অ্যাকশন রিপ্লে
লোকে বলে অক্ষয়কুমারের জার্নি নাকি ‘চাঁদনি চক টু চায়না’।
তবে রাজীব হরি ওম ভাটিয়ার জার্নি কিন্তু চৌরঙ্গী টু বলিউড। কলকাতার চৌরঙ্গী।
দিল্লির চাঁদনি চকে বেড়ে উঠতে পারেন। গড়ে ওঠা কিন্তু কলকাতার চৌরঙ্গীতেই।
প্রথম চাকরি। প্রথম প্রেম। প্রথম অনেক কিছু।
সত্যিই এ শহর জানে ‘তাঁর’ প্রথম সব কিছু।
চৌরঙ্গী লেনে যদিও তাঁকে অক্ষয় নামে চেনা দুষ্কর।
ছোটবেলার বন্ধু অনিল পঞ্জাবি, নারি মুদরানি, অরুণ সিংহের কাছে এখনও তিনি রাজু। রাজীব ভাটিয়া।
পড়াশোনায় কোনও দিনই আগ্রহ ছিল না রাজীবের। ইউনেস্কোয় কর্মরত বাবা হরি ওম ভাটিয়া তাই ছেলেকে স্কুলের পাঠ শেষ হলে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতায়। বন্ধুর ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করতে। “কাজ শিখতে বলাটা ভাল হবে। বা বলা যায় জীবনে দাঁড়াতে। হরি বলেছিল একদম সাঁতার শেখাব না। জলে ফেলে দে, নিজেই সাঁতরে উঠবে। আমাদের শিবা ট্র্যাভেল এজেন্সির হয়ে এয়ারপোর্টে যাওয়া, টিকিট-ফিকিট করানো, ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলা এ সবই করত রাজীব। কর্মচারী নয়, পরিবারেরই একজন ছিল। থাকতও তো আমাদের বাড়ির পাশের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজে,” বলছিলেন অক্ষয়ের এক সময়ের ‘বস’ এমবি পঞ্জাবি। এখন এআর-ইএস ট্র্যাভেলসের কর্ণধার।
মজা সব সময়ই করতেন অক্ষয়। স্কুলের চৌকিদারকে দু’-দশ টাকা দিয়ে সন্ধেবেলা স্কুলে ভিসিআর
ভাড়া করে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করতেন। বন্ধুদের নিয়ে টানাটানির সময়েও সিনেমা হলে নিয়ে যেতেন অক্ষয়
চৌরঙ্গী লেনেই শিবা ট্র্যাভেল এজেন্সি, ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজ। তবে লেনের যা প্রস্থ, তাতে অক্ষয়ের সদ্য কেনা বেন্টলি ঢুকবে না। তাতে কী, তখন পোর্শ-বেন্টলে নিয়ে মাথা ঘামানোর অবসর কোথায় রাজীবের? “রাজুর মাথায় খালি ঘুরত মস্তি করা। অ্যাশ করা। পকেটে পয়সা নেই তো কী! হাতিয়ার তো বন্ধুত্ব করার ক্ষমতা। এক নিমেষে বন্ধু করে নিতে পারে। এমন কোনও লোক আমাদের এজেন্সিতে আসেনি যার ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়নি। বিদেশ থেকে আসা লোকেদের সঙ্গে ওর সখ্য ছিল বিদেশি পারফিউম, বিদেশি ব্র্যান্ডের টি-শার্টের জন্য। কম পয়সায় যদি পাওয়া যায়,” বললেন এমবি পঞ্জাবির ছেলে অক্ষয়ের ছোটবেলার বন্ধু অনিল পঞ্জাবি।
তবে শুধু ছোটবেলা বললে ভুল বলা হবে। এখনও বন্ধুত্ব বহাল। গত বার কলকাতায় এসেও দেখা করে গিয়েছেন অনিলের সঙ্গে। রাত দু’টোতে অনিলকে নিয়ে ঘুরে এসেছেন তারুণ্যের লীলাভূমি চৌরঙ্গী লেন। ক্রীড়াভূমিও বলা যায়। চৌরঙ্গী লেনেই তো বিকেলে হলেই বসত গলি ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলার আর এক জায়গা ছিল ময়দান। “প্রতিদিন ভোর চারটেয় উঠত। উঠেই আমাদের টেনে তুলত। নিয়ে যেত ময়দানে। অরুনের একটা টিভিএস লুমিয়া ছিল। সেটাতেই চার জনকে চাপিয়ে নিয়ে যেত ময়দানে। ওই যেখানে লেডিজ গল্ফ ক্লাবটা আছে তার পাশে। তার পর চলত মার্শাল আর্টসের ট্রেনিং। রাজু মাস্টার। আমরা ছাত্র,” বললেন নারি মুদরানী, অক্ষয়ের আর এক ছোটবেলার বন্ধু।
মার্শাল আর্টস-এর কসরতটা কিন্তু পরবর্তী কালের ‘ভারতীয় জ্যাকি চ্যান’ হওয়ার জন্য নয়। “বন্ধুদের স্টান্ট দেখানো আর মেয়ে পটানো। খুব ফ্লার্টবাজ। কিন্তু প্রকাশ করতে ঘাবড়াত। আমাদের বাড়ির উল্টো দিকে একটা মেয়ে থাকত। আমার বোনের বন্ধু। রাজুর খুব পছন্দ। কিন্তু বলতে পারে না। আমার বোনকে ঝুলোঝুলি করত বলে দেওয়ার জন্য। যদিও সেটা আর হয়ে ওঠেনি। সন্ধেবেলা আমরা বেরোতাম পার্ক স্ট্রিট ঘুরতে। সিনেমা দেখা, মেয়ে দেখা সবই চলত,” হাসতে হাসতে অনিল বললেন।
যেমন ফ্লার্টবাজ। তেমন প্র্যাঙ্কবাজও। ছোটবেলার মজার কথা বলছিলেন অনিল। চৌরঙ্গী লেনেই ক্রিকেট খেলছিলেন তাঁরা। ইন্দিরা গাঁধী গুলিবিদ্ধ হলেন সেদিন। চৌরঙ্গী লেন আর সদর স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে জটলা। সবাই ব্যস্ত হয়ে আলোচনা করছে। তাঁরাও খেলা ফেলে ছুটে গিয়েছেন সেখানে। হঠাৎ অক্ষয় তাঁদের বলেন, তিনি ইশারা করলেই যেন ওঁরা দৌড় লাগায়। কথা মতো কাজ হল। হঠাৎ দেখেন চৌরঙ্গী হাই স্কুলের প্রধান মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। অক্ষয়ের প্র্যাকটিকাল জোক। তিনি লক্ষ করেছিলেন হেড মিস্ট্রেস বাইরের জটলা দেখতে বেরিয়েছেন। ওঁকে ভড়কে দেওয়ার জন্যই ওরকম ভাবে দৌড়তে বলেছিলেন অক্ষয়। হাসিতে ফেটে পড়ে অনিল বললেন, “দৌড়তে দৌড়তে পুরো ব্যাপারটা বোধগম্য হল। শুনতে পাচ্ছিলাম আমাদের যা-নয়-তাই বলছেন হেড মিস্ট্রেস।”
শিবা ট্র্যাভেলসে কর্মচারী নয়, পরিবারেরই একজন হয়ে ছিলেন অক্ষয়। থাকতেন
চৌরঙ্গী লেনেই। শিবা ট্র্যাভেল এজেন্সির পাশের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজে
এমন মজা সব সময়ই করতেন অক্ষয়। স্কুলের চৌকিদারকে দু’-দশ টাকা দিয়ে সন্ধেবেলা স্কুলে ভিসিআর ভাড়া করে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করতেন। বন্ধুদের নিয়ে টানাটানির সময়েও সিনেমা হলে নিয়ে যেতেন অক্ষয়। স্লিভলেস টি-শার্ট পরে স্কুটিতেই স্টান্ট দেখানো। ইউনিক ব্যাপারটা তখন থেকেই ছিল। এখনও যেমন অটোগ্রাফ চাইলে, চাইয়ের কাছে পেন না থাকলে, বুড়ো আঙুল দিয়ে অদৃশ্য ছাপ দিয়ে দেন। ওটাই ওঁর সিগনেচার।
আর ছিল তাস আর ক্যারমের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ। অনিল বললেন, “তাসের টানটা এখনও ওর প্রবল। আসলে পঞ্জাবি পরিবারে বড় হওয়ায় একান্নবর্তী ধারণাটা গেঁথে ছিল রাজুর মনে। সবাইকে নিয়ে জমিয়ে রাখা। জমিয়ে তাস খেলা। ক্যারম খেলা। সবাইকে নিয়ে হই-হুল্লোড় করা। শিকড়টা এখনও ভাল ভাবে গেঁথে আছে। না হলে রাত দু’টোয় তাজ বেঙ্গল থেকে ফোন করে ডাকে। বলে ‘চৌরঙ্গী লেনে ঘুরে আসবি? এখনও বংশী ফুচকা নিয়ে স্কুলের বাঁ পাশটায় বসে?’ এখানে থাকার সময় তো বাংলাটাও বেশ শিখেছিল। এটাই অক্ষয়।”
মানে বলিউডের সিনেমা থেকে সব থেকে বেশি টাকা রোজগার করা অভিনেতা নন। এক বছরে (১৯৯৪-এ) বারোটা ছবি করা ‘খিলাড়ি’ও নন।
‘খিলাড়িও কা খিলাড়ি’র ‘হ্যাম হ্যায় সিধে সাধে অক্ষয় অক্ষয়’ গানটাই রাজীব হরি ওম ভাটিয়ার লাইফ টিউন।

প্রতিদিন ভোর চারটেয় উঠে আমাদের নিয়ে যেত ময়দানে।
তার পর চলত মার্শাল আর্টসের ট্রেনিং

নারি মুদরানি

আমাদের বাড়ির উল্টো দিকের একটা মেয়েকে ওর খুব
পছন্দ। আমার বোনকে ধরত বলে দেওয়ার জন্য

অনিল পঞ্জাবি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.