে উঠেছিল নাকাশিপাড়ার দোগাছি গ্রাম। ঘটনার পরে পুলিশ গ্রামে গেলে তার আঁচ পেয়েছিলেন পুলিশ কর্মীরা। জনরোষে জখম হয়েছিলেন জনা তিনেক পুলিশকর্মী। ভাঙচুর হয় একটি পুলিশের জিপেও।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এতেই রুষ্ট পুলিশ কর্তারা ধর্ষণে অভিযুক্ত হায়দার শেখকে গ্রেফতার করার পরিবর্তে তাঁদের শায়েস্তা করতে নেমেছেন। রবিবার রাত থেকেই তাই দোগাছি পুরুষশূন্য। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দরজাতেই টোকা পড়ছে পুলিশের।
খোরজুনায় সোমবার মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিল।
সোমবার গ্রামের সন্ত্রস্ত চেহারা দেখলে তার কিছুটা মালুম হয়। গোটা গ্রাম যেন বর্ষার মুড়ির মত মিইয়ে গিয়েছে। আগের দিনের প্রতিবাদের ছিঁটেফোঁটাও নেই। রাস্তাঘাট শুনশান। পারতপক্ষে কেউই পথে বার হচ্ছেন না। পুরুষের দেখা মেলা ভার। গ্রামের মাঝ বরাবর বিস্তৃত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় তৈরি রাস্তার ধারে ইতিউতি মহিলাদের ছোট ছোট জটলা। সেখানে নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে দেখে স্বর আরও চাপা হয়। বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে কয়েকটা ভয়ার্ত মুখ। বেড়ার আড়াল থেকে এক মহিলা চাপা স্বরে বললেন, “ধর্ষণ যে করল সে ধরা পড়ল না আর গত রাত থেকে পুলিশ গোটা গ্রাম চষে বেড়াচ্ছে। যেন আমরাই অপরাধী।”
পুলিশি-সন্ত্রাস নিয়ে নাকাশিপাড়ার বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খাঁ বলেন, “পুলিশের গাড়িতে হাঙ্গামা ঠিক নয়। তা বলে পুলিশ গ্রামের সব যুবককে তাড়িয়ে বেড়াবে সেটাও ঠিক নয়। পুলিশের এই ভূমিকা লজ্জাজনক। প্রয়োজনে গোটা ঘটনা জেলা পুলিশের বড় কর্তাদের জানাব।”
জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র যা শুনে বলেন, “অভিযুক্তকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। সে জন্যই গ্রামে পুলিশি অভিযান হয়েছে। তা বলে গ্রামের বাসিন্দাদের অত্যাচারের কোনও খবর জানা তো নেই।” তারপর চেনা স্বরে জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখবেন তিনি।
ভয় কাটেনি দোগাছিতে।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, খোরজুনা বা গেদের উত্তরপাড়ার পথে হাঁটার পথ গোড়াতেই কেটে রাখতে চাইছে পুলিশ। তেমনই ‘নির্দেশ’ আছে বলে জানা গিয়েছে। আর তাই গ্রামে পাল্টা কোনও আন্দোলন দানা বাঁধতে যাতে না পারে তাই ‘পুলিশি শাসন’ শুরু হয়েছে দোগাছিতে। আপনারা কি ভয় পাচ্ছেন? গ্রামেরই মহিলা টিনা ঘোষ, চম্পা ঘোষেরা বলছেন, “অসহায় এক মহিলাকে ধর্ষণ করা হল। সেই রাগ থেকে গ্রামের ছেলেপুলেরা যদি একটু উত্তেজিত হয়েই থাকে তা বলে পুলিশ গ্রামে অত্যাচার শুরু করবে!” গ্রামবাসীরা মনে করছেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই পুলিশের এমন তাণ্ডব। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রবিবার সারা রাত পুলিশ গ্রামে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশ-নিগ্রহে জড়িতদের খোঁজে। গ্রামেরই সুরজিত ঘোষ, শ্যামল ঘোষ জানান, দিনে দুপুরে এক মহিলার উপর নির্মম অত্যাচার করা হল। গ্রামের মেয়েরা আতঙ্কিত। পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে ভয় করছে। সন্ত্রস্ত মেয়েদের পাশে থেকে ভরসা যোগাবেন সে উপায় নেই। পুলিশের তাড়া খেয়ে তাঁরা এখন গ্রামছাড়া।

ছবি: গৌতম প্রামাণিক ও সুদীপ ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.