উচ্চ মাধ্যমিকে সেরা জঙ্গলমহলের রামানুজ
ঙ্গিত মিলেছিল গত বছরই। যখন এই স্কুল দিয়েছিল নবমকে। আর এ বার একেবারে প্রথম!
জঙ্গলমহলের জেলা বাঁকুড়ার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত সিমলাপাল ব্লকের মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রামানুজ সিংহ মহাপাত্র ৪৭৭ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকার শীর্ষ স্থানে রয়েছে। যে ঘটনাকে জঙ্গলমহলের দিন পরিবর্তনের সূচক হিসাবে দেখছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, রামানুজের সাফল্যকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখা ঠিক নয়। বরং জঙ্গলমহল যে মাওবাদী নাশকতা, হানাহানি, বন্ধের ভয় কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে, এই কৃতিত্ব যেন তারই দ্যোতক। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে এই স্কুল থেকেই নবম হয়েছিলেন সুমন সিংহ মহাপাত্র। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় থাকা খাতড়া হাইস্কুলের ছাত্র দীপাঞ্জন কুণ্ডু হয়েছিলেন ষষ্ঠ।
রামানুজ সিংহ মহাপাত্র দ্যুতিদীপ্ত রানো
মাওবাদী-উপদ্রুত হিসাবে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা, রাইপুর বা রানিবাঁধের যে পরিচিতি রয়েছে, তা সিমলাপালের কখনওই ছিল না। তবু মাওবাদী পোস্টার পড়া, মাওবাদীদের ডাকা বন্ধে বারবার জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়া, আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের ভারী বুটের আওয়াজএ সবই বড় চেনা ছবি সিমলাপালের মানুষজনের। রামানুজও তার ব্যতিক্রম নয়। জঙ্গলমহলে থাকার সুবাদে মাওবাদী কর্মকাণ্ডের খবরাখবরও অজানা নয় এই মেধাবী ছাত্রের। খবরের কাগজে নিয়মিত এ সব পড়েছে সে।
আর এখানেই তার কৃতিত্ব। বলছেন মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামরঞ্জন সিংহ। তাঁর কথায়, “দু’বছর আগে যখন এই স্কুলে যোগ দিই, তখনও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা ভয় চোখে পড়ত সব সময়। পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের হাজিরাও থাকত কম। কিন্তু, এখন ছবিটা বদলেছে।” স্কুলের ভূগোল শিক্ষক গোবিন্দ মণ্ডল বলছেন, “দিন যে বদলাচ্ছে, তা প্রমাণ করল রামানুজ।” বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯০, অঙ্কে ১০০, পদার্থবিদ্যায় ৯১, রসায়নবিদ্যায় ১০০ এবং জীববিদ্যায় ৯৭ নম্বর পেয়েছে রামানুজ। সে বলে, “শিক্ষকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
রামানুজ প্রথম থেকেই জঙ্গলমহলে মানুষ। তার আসল বাড়ি সিমলাপাল ব্লকের পারশোলা গ্রামে হলেও বাবা-মায়ের কর্মসূত্রে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-২ ব্লকে থাকত সে। নবম শ্রেণি থেকে সে সিমলাপালে পড়ছে। হুমগড় চাঁদাবেলা হাইস্কুলের শিক্ষকেরা কিন্তু সহজে ছাড়তে চাননি তাকে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি সন্নিগ্রহি বলেন, “রামানুজ বরাবরই স্কুলের সেরা ছাত্র ছিল। তাই ওর চলে যাওয়ার কথায় তিন বার না করে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য পরিবারের কথা ভেবেই ওকে ছাড়তে হয়। প্রথম হওয়ার খবর শুনে ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।”
আর রামানুজ বলছে, “প্রথম প্রথম যখন সিমলাপালে এসেছিলাম, তখন দেখতাম মানুষ ভয়ে ভয়ে আছেন। সন্ধ্যা নামলেই ফাঁকা বাজার-রাস্তাঘাট ফাঁকা। জওয়ানরা টহল দিত।” বাবা অরবিন্দ সিংহ মহাপাত্র ও মা রেণুকাদেবী, দু’জনেই স্থানীয় দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অরবিন্দবাবুও বললেন, “যখন এসেছিলাম, কিছুটা ভয় তো ছিলই। আজ পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক।”
টিভিতে যখন রামানুজ তার ফার্স্ট হওয়ার খবর দেখছে, তখন রাঢ়বঙ্গের আর এক জেলা বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির সমন্বয়পল্লির রানো পরিবার টিভি-ই চালায়নি! চালায়নি, কারণ মাধ্যমিকে ছেলের ফল আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন বাবা-মা। ফলে, এ বার উচ্চ মাধ্যমিক ফল ও মেধা তালিকা প্রকাশের সরাসরি সম্প্রচার টিভিতে দেখেননি তাঁরা। টেনশনে নিজেও টিভি থেকে দূরেই ছিল বীরভূম জেলা স্কুলের ছাত্র দ্যুতিদীপ্ত রানো।
সোমবার সকালে খবরটা প্রথম দিলেন এক পড়শি। তখনই রানো পরিবার জানল, বাড়ির ছেলে ৪৭৪ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হয়েছে। পরিবার খুশি। খুশি গোটা পাড়া। কারণ, এ বার মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হওয়া অনীশা মণ্ডল যে এই পাড়ারই বাসিন্দা! খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই দ্যুতিদীপ্তদের বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকেন পড়শি, আত্মীয়-বন্ধু থেকে সংবাদমাধ্যম। দ্যুতিদীপ্তের বাবা, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক গুরুপ্রসাদ রানো ও মা মন্দিরাদেবী বলেন, “এই রেজাল্টই আশা করেছিলাম।” দ্যুতিদীপ্ত পেয়েছে বাংলায় ৮৫, ইংরেজি ৯২, জীববিদ্যা ৯৯, রসায়নে ৯৯ ও অঙ্কে ৯৯। আদ্যন্ত ফুটবল ভক্ত (নির্দিষ্ট করে বললে মেসির) দ্যুতিদীপ্ত বলে, “ফল ভাল হবে, জানতাম। তবে, পড়ার সঙ্গে ফুটবলটাও খেলেছি চুটিয়ে। শুধু পরীক্ষার দিন সাতেক আগে সেটা বন্ধ রেখেছিলাম।”
আর সেটা যে নিছক কথার কথা নয়, তা দ্যুতিদীপ্তের পড়ার ঘরে গেলেই টের পাওয়া যায়। ডজনেরও বেশি পদক সাজানো। বেশির ভাগই খেলাধুলো সংক্রান্ত। তবে, রয়েছে ম্যাথ্স অলিম্পিয়াড ও আঁকার জন্য প্রাপ্ত পদকও।

(সহ প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত)
—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.