টালমাটাল সময়ে কিছু বলুন, অধিনায়কের মুখে নীরব হাসি
সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই বলে দেওয়া হয়েছিল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাইরে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। তবু আরব সাগরের তীরে তিনটে প্রশ্ন শুনতেই হল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে।
আপনি ভারতের অধিনায়ক। গোটা দেশের ক্রিকেট-সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ ভারতীয় ক্রিকেটের চূড়ান্ত টালমাটাল সময়ে আপনার মুখ থেকে এখনও একটাও কথা শোনা যায়নি। কেন কিছু বলছেন না?
স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অবস্থা এখন ঠিক কী রকম? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার কোনও প্রভাব পড়বে?
ভারতীয় ক্রিকেটে যা চলছে, তার পর আপনি আর আপনার টিমের পক্ষে কতটা কঠিন হবে দেশবাসীকে বিশ্বাস করানো যে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সব কিছুই পরিছন্ন থাকবে?
উত্তরে ভারত অধিনায়ক কখনও নির্বিকার। ভাবলেশহীন চোখমুখ নিয়ে বসে থাকলেন। কখনও ঠোঁটে ঝুলল স্মিত হাসি!
যার পরপরই বিভিন্ন চ্যানেলে জাতীয় ধিক্কারের মুখ হয়ে গেলেন ধোনি। ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রশ্ন তুললেন মুখ না খুলুন, একটা বিবৃতি দিতে কী অসুবিধে ছিল ভারত অধিনায়কের? রাহুল দ্রাবিড় যেখানে বিবৃতি দিতে পারলেন, সেখানে ধোনি পারলেন না! এমনকী বোর্ডের অস্বস্তি চরমে তুলে খোদ বিসিসিআই কোষাধ্যক্ষ অজয় শিরকে বললেন, “স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। ধোনিকেও মুখ খুলতে দেওয়া উচিত ছিল।” এমন কথাও উঠে এল যে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাংবাদিক সম্মেলনে আসলে ঠিক কাকে দেখা গেল? ভারত অধিনায়ককে, নাকি ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ভাইস প্রেসিডেন্টকে? প্রাক্তন ক্রিকেটার অতুল ওয়াসন একটি চ্যানেলে বলছিলেন, “যে ভাবে গোটা ব্যাপারটাকে ধোনি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেল, অবাক হয়ে যাচ্ছি। ও বলতেই পারত, এই পরিস্থিতির মধ্যে কী ভাবে ও টিমকে সামলাচ্ছে। আসলে আগে যে ধোনিকে আমরা চিনতাম, সেই ধোনি আর নেই!”

সাংবাদিক বৈঠকে ধোনি। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
আজই আবার গুরুনাথ কাণ্ডের তদন্তের জন্য কমিশনের তিন সদস্যের নাম ঘোষণা করেছে বোর্ড। তাঁরা হলেন, কর্নাটক ও তামিলনাড়ু হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি টি জয়রাম চৌতা, তামিলনাড়ু হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আর বালসুব্রহ্মণ্যম এবং বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালে (রবি শাস্ত্রী কিন্তু নেই)। এই তদন্ত কমিশন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন কোষাধ্যক্ষ। বলেছেন, “অভিযোগগুলো তো অপরাধমূলক। মনে হয় না সেগুলো খতিয়ে দেখার ক্ষমতা বোর্ডের তদন্ত কমিটির আছে।”
কোষাধ্যক্ষের অনাস্থা যদি বোর্ড প্রেসিডেন্ট নারায়াণস্বামী শ্রীনিবাসনের এ দিনের অস্বস্তির প্রথম কারণ হয়, তা হলে দ্বিতীয়টা অবশ্যই তাঁকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার তোপ। জলঘোলা শুরু ইস্তক এই প্রথম কোনও বোর্ড সদস্য প্রেসিডেন্টের ইস্তফার দাবি তুললেন প্রকাশ্যে। বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য তথা মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জ্যোতিরাদিত্য বলেছেন, “মাথায় রাখা ভাল, ক্রিকেটকে পরিষ্কার করার দায় কিন্তু এখন ভারতীয় বোর্ডের। শ্রীনিবাসনের এখনই সরে যাওয়া উচিত। ক্রিকেটের স্পিরিটের স্বার্থে উনি এই সিদ্ধান্তটা নিন। উনি (গুরুনাথ মইয়াপ্পন) নির্দোষ প্রমাণ হলে তো আবার পদে ফেরা যেতেই পারে!” শ্রীনিবাসন অবশ্য জ্যোতিরাদিত্যর মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে দায় সেরেছেন। তবে তিনি পাশে পেয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফারুক আবদুল্লাকে। “জামাই অপরাধ করলে ওঁকে পদত্যাগ করতে হবে কেন?”— প্রশ্ন তুলেছেন আবদুল্লা।
গুরুনাথের বাড়িতে আজ আরও এক দফা তল্লাশি চালায় পুলিশ। মিলেছে আরও কিছু ভিজিটিং কার্ড, যাতে তাঁর সিএসকে-মালিকানার প্রমাণ আরও জোরদার হয়েছে। এ দিকে, ভারতীয় ক্রিকেটকে আর এক প্রস্ত কালিমালিপ্ত করে আজ জেলযাত্রার আদেশ হয়েছে শান্তাকুমারন শ্রীসন্তের। আগামী ৪ জুন পর্যন্ত তাঁর ও অজিত চান্ডিলার ঠিকানা হবে তিহাড় জেল। আর এক ক্রিকেটার অঙ্কিত চহ্বাণের জামিনের আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। অঙ্কিত জানিয়েছিলেন, ২ জুন তাঁর বিয়ে। তাঁর ও ভাবী স্ত্রীর পরিবারের সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে তাঁকে অন্তত অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু আদালত জানিয়ে দেয়, অপরাধ এতটাই গুরুতর যে ভাবমূর্তির কথা ভেবেও জামিন দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ আজ জানিয়েছে, অতীত ও বর্তমানে জাতীয় দলে খেলা সে রাজ্যের বেশ কিছু ক্রিকেটারকে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে তারা সন্দেহ করছে। দিল্লিতে সরকারি কৌঁসুলি রাজীব মোহন আর এক ধাপ এগিয়ে কোর্টে বলেন, কিছু প্রভাবশালী নামের সঙ্গে ডি-কোম্পানির টেলি-যোগাযোগের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এখনই যদিও নাম বলা যাবে না।

মঙ্গলবার কোর্টের পথে দিল্লি পুলিশ অফিসারের সঙ্গে শ্রীসন্ত। ছবি: এএফপি
তবে তদন্তের গতিপ্রকৃতি যে দিকে, তাতে ক্রমশ যথেষ্ট সন্দেহভাজন চরিত্র হিসেবে উঠে আসছেন পাক আম্পায়ার আসাদ রউফ। মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) হিমাংশু রায় আজ বলেন, “বুকিদের সঙ্গে উনি এতটাই জড়িত যে, আমাদের নজর ওঁর দিকে পড়েছে। ওঁকে ভারতে ফেরাতে আমরা লেটার্স রোগেটারি (আইনি সহায়তা চেয়ে ভিনদেশি আদালতকে আর্জি) চাইব।” পুলিশের দাবি, ভারতে থাকার সময়ে বিন্দু দারা সিংহ এবং বুকি সঞ্জয় ও পবন জয়পুরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল রউফের। গত তিন বছর ধরে ভারত সফরের সময়ে সঞ্জয়ের দেওয়া একটি সিমকার্ড ব্যবহার করতেন রউফ। আইপিএল কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর বিন্দুই তাঁকে বলেন সিমটি নষ্ট করে ফেলতে। ২১ মে, অর্থাৎ যে দিন বিন্দু গ্রেফতার হন, সে দিনই ভারত ছাড়েন রউফ। আগামিকাল অবশ্য লাহৌরে রউফ সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে তাঁর ম্যানেজার জানিয়েছেন।
আজ বিন্দুর পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িছে আদালত। এই সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানান বিন্দুর স্ত্রী দিনা উমারোভা। বলেন, “আপনারা সবাই মিলে আমার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দিলেন। আমি ওঁর মতো ভাল মানুষ জীবনে দেখিনি। ওঁর মতো হৃদয়ও কারও নেই। বিন্দু যা করেছে, তাতে অনায়াসে জামিন পেয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেশের রাজনীতি সেটা হতে দিল না।” বিন্দু ও গুরুনাথের ঘনিষ্ঠ হোটেল ব্যবসায়ী বিক্রম অগ্রবালকে ৩০ মে হাজির হতে বলে আজই সমন জারি করেছে চেন্নাই সিআইডি। শ্রীনিবাসনের শহরে বেটিং-চক্রের অন্যতম পাণ্ডা বলে তাঁকেই সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা।
সত্যিই, এমন মেঘাচ্ছন্ন ক্রিকেট আকাশ। তবু জাতীয় দলের অধিনায়ক টুঁ শব্দটি করলেন না!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.