বিরোধ চরমে
খাজনা দেবে কে
মির খাজনা বাকি তিন কোটি টাকারও বেশি। আর এই খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করেই নজিরবিহীন ভাবে বিরোধ চরমে উঠল হাওড়া ভূমি দফতর ও হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার (এইচআইটি) মধ্যে। বকেয়া খাজনা না দিলে এইচআইটি-র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে ভূমি দফতর।
এইচআইটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, ১৯৬৪ সালে কদমতলা-ইছাপুরের ‘ইছাপুর’ মৌজায় মোট ৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে তারা। সেখানে ঝিল তৈরির পাশাপাশি বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে গরিবদের জন্য ঘর, বিদ্যাসাগর সেতু তৈরির ফলে যাঁদের বাড়ি ভাঙা পড়েছিল তাঁদের পুনর্বাসনের আবাস, ১০০ ফুট রাস্তা তৈরি সমেত জনস্বার্থে বিভিন্ন কাজ করে এইচআইটি। কিন্তু, এ বছরের গোড়ার দিকে জেলা ভূমি দফতর থেকে এইচআইটি-র কাছে বকেয়া খাজনা বাবদ ৩ কোটি টাকা চেয়ে পাঠানো হয়। না পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। এখানেই সূত্রপাত বিরোধের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এইচআইটি-র এক কর্তার বক্তব্য, যে জমি জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয় সেই জমির খাজনা এক সরকারি সংস্থা আর এক সরকারি সংস্থাকে দিয়েছে এ রকম কোনও নজির নেই। এইচআইটি-র আইনের ৩৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, জনহিতে যে কোনও কাজ তারা করতে পারে। কেউ কোনও অবস্থাতেই তাতে বাধা দিতে পারে না। তাঁর অভিযোগ, টাকা না মিটিয়ে সেখানে কোনও ভাবেই কাজ করতে দিচ্ছে না ভুমি দফতর। তাঁর দাবি, সেই জমির জন্য খাজনাও তাদের থেকে কোনও সরকারি দফতর আদায় করতে পারে না। এ ধরনের টাকার দাবি এর আগে করা হয়নি বলেই তাঁর অভিমত। যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “খাজনা তো দিতেই হবে। তবে যদি অর্থাভাব থাকে এইচআইটি আমাকে জানালে অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।”
সমস্যা রয়েছে দু’ধরনের। প্রথমত, ইছাপুর মৌজার ১২৯৪ ও ৯৭ অংশের ০.৫৩ একর জমি এইচআইটি কেনে ২০১০ সালে। কিন্তু এ বছর নথিতে দেখা যায়, সেই জমিটি এইচআইটি-র নামেই নেই। রয়েছে যে ব্যক্তির থেকে কেনা হয়েছিল তাঁর নামেই। অথচ এইচআইটি-র কাছে জেলা ভূমি দফতরের দেওয়া কাগজে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জমিটি এইচআইটি-র। ভূমি দফতরের দাবি, ওই জায়গায় যে কোনও ধরনের কাজ করতে হলে দেড় লক্ষ টাকা খাজনা দিতে হবে এইচআইটি-কে। তবে সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে এইচআইটি জানায়। তা সত্ত্বেও বেঁকে বসে ভূমি দফতর। গত ২২ জানুয়ারি এইচআইটি-কে প্রথম চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ইছাপুরে ৩৭.৫৩ একর, ধাড়শায় ৩৭ একর ও সাঁতরাগাছিতে ৫১.৬৩ একর জমির জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা খাজনা দিতে হবে। সেই টাকা না মেটানো পর্যন্ত ইছাপুর মৌজার ১২৯৪ ও ৯৭ প্লটে কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না। মার্চ ও এপ্রিলে এই খাজনা দেওয়ার জন্য তাগাদাও দেয় ভুমি দফতর।
এইচআইটি সূত্রে খবর, গত ২৫ মার্চ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি)-কে তারা জানায় যে উল্লিখিত ওই অংশের মধ্যে অনেক অংশই এইচআইটি-র নামে নেই। তা হলে সেই অংশের খাজনা তারা কেন দেবে?
দ্বিতীয় সমস্যা, যে যে অংশে আবাসন প্রকল্প করা হয়েছে সেই সব স্থানেরও খাজনা দেওয়ার নিয়ম নেই বলে দাবি এইচআইটি-র। কারণ হিসেবে তাদের যুক্তি, “একই সরকারের দুই দফতরের মধ্যে কখনও এ ভাবে খাজনা দেওয়া-নেওয়ার প্রক্রিয়া চলে না।”
যদিও এই সব অভিযোগ খারিজ করে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) অশোককুমার দাসের সাফ কথা: “সরকারি জমির খাজনা দিতেই হবে।” তিনি বলেন, “জনস্বার্থে তো সবাই কাজ করে। তাই বলে সরকারি জমি ব্যবহার করা হবে অথচ খাজনা দেওয়া হবে না? এটা কখনওই সম্ভব নয়। আমরা কেএমডিএ, হাওড়া পুরসভার থেকেও খাজনা নিই। কারণ, এগুলি সরাসরি কোনও রাজ্য সরকারি দফতর নয়। কোনও আইনেই এই ধরনের সংস্থাকে কর ছাড় দেওয়ার কথারও উল্লেখ নেই। সেই কারণেই তারা কর দিতে বাধ্য। অন্যথায় এইচআইটি-র বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তবে কোন জমি এইচআইটি-র হাতে নেই অথচ খাজনা চাওয়া হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে।”
এইচআইটি-র সভাপতি তথা সাঁকরাইল কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার বলেন, “আমরা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছেই পুরো ব্যাপারটা জানাব। কারণ এত অর্থ আমাদের নেই।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.