সাদা ভূত উধাও
লোকটা এসে বসল জানলার বাইরে। জানলার এ পাশের সিটগুলো ফাঁকা। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। তপু দেখল লোকটাও জানলার বাইরে বসে দিব্যি এগিয়ে চলেছে তাদের সঙ্গে! কিন্তু জানলার বাইরে তো বসার সিট থাকে না! লোকটা তবে বসে রয়েছে কী ভাবে!
এ দৃশ্য দেখার পর তপুর খই-এর খোলা ফোটা মুখটাতে হঠাৎই যেন তালা পড়ে গেল। সে এটাও দেখল যে, লোকটার শরীরটা সম্পূর্ণ সাদা পোশাকে মোড়া! সাদা সোয়েটার, সাদা প্যান্ট এমনকী মাথার টুপিটা পর্যন্ত সাদা! আর লোকটার শরীরটা কেমন যেন পাতলা প্লাস্টিকের মতন জ্যালজেলে। পিছন দিকের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ইলেকট্রিক পোস্ট— সবই লোকটার শরীর ভেদ করে দেখা যাচ্ছে! তার মানে, সে গল্পের বইতে যা পড়েছে সব ঠিক! রাতের ট্রেনে... সাদা কাপড়ে মোড়া...!
লোকটা আবার নড়াচড়া করছে, মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে! এই তো তার দিকেই তাকাল না এ বার! সর্বনাশ!
শীতের রাত। ট্রেনে করে তপুরা ফিরছে মামাবাড়ি থেকে। প্রায় ফাঁকা কামরা। সব মিলিয়ে দশ কি বারো জন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছে কামরা জুড়ে। কিছুক্ষণ আগেও তপু টকটক করে কথা বলছিল। ওকে এ রকম চুপচাপ দেখে তপুর বাবা তপুর মাকে বললেন, ‘ওর বোধ হয় ঘুম পেয়েছে।’
—‘হ্যাঁ, সারাদিন যা হুড়োহুড়ি করেছে।’ বললেন তপুর মা। কিন্তু তপু এখন তার ছোট কাকা মানে ছোক্কার কোলে বসে আছে, কাজেই ঘুম আসার কথা নয়।
সে ছোক্কার কোলে বসেই মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে সেই জানলাটার দিকে। ভূতটাও তার দিকে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে! ভয়ে সে ছোক্কার জিন্স-এর প্যান্ট খামচে ধরল। তপুর বাবা-মা যদিও বা ভেবেছেন যে তপুর ঘুম পাচ্ছে, তার ছোক্কা কিন্তু তা ভাবেনি। তপুর সঙ্গে ছোক্কার খুব ভাব। ছোক্কাই বোঝে ভাল তার মনের কথা। ছোক্কা ঠিক ধরে ফেলেছে যে তপুর চুপচাপ হয়ে যাওয়ার পিছনে নিশ্চয় অন্য কোনও কারণ রয়েছে। ছোক্কা মুখ নিচু করে বলল, ‘কী হয়েছে রে?’
— ভূত! ছোক্কার কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বলল তপু।
— কোথায়?
তপু আর উত্তর দিতে পারল না। সে জানলার দিকে তাকিয়েই রইল। ভূতটা এ বার তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে! ছোক্কা তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে সেখানে ভয় পাওয়ার মতন কিছুই নেই। তাই তপুকে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘কোথায়?’ তপু বলল, ‘ওই তো, জানলার বাইরে।’ এ বার ছোক্কা মাথা নিচু করে ওর সমান হয়ে দেখল সত্যিই জানলার ও পাশে একটা আবছায়া মূর্তি বসে ছুটে চলেছে ট্রেনের সঙ্গে। দেখে ছোক্কা বলল, ‘তুই একটু বস, আমি ভূতটা ভাগিয়ে দিয়ে আসছি।’
ভয়ে তপু কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না ছোক্কাকে। ছোক্কা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে তার মা ’র কাছে বসিয়ে রেখে গেল জানলাটার কাছে।
শীতের রাত বলে জানলার কাচ ফেলা ছিল। সেটা তুলে দিয়েই ছোক্কা ফিরে এসে তপুকে কোলে বসিয়ে বলল, ‘দেখ তো আর আছে কি না ভূতটা?’ তপু দেখল ভূতটা উধাও হয়ে গিয়েছে। বাইরের ঘর, বাড়ি, ইলেকট্রিক পোস্ট সরে সরে যাচ্ছে
এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তা দেখে তপুর চনমনে ভাবটা আবার ফিরে এল। সে হেসে বলল, ‘না। ভূতটাকে তুমি ভাগালে কী করে, ছোক্কা?’
— ওই দূরের সিটটাতে তোর সামনাসামনি যে আঙ্কল বসে আছেন, সে রকমই ছিল না ভূতটা? এ বার তপু তাকিয়ে দেখে হ্যাঁ তো, সেই সাদা সোয়েটার, সেই সাদা প্যান্ট আর সাদা টুপি! সে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘হ্যা।ঁ’ ছোক্কা হেসে বলল, ‘জানলাটার কাচ ফেলা ছিল। পিছন দিকটা অন্ধকার হওয়ায় কাচে আঙ্কলটার ছায়া তৈরি হয়েছিল। সেটা দেখেই তুই ভূত ভেবে সিঁটিয়ে গিয়েছিল একেবারে। কাচটা তুলতেই ভূত উধাও।’
তপুর বাবা-মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হেসে উঠলেন। তবু ছোক্কার কোলে আরও সিঁটিয়ে গেল। এ বার কিন্তু ভয়ে নয়, লজ্জায়।

ছবি: সুমন চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.