সতর্কবার্তা রমনকেও
মহেন্দ্র-নন্দ-শুক্লরা শত্রু, দায় স্বীকার মাওবাদীদের
ত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার দায় স্বীকার করল মাওবাদীরা।
সিপিআই (মাওবাদী)-এর দণ্ডকারণ্য স্পেশ্যাল জোনাল কমিটি প্রেস-বিবৃতি দিয়ে ‘বস্তারের নিপীড়িত মানুষের পরম শত্রু’ মহেন্দ্র কর্মা ও নন্দকুমার পটেল-সহ অন্য কংগ্রেস নেতাদের হত্যা করার জন্য দলীয় কর্মীদের রীতিমতো অভিনন্দন জানিয়েছে। তাদের এই বিবৃতির মধ্যেই রায়পুরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহও উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডকারণ্য স্পেশ্যাল জোনাল কমিটির মুখপাত্র গুড়সা উসেন্ডির সই করা ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল, মহেন্দ্র কর্মা এবং আরও কিছু ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ কংগ্রেস নেতাকে খতম করা। তবে এই হামলায় কয়েকজন নিরীহ মানুষ এবং কংগ্রেস কর্মীর হতাহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তাঁদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছে মাওবাদীরা।
শুধু তা-ই নয়, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বিবৃতিতে রাজ্যপাল শেখর দত্ত, মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ-সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও পুলিশ অফিসারের নাম করে বলা হয়েছে, দণ্ডকারণ্যে বিপ্লবী আন্দোলন চুরমার করে দিতে তাঁরা উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁরা নিজেদের ‘অপরাজেয়’ ভাবছেন। রমন ছাড়াও মাওবাদীদের এই তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নানকীরাম কানওয়ার-সহ একাধিক মন্ত্রী। অফিসারদের তালিকায় রয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাম নিবাস, অতিরিক্ত ডিজি (গোয়েন্দা বিভাগ) মুকেশ গুপ্ত প্রমুখ। মনে করা হচ্ছে, আলাদা ভাবে নাম উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে তাঁদেরও সতর্কবার্তা দিল মাওবাদীরা। মাওবাদীরা মন্তব্য করেছে, ‘জেড প্লাস’ শ্রেণির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর বুলেটপ্রুফ গাড়ির জন্য মহেন্দ্র কর্মাও ভেবেছিলেন তিনি চিরকাল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন।
আজ রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে ও মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে দু’দফায় বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এ এস ইব্রাহিম। আর কে সিংহ বলেন, “মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুধু চলবেই না, তা আরও জোরদার করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন নেই।” মাওবাদীদের আন্দোলন ও গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য জানতে পারলে তা নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়ে সাহায্য করার জন্য জনসাধারণের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের এই চূড়ান্ত তৎপরতার মধ্যেই মাওবাদীদের বিবৃতি আসে। ২৬ মে তারিখে জারি করা ওই বিবৃতিতে মাওবাদীরা দাবি করেছে, শনিবারের খতম অভিযানের মধ্য দিয়ে সালওয়া জুড়ুমের গুন্ডা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হাজার হাজার আদিবাসীর নৃশংস হত্যার বদলা নেওয়া হল। তাদের অভিযোগ, সালওয়া জুড়ুম চলার সময়ে অসংখ্য আদিবাসী রমণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ‘পরিবর্তন যাত্রা’য় হামলা চালিয়ে ওই কাজের বদলা নেওয়া হল।
মহেন্দ্র কর্মা না হয় মাওবাদীদের দীর্ঘদিনের শত্রু, কিন্তু নন্দকিশোর পটেলকে হত্যা করা হল কেন? কেনই বা বিদ্যাচরণ শুক্লর মতো প্রবীণ নেতাকে হত্যার চেষ্টা হল? গত তিন দিন ধরে এই প্রশ্ন নানা মহলে উঠছে। হিন্দিতে লেখা চার পাতার দীর্ঘ প্রেস বিবৃতিতে তারও উত্তর দিয়েছে মাওবাদীরা। জানিয়েছে, নন্দকুমার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীনই বস্তারে প্রথম আধা-সামরিক বাহিনী (সিআরপি) মোতায়েন করা হয়। আর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ স্বরাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। ‘নিপীড়ণমূলক’ নানা কেন্দ্রীয় নীতি রূপায়ণ করেছেন তিনি।
সুকমার জিরোম পাহাড়ে কংগ্রেসের কনভয়ে হামলায় মহেন্দ্র কর্মার মৃতদেহ ঘিরে তুমুল উল্লাসে নেচেছিল মাওবাদীরা। তাঁর মৃতদেহে লাথিও মারে তারা। সেই তীব্র আক্রোশ প্রতিফলিত হয়েছে মাওবাদীদের বিবৃতিতেও। বিবৃতির দীর্ঘ অংশ জুড়ে রয়েছে মহেন্দ্র কর্মার পারিবারিক ইতিহাস ও তাঁর ‘জনবিরোধী’ নানা কাজের খতিয়ান। মাওবাদীরা দাবি করেছে, বস্তারের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরেই ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’-র (পি এল জি এ) কাছে মহেন্দ্রকে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু এর আগে কয়েকবার ‘সামান্য ভুল’ আর অন্য কারণের জন্য তিনি বেঁচে গিয়েছেন।
মাওবাদীদের বিবৃতিতে স্পষ্ট, তারা ‘জনবিরোধী’ কাজের নিরিখে ছত্তীসগঢ়ে বিরোধী দল কংগ্রেস এবং শাসক দল বিজেপি-কে একাসনে বসাতে চায়। তারা দাবি করেছে, ছত্তীসগঢ়ে বিপ্লবী আন্দোলন দমনের ক্ষেত্রে দু’টি দলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এ বারের হামলা কংগ্রেসের উপরে হলেও, বিজেপি-কে যে মাওবাদীরা ছাড় দিতে চায়, এমন কোনও ইঙ্গিত ওই বিবৃতি থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের একটা অংশের মতে, বিজেপি এখনও এ রকম হামলার মুখে পড়েনি, মাওবাদীদের সুযোগ হয়নি বলে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.