টানা বর্ষণে ফুঁসছে বহু নদী, উত্তর ও দক্ষিণে বিপদবার্তা
ঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বন্যার আশঙ্কা বয়ে আনল ঘনঘোর বর্ষা।
শনিবার বিকেল থেকে রাজ্য জুড়ে নামা প্রবল বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীর জল বিপজ্জনক ভাবে বাড়তে শুরু করেছে। আজ, সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গে ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ফলে প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বিভিন্ন জেলায় জারি হয়েছে হুঁশিয়ারি। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “এখনও কোনও নদীর জল বিপদসীমা ছাড়ায়নি। কিন্তু আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসমতো আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণ হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। জেলা প্রশাসনগুলোকে তাই তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।”
জলস্ফীতির ছবিটা কেমন?
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, দক্ষিণবঙ্গে তারেকশ্বর ও শিলাবতীর জল হু-হু করে বাড়ছে। নদীগুলোয় ইতিমধ্যে লাল বিপদসঙ্কেত (রেড অ্যালার্ট) জারি করেছে সেচ দফতর। হুগলির গোঘাট, আরামবাগ এবং খানাকুল ১ নম্বর ও ২ নম্বর ব্লককে সতর্ক করা হয়েছে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও খাতরাতেও তাই। প্রসঙ্গত, ‘রুক্ষভূমি’ বাঁকুড়ায় শনিবার বিকেল থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২২৫ মিলিমিটার! ইদানীংকালের মধ্যে জেলায় একটানা এত বৃষ্টি হয়নি।
অন্য দিকে উত্তরবঙ্গে তিস্তার একাংশ ও জলঢাকায় শনিবার রেড অ্যলার্ট জারি হলেও বৃষ্টির তেজ কমে আসায় এ দিন হলুদ সঙ্কেত বহাল হয়েছে। যদিও সেচ-সূত্রের আশঙ্কা, সিকিম-ভুটানের পাহাড় থেকে যে ভাবে তোড়ে জল নামছে, তাতে দুই নদীর জল ফের বাড়তে পারে। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, কোচবিহার ও মেখলিগঞ্জের নিচুু এলাকার লোকজনকে সাবধান করা হয়েছে।
বস্তুত পাহাড়ে ভারী বর্ষণের চেহারা যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, শনিবার তার নমুনা দেখা গিয়েছে। ভুটানের পাহাড়ে অতিবৃষ্টির জেরে শনিবার বিকেলে মূর্তি নদীতে হড়পা বান আসে। তাতে আটকে যায় দু’টো ট্রাক, তারা নদীখাত থেকে বালি- পাথর তুলতে গিয়েছিল। এ দিন সকালে ক্রেন দিয়ে ট্রাক দু’টিকে তোলা হয়েছে। ঘটনাটির প্রেক্ষিতে ডুয়ার্সের সমস্ত নদী থেকে বালি-পাথর তোলায় সর্তকতা জারি করেছে প্রশাসন। জলস্তর না-কমায় নদী ও আশপাশের গ্রামবাসীরা আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। মালবাজারের মহকুমাশাসক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “মূর্তি নদী ও লাগোয়া বিধাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতে নেওড়া নদীর গতি-প্রকৃতিতে নজর রাখা হয়েছে।”
দক্ষিণবঙ্গের দুই মেদিনীপুরে শিলাবতী, কেঠে, কংসাবতী, কেলেঘাই, চণ্ডীয়া, রূপনারায়ণে ক্রমশ জল বাড়ছে। কোথাও অবশ্য তা এখনও বিপদসীমা ছাড়ালেও বানভাসির আশঙ্কা থাকছেই। বন্যাপ্রবণ ঘাটালের বিডিও দেবব্রত রায়ের আশ্বাস, “আমরা প্রস্তুত। নৌকোর ব্যবস্থা হয়েছে।” টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের জলে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী নিচু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু নদী-বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত। খেজুরি দু’নম্বরের নানকার, গোবিন্দপুর, ওয়াশিলচক, পাচুড়িয়ায় সমুদ্রের জল ঢুকে প্রায় চল্লিশটি মাটির বাড়ি ধসিয়ে দিয়েছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া হাজারখানেক ট্রলারের অন্তত অর্ধেক দিঘা মোহনায় ফিরে এসেছে।
দক্ষিণবঙ্গে সাম্প্রতিক বর্ষণের প্রভাব চোখে পড়ার মতো যে জেলায়, সেটি হল বাঁকুড়া। শনিবার রাতে জেলা জুড়ে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলেছে রবিবার বেলা পর্যন্ত। নাব্যতা কমে যাওয়ায় শালি, গন্ধেশ্বরী, বিড়াই প্রভৃতি নদীর জল উপচে বসতি এলাকা ভাসিয়েছে। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শহরের বড় অংশ জলের তলায়। অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এমনকী, দু’শহরে দু’টো ত্রাণ শিবিরও খুলতে হয়েছে। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা এ দিন লোকপুরে পরিদর্শনে গিয়ে দুর্গতদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। নদী উপচানো জলে বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহে মেদিনীপুর-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে এ দিন দিনভর যান চলাচল হয়নি। বিষ্ণুপুর মহকুমায় হাজার দুয়েক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষ্ণুপুরের উপ পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আটাত্তরের পরে এত বৃষ্টি হয়নি। প্রথমে কিছু সমস্যা হলেও পরে জল নামতে থাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।” সোনামুখীর একাংশও বানভাসি। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “বৃষ্টির জেরে জনজীবন কিছুটা বিপর্যস্ত হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দুর্গতদের সাহায্য পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।”পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জলাধারেও হু হু করে জল ঢুকছে। সেখানে জমা জলের উচ্চতা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সেচমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন জলাধারের কর্তৃপক্ষ ও সেচ-ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে, তারাই প্রতিটি ব্যারেজে নজরদারি চালাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অনুমতি ছাড়া ডিভিসি-র জল ছাড়া যাবে না বলেও নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
কিন্তু আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, দক্ষিণবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে এই বৃষ্টি মঙ্গলবার পর্যন্ত চলতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডিভিসি’র কতক্ষণ জল না-ছেড়ে উপায় থাকবে, সে ব্যাপারে সেচ-কর্তারা সন্দিহান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.