শিবু-লাল্টু অধরাই, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কী হল
তাঁকে ধরার হুকুম দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। অথচ ব্যারাকপুরে ভাঙচুর ও সাংবাদিক নিগ্রহের পরে দু’দিন কেটে গেলেও অন্যতম অভিযুক্ত শিবু যাদবের নাগাল পেল না পুলিশ! জিতু তাঁতি-হত্যায় মূল অভিযুক্ত দেবব্রত ঘোষ ওরফে লাল্টুও অধরা। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষতম স্তরের নির্দেশ সত্ত্বেও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এ হেন ‘গা-ছাড়া’ আচরণে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশেরই অন্দরে।
শিবু যাদব
শুক্রবারের তাণ্ডব ও হামলার ঘটনাতে আঙুল উঠেছে মূলত শিবু গোষ্ঠীর দিকে। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রের দাবি: এলাকার ‘তৃণমূল নেতা’ হিসেবে পরিচিত শিবু যাদব ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ। অন্য দিকে, ওখানকার দীর্ঘ দিনের তৃণমূল নেতা রবীন ভট্টাচার্যের ‘কাছের লোক’ লাল্টু। বৃহস্পতি-শুক্রবারের পুরো ঘটনা-পরম্পরায় সিন্ডিকেট-ব্যবসা ঘিরে শিবু-রবীন গোষ্ঠীর রেষারেষির ছায়াও দেখছেন বাসিন্দাদের বড় অংশ। যদিও ঘটনার পরে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে শিবুর সঙ্গে দলীয় সংস্রবের কথা অস্বীকার করা হয়।
শুধু তা-ই নয়, শুক্রবার বিকেলে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে নির্দেশ দেন, শিবু-সহ সমস্ত অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, কাউকে রেয়াত করা যাবে না। আর এ ক্ষেত্রে কোনও তরফের কোনও উমেদারি যাতে গ্রাহ্য না-হয়, সে ব্যাপারেও তিনি পুলিশ-কর্তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন।
ব্যারাকপুরের খুন-তাণ্ডব-সাংবাদিক নিগ্রহে এ পর্যন্ত মোট ১৭ জন ধরা পড়েছে। তবে তদন্তকারীদের একাংশের মতে, রাঘব-বোয়ালেরা নাগালের বাইরেই রয়ে গিয়েছে। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশ সত্ত্বেও শিবু যাদব বা লাল্টু ঘোষ কেউই ধরা না-পড়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পুলিশের একাংশের ‘যোগ’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশি সূত্রের দাবি: শনিবার রাতে খবর মিলেছিল যে, শিবু ভাটপাড়ায় এক জুটমিলের অতিথিশালায় লুকিয়ে আছেন। তবু তাঁকে ধরতে অভিযান হয়নি। যার প্রেক্ষিতে কমিশনারেটের একাংশে এমন সংশয় দানা বেঁধেছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কি পুলিশ ও দলের নিচুতলায় ঠিক মতো ছড়িয়ে পড়েনি?
পাশাপাশি ধৃতদের হেফাজত ঘিরেও খানিকটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ-সূত্রের খবর: জিতু-হত্যায় টিটাগড়ের পাতুলিয়ার বাসিন্দা যে তিনটি ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হলেও ভাঙচুর ও সাংবাদিক নিগ্রহে ধৃত ১৪ জনের কাউকে পুলিশ হেফাজতে নেয়নি। কেন?
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা: খুনের তদন্তে ধৃতদের জেরা করে তথ্য মিলতে পারে। কিন্তু ভাঙচুর-নিগ্রহের তদন্তে তেমন কোনও তথ্যের আর দরকার নেই, তাই ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেয়নি। তদন্তকারীদের একাংশের অবশ্য ধারণা, জিতু-খুনের জেরেই যে হেতু ভাঙচুর, সুতরাং খুনের কারণ ও পারিপার্শ্বিক জানতে হলে ওই ১৪ জনকে জেরা করা জরুরি ছিল। পুলিশ-সূত্রের খবর: জিতু-হত্যায় ধৃত তিন যুবক জেরায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা মণিরামপুরে বন্ধুর বাড়ি এসেছিলেন, ফেরার পথে খুন হতে দেখেন। দেখে পালাতে গিয়েই কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দার চোখে পড়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য: ওই তিন জনের সঙ্গে আরও এক যুবক ছিলেন, যিনি বারাণসীর বাসিন্দা। পুলিশ তাঁকে রাতভর থানায় বসিয়ে রেখে ছেড়ে দেয়। কেন, কমিশনারেটের কেউ কেউ তা বুঝে উঠতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার রাতের হাঙ্গামার পরেও ওই তল্লাটে পুলিশ পিকেট কেন বসানো হল না, স্থানীয় বাসিন্দারা সে প্রশ্ন তুলেছেন। ওঁদের আক্ষেপ, “পুলিশ রাতে তো এলই না, তার উপরে ভোর থেকে ফাঁকা ময়দান ছেড়ে দিল!”
সব মিলিয়ে ব্যারাকপুর-কাণ্ডের সার্বিক প্রেক্ষাপটে পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। ব্যারাকপুর পুলিশের কমিশনার সঞ্জয় সিংহ অবশ্য গাফিলতির তত্ত্ব মানতে নারাজ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কী হল?
রবিবার কমিশনার মুখ খুলতে চাননি। তাঁর একটাই মন্তব্য “তদন্ত তদন্তের মতো চলছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.