ব্যারাকপুরের শিবু নাগালের বাইরেই
ধৃতদের হাতছাড়া করে হাত কামড়াচ্ছে পুলিশ
ব্যারাকপুরে খুন-তাণ্ডব-সাংবাদিক নিগ্রহের চার দিন হয়ে গেল। মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা তো দূর, এখন তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়েও ফ্যাসাদে পড়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতের হত্যাকাণ্ড ও রাত পোহাতেই দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের পরে শুক্রবার বিকেলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অভিযুক্ত প্রত্যেককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, কাউকে রেয়াত করা যাবে না।
শিবু যাদব
এ ক্ষেত্রে কোনও তরফের কোনও উমেদারি যাতে গ্রাহ্য না-হয়, সে ব্যাপারেও তিনি পুলিশ- কর্তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। তার ৭২ ঘণ্টা বাদেও শিবু যাদব বা লাল্টু ঘোষের মতো কোনও ‘চাঁই’ ধরা না-পড়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি এ যাবৎ যে ক’জন ধরা পড়েছে, এক জন বাদে তাদের সকলে জেল হেফাজতে থাকায় তদন্তের কাজেও বিস্তর অসুবিধে হচ্ছে পুলিশ-সূত্রের ইঙ্গিত।
কিন্তু ঘটনা হল, পুলিশই ওদের নিজস্ব হেফাজতে রাখার আবেদন করেনি। খুনের মামলায় গ্রেফতার তিন জনের শুধু এক জনই পুলিশি হেফাজতে। হাঙ্গামা-নিগ্রহে গ্রেফতার ১৪ জনকেই জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে, কারণ তাদেরও পুলিশ হাজতে রাখতে চায়নি। যার ব্যাখ্যা হিসেবে পুলিশ-কর্তাদের একাংশ বলেছিলেন, ভাঙচুর-নিগ্রহের তদন্তে তেমন কোনও তথ্যের দরকার না-থাকায় ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেয়নি।
সেটা যে মোক্ষম ভুল, তা এখন হাড়ে হাড়ে মালুম হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি। এক অফিসারের বক্তব্য, “জিতু-খুনের জেরেই যে হেতু ভাঙচুর, তাই খুনের কারণ ও পারিপার্শ্বিক জানতে প্রত্যেককে খুঁটিয়ে জেরা করা জরুরি ছিল। তা না-পেরে তদন্ত অনেকটা অন্ধগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।” এ দিকে খুনের ঘটনায় ধৃত তিন যুবকের সঙ্গে থাকা চতুর্থ যুবকটিকে থানা থেকে ভোর রাতে কেন ছেড়ে দেওয়া হল, সেটা যেমন তদন্তকারীরা বুঝে উঠতে পারছেন না, তেমন এতে বাসিন্দাদের অনেকেও ‘অন্য গন্ধ’ পাচ্ছেন। “ছেলেটির বাড়ি পাতুলিয়ায়, কাজ করে বারাণসীতে। ওকে হাতে পেলে বাড়তি কিছু তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।” আক্ষেপ কমিশনারেটের একাংশের। যাকে খুন করা হয়েছে, শেষ মুহূর্তে সেই জিতুলাল তাঁতির সঙ্গী ছিলেন জয়ন্ত মণ্ডল নামে এক যুবক। হাঙ্গামা-নিগ্রহের মামলায় তিনিও জেলে। তাঁকে জেরা করাও বিশেষ প্রয়োজন বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
তা হলে উপায়?
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা জানাচ্ছেন, জেলে গিয়ে যাতে ধৃতদের জেরা করা যায়, সে জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই।
বৃহস্পতিবার রাতে ব্যারাকপুরের মণিরামপুরে মুরগিমহলে জিতুকে বোমা মেরে, গুলি করে খুন করা হয়। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, খুনের জেরে রাতে এক প্রস্থ ভাঙচুর চালায় শিবু যাদবের দলবল, এবং রাত পোহাতেই মণিরামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দু’ঘণ্টা ধরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় শ’তিনেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী। সিংহভাগ হিন্দিভাষীর ওই দুষ্কৃতীদল বাজার-দোকান-বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে পেটায়। টিভি চ্যানেলের দুই চিত্র-সাংবাদিক আক্রান্ত হন, এমনকী তাঁদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও হয়েছিল বলে অভিযোগ।
শুক্রবারের সেই তাণ্ডব ও হামলার ঘটনাতেও আঙুল উঠেছে মূলত শিবু গোষ্ঠীর দিকে। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রের দাবি: এলাকার ‘তৃণমূল নেতা’ হিসেবে পরিচিত শিবু যাদব ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ। লাল্টু হলেন আর এক তৃণমূল নেতা রবীন ভট্টাচার্যের কাছের লোক। পুরো ঘটনা-পরম্পরায় সিন্ডিকেট-ব্যবসা ঘিরে শিবু-রবীন গোষ্ঠীর রেষারেষির ছায়াও দেখছেন বাসিন্দাদের বড় অংশ। যদিও ঘটনার পরে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে শিবুর সঙ্গে দলীয় সংশ্রবের কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি: গোড়া থেকে পুলিশ সক্রিয় থাকলে জল এত দূর গড়াত না। হাঙ্গামার আঁচ পেয়েও নিষ্ক্রিয় থাকার এই অভিযোগের সঙ্গে এখন জুড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও রাঘব-বোয়ালদের জালে ফেলতে না-পারার দায়। যে ‘ব্যর্থতা’ ঘিরে রাজ্য পুলিশের অন্দরেই জলঘোলা শুরু হয়েছে। ‘রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া’র প্রসঙ্গও উঠছে কোনও কোনও মহলে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ-সহ শীর্ষ কর্তারা সোমবার এ বিষয়ে মুখ খুলতে না-চাইলেও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দাবি, “আমরা পুলিশকে বলেছি, শীঘ্রই শিবুকে গ্রেফতার করতে হবে।” ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীরও মন্তব্য, “শিবুকে ধরার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।”
পুলিশ-সূত্রের খবর: ‘উপরমহলের’ নতুন চাপের প্রেক্ষাপটে এ দিন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ক্রাইম কনফারেন্সে শুধু শিবু-লাল্টু প্রসঙ্গই আলোচিত হয়। স্থির হয়েছে, আজ, মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে শিবুকে যে ভাবে হোক ধরতে হবে। পুলিশেরই এক সূত্রের অভিযোগ, শনিবার রাতে শিবু ভাটপাড়ায় জুটমিলের অতিথিশালায় লুকিয়ে আছে খবর পেয়েও কর্তারা গা করেননি। তদন্তকারী-সূত্রের ইঙ্গিত, শিবু এখন টিটাগড়ের কোনও জুটমিলের ভিতরে স্থানীয় এক দাপুটে যুব নেতার আশ্রয়ে, যাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ পেটানো-সহ একাধিক মামলা আছে। কমিশনারেট-সূত্রের খবর: সেখানে অভিযান চালানো নিয়ে কর্তারা কিছুটা দ্বিধায় রয়েছেন। কমিশনারেটের এক গোয়েন্দা-কর্তা অবশ্য বলেন, “নজরদারি চলছে। নিশ্চিত খবর মিললেই অভিযান হবে।”
পুলিশ-কর্তাদের দাবি, লাল্টুকে ধরার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। রবিবার রাতে পুলিশের দল ব্যারাকপুরের নয়াবস্তিতে লাল্টুর বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছে। যদিও লাল্টুর হদিস এ দিন রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.