দক্ষিণ কলকাতা
জিরাট সেতু
সংস্কারের উদ্যোগ
শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর চাপে বেলভেডিয়ার রোডে জিরাট সেতুর তড়িঘড়ি সংস্কারে উদ্যোগী হল রাজ্য প্রশাসন।
তাঁর যাতায়াতের পথে জিরাট সেতুর (বর্তমান নাম মা সারদামণি সেতু) বেহাল অবস্থা দেখে একাধিক বার ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সেতুর মেরামতিতে এত বিলম্ব হচ্ছে কেন সে ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে জানতে চান। তাঁর ক্ষোভের কথা জেনে সেতুটির মেরামতির জন্য তৎপরতা তুঙ্গে ওঠে। কলকাতা পুরসভার আধিকারিকেরা সেতুটি পরিদর্শনে যান। তাঁদের সঙ্গেই যান সেচ ও পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এই সেতুটির অবস্থা ভাল নয়। সেচ দফতর ছাড়াও রাজ্য পূর্ত দফতর এই সেতুর মেরামতি করবে। মেরামতির জন্য দরপত্রও ডাকা হয়েছে।”
এমনিতেই উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে শহর ও শহরতলির বাকি উড়ালপুলগুলি কী অবস্থায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ঢাকুরিয়া বা জিরাট সেতু ছাড়াও উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতার আরও কয়েকটি সেতু ঘুরে দেখা হবে। কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে মেরামতির নির্দেশ দেওয়া হবে।
শহরের দক্ষিণের সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর পাশেই রয়েছে শহরের অন্যতম একটি পাঁচতারা হোটেল এবং চিড়িয়াখানা। ফলে, এই অঞ্চলে নিত্যযাত্রীর পাশাপাশি পর্যটকদের সংখ্যাও বেশি থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই এই রাস্তায় প্রচুর গাড়ি এবং বাসের যাতায়াত। তাই এই সেতু কোনও কারণে ভেঙে পড়লে বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েই যায়।
সম্প্রতি পুরসভা, পূর্ত দফতর এবং সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা এই সেতুটি ঘুরে দেখেন। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, সেতুটিতে কিছু কিছু সমস্যাও চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিকের (সড়ক বিভাগ) অভিযোগ, “এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোনও নির্দিষ্ট দফতরের অধীনে না থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা কোথায়? জিরাট সেতুর দু’টি অংশ। ইংরেজ আমলে তৈরি লোহার সেতুটির দায়িত্ব সেচ দফতরের। এর পাশেই ১৯৮৯-এ কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) উদ্যোগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু নতুন সেতুর উদ্বোধন করেন।
রাজ্য পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ২০০৭-এ কেএমডিএ পূর্ত দফতরকে এই সেতু হস্তান্তর করে। পুরসভার অভিযোগ, তার পর থেকেই সেতুর এই অংশের কোনও মেরামতি হয়নি। রাজীববাবু বলেন, “সেতুর যে অংশ সেচ দফতরের অধীন তার অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাল। মাঝে এক বার সারানোও হয়েছিল। তবে কিছু কাজ এখনও বাকি। পূর্ত দফতরের অধীনে সেতুটির অপেক্ষাকৃত নতুন অংশের অবস্থা বেশি খারাপ। ‘এক্সপ্যানশন জয়েন্টে’ কিছু সমস্যা রয়েছে।”
এই সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্য পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (সিটি ডিভিশন) কনকেন্দু সিংহ বলেন, “এই সেতু পূর্ত দফতরকে হস্তান্তর করার পর থেকে কোনও মেরামতি হয়নি। জিরাট সেতুর যে অংশ আমাদের অধীন সেখানে সমস্যা রয়েছে। আমরা সেতুটি সারানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লোহার সেতুটির রেলিং ঠিক করা হলেও সেতু সংলগ্ন পথচারীদের যাতায়াতের অংশটির আশু মেরামতির প্রয়োজন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.