কংগ্রেসের নিশানা বিজেপি
রুট বদলের তত্ত্ব উড়িয়ে নিরাপত্তা নিয়েই তোপ
ত্তীসগঢ় কংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রা’র পথে কি শেষ মুহূর্তে রুট বদল হয়েছিল? হলে, কার কথায়? সেই খবর প্রশাসনের কাছে আগাম গেল না কেন? রুট বদলের জন্যই কি এত মানুষের প্রাণ গেল?
গত ২৫ মে দরভার জিরোম পাহাড়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের কনভয়ে মাওবাদীদের প্রাণঘাতী হামলার পরে গত কয়েক দিন ধরে রায়পুর থেকে নয়াদিল্লি এই বিতর্ক দানা বাঁধছে। অথচ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, কোথা থেকে কী ভাবে এই প্রশ্নগুলো উঠছে, সে ব্যাপারে কারও কাছে কোনও সদুত্তর নেই। ওই দিন ‘পরিবর্তন যাত্রা’য় সামিল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের কাছেও এ ব্যাপারে কোনও উত্তর নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রুট বদলের কথা তাঁদের জানা নেই।
তবে কি মাওবাদীদের খতম তালিকায় থাকা মহেন্দ্র কর্মা, নন্দকুমার পটেল, বিদ্যাচরণ শুক্লর মতো বড় মাপের কংগ্রেস নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড়সড় গাফিলতির অভিযোগ ঢাকা দিতেই শাসক বিজেপি কিংবা পুলিশ-প্রশাসনের কোনও কোনও মহল সুকৌশলে এই রুট বদলের তত্ত্ব প্রচার করছে? কংগ্রেসের অভিযোগ কিন্তু তা-ই। স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে হাইকম্যান্ড, নিরাপত্তার গলদ এবং প্রকারান্তরে বিজেপি-মাওবাদী যোগ নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে আজ এক বিবৃতিতে বলা হয়, “কংগ্রেস নেতাদের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে মাওবাদীদের সুযোগ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কংগ্রেস নেতৃত্বের গতিবিধি সম্পর্কে মাওবাদীদের কাছে আগাম খবর ছিল। আর তার ভিত্তিতেই ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতৃত্বকে খতম করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল মাওবাদীরা।” কংগ্রেস নেতাদের জন্য নিরাপত্তার ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নিয়ে গত কাল রাতেই রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে একটি অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়। আজ সেটি প্রকাশ করা হয়। ওই অভিযোগপত্রে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বস্তারের ঘটনাস্থলে তদন্ত করছে এনআইএ-র দল। ছবি: পি টি আই
শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ কংগ্রেস নেতাদের ১৬টি গাড়ির কনভয় জগদলপুর থেকে দরভা হয়ে সুকমায় যায়। সুকমার কর্মসূচি শেষ করে বেরোতে বেরোতে দুপুর ৩টে বেজে যায়। পরবর্তী সভা ছিল জগদলপুরের কাছে কেশলুরে। কংগ্রেসের কনভয় যখন বিকেল ৪টে নাগাদ ফের জিরোম পাহাড়ে পৌঁছয়, দরভা ও টোংপালের মাঝখানে শুরু হয় মাওবাদী হামলা।
শেষ মুহূর্তে কি সত্যিই তাঁদের রুট বদল হয়েছিল? কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী চরণদাস মহন্ত আজ বলেন, “কোনও সময়েই রুট বদলের পরিকল্পনা ছিল না কংগ্রেসের। যেটা হয়েছে তা স্রেফ দিন বদল।” সভাটি হওয়ার কথা ছিল ২৪ মে। কিন্তু অজিত জোগী ওই দিন সময় দিতে না পারায় ঠিক তার পরের দিন সুকমায় সভা হয় বলে জানান মহন্ত। তাঁর অভিযোগ, “আসলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না দিয়ে চক্রান্ত করে আমাদের নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রশাসনের গাফিলতি ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা। এটা বিজেপি-র চক্রান্ত।”
যে পথে সুকমা থেকে দরভা হয়ে কেশলুর যাচ্ছিলেন কংগ্রেস নেতারা, সে পথের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এই পথেই পড়ে ঘন জঙ্গলে ছাওয়া জিরোম পাহাড়। পাহাড়ি জায়গায় সন্ধ্যাও নামে তাড়াতাড়ি। বিকল্প রাস্তা হতে পারত সুকমা থেকে গাদিরাস, নকুলনাড়, দন্তেওয়াড়া হয়ে কেশলুর। তার দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। দন্তেওয়াড়া সমেত এই পথের একাধিক জায়গা মাওবাদী ঘাঁটি। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, স্বাভাবিক কারণেই ওই পথে যাওয়ার কথা ভাবা হয়নি। রায়পুরে রামকৃষ্ণ কেয়ার হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে বস্তারের কোন্টা কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক কাওয়াসি লখমা এ দিন স্পষ্টই বললেন, “রুট বদলের কোনও কথা হয়নি। হলে আমি জানতে পারতাম। এই প্রশ্ন উঠছে কেন?”
একই প্রশ্ন বিজাপুর জেলা কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অজয় সিংহেরও। মহেন্দ্র কর্মার অনুগামী এই কংগ্রেস নেতা তাঁর সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন। কোনও ক্রমে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাঁর কথায়: “রুট বদলের কথা কেন বলছে সরকার? বলছে ১৩০০ নিরাপত্তা রক্ষী ছিল? আমি বলছি, ১৩ জনও ছিল না। মহেন্দ্রজি জেড প্লাস নিরাপত্তা পান। সে দিন কিছুই ছিল না। জেনে রাখুন, রুট বদলের কোনও কথাই হয়নি।”
প্রকাশিত অভিযোগপত্রে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও একই প্রশ্ন তুলেছে জেড প্লাস ক্যাটিগরিতে মহেন্দ্র কর্মার জন্য ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা। সেই নিরাপত্তা আদৌ কি দিয়েছিল রাজ্য সরকার? দ্বিতীয়ত, কিছু দিন আগেই বস্তারে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিকাশ যাত্রার জন্য তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সেই ধরনের নিরাপত্তা কংগ্রেস নেতাদের দেওয়া হল না কেন? তৃতীয়ত, ছত্তীসগঢ়ে ৩০ হাজার আধাসেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তাদের যথাস্থানে মোতায়েন করা হয়েছে কি? চতুর্থত, সম্ভাব্য মাওবাদী হানা সম্পর্কে আগাম গোয়েন্দা তথ্য যে রাজ্য সরকারকে পাঠানো হয়েছিল তা রমন সিংহ কি অস্বীকার করতে পারেন?
ছত্তীসগঢ় বিজেপি-র মুখপাত্র অজয় চন্দ্রাকর কংগ্রেসের আনা চক্রান্তের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আজ রাতে বলেন, “এখন ওরা চক্রান্তের কথা বলছে? এই মাওবাদী সমস্যা তো কংগ্রেস আমলের। এনআইএ যখন তদন্ত করবে, তখন তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আমরাও জানাব, কংগ্রেসের কোন কোন নেতা এই কাজ করেছেন।”
কিন্তু নিরাপত্তায় গাফিলতি প্রসঙ্গটির মোকাবিলা কী করে করবে রমন সিংহের প্রশাসন? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলছেন, “নিরাপত্তা ছিল। তবে যথেষ্ট ছিল কি না, তা তদন্তের পরেই বোঝা যাবে।” নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার যে কোনও ঢিলেমি করেনি সেই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করতে চলেছে রমন সরকার। বস্তারের এসপি ময়ঙ্ক শ্রীবাস্তবকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, বদলি হয়েছেন বস্তারের আইজি হিমাংশু গুপ্ত। নিহত কংগ্রেস নেতাদের প্রতি শোক জানাতে এ দিন ছত্তীসগঢ়ে এসেছিলেন রাজনাথ সিংহ এবং অরুণ জেটলি। এ দিনই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ছ’সদস্যের একটি দলও জগদলপুরে এসে পৌঁছেছে।

কংগ্রেস প্রকাশ্যেই শিন্দের সমালোচনায়
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার সময়ে আমেরিকায় থাকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সমালোচনা করল কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র ভক্তচরণ দাস বলেন, “এই সময়ে কোনও সফরই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।” তবে তাঁর মতে, বিষয়টি নিয়ে হইচই করার প্রয়োজন নেই। কারণ, হামলার পরে ছত্তীসগঢ়ে গিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.