এক এক্কে অক্ষয়

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে পনেরো বছর পর কলকাতায় শো। কেমন লাগছে?
কলকাতা ইজ স্পেশাল টু মি। ভেরি স্পেশাল ইন মাই লাইফ।
(মনে মনে ভাবছি, এ তো সবাই বলে। যে শহরে যাবে তার সম্পর্কে পলিটিক্যালি কারেক্ট হয়ে স্তুতি করে। এই সময় অক্ষয় অবাক করে দিলেন...)
কলকাতা আমায় এমন জীবনশিক্ষা দিয়েছে যা কখনও ভুলতে পারব না। লাইফ বলতে কী বোঝায় অত কম বয়েসে কলকাতাই আমায় বুঝিয়েছিল।

তাই?
হ্যাঁ, টিন এজ শেষ করার সময় এখানে দু’টো বছর কাটিয়ে ছিলাম। নাইনটিন এইট্টি থ্রি আর এইট্টি ফোর। সেই বছর দু’টোর প্রতিটি দিন আজও আমি গড়গড় করে মুখস্থ বলে দিতে পারব। যে দিন ইন্দিরা গাঁধী মারা যান, সে দিনও আমি এ শহরে।

কী করতেন কলকাতায়?
চাকরি করতাম। (লাজুক হাসি) শিবা ট্র্যাভেল এজেন্সি বলে একটা কোম্পানিতে।

সেটা আবার কোথায়?
অ্যাড্রেস ছিল, টুয়েলভ চৌরঙ্গী লেন। থাকতামও অফিসের কাছেই। নিউ মার্কেটের পিছনে।

তখন কি চাকরির বয়েস ছিল আপনার? নাকি আন্ডার এজেড ছিলেন?
হাঃ, বলতে পারেন আন্ডার এজেডই ছিলাম। আসলে ওই বয়েসেই আমি একটা কিছু করতে চেয়েছিলাম। আর এসে পড়লাম কলকাতার হাতে। এই শহরটার মধ্যে অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে যা পৃথিবীর খুব কম শহরে আছে।

সেটা কী?
সেটা হল খারাপ সময়কেও একটা ভীষণ নরম ভাবে পরিবেশন করার ক্ষমতা। টাফ টাইমকে নরম ভাবে ধীরে ধীরে নিয়ে আসা। আমার এখনও মনে পড়ে ছুটির দিন সকালবেলা ময়দানে যেতাম মার্শাল আর্টস শিখতে। অনেক বিদেশি সঙ্গে থাকতেন। একটা ছোট রেস্তোরাঁ ছিল তখন নিউ মার্কেটের পাশে, নামটা ভুলে গেছি। প্রতি রোবরার সেখানে ব্রেকফাস্ট করতে যেতাম। অন্য দিনগুলো অবশ্য রেস্তোরাঁয় ব্রেকফাস্ট করার সামর্থ্য ছিল না।

অন্য দিনগুলোয় সকালে কী খেতেন?
বলতে গেলে কিছুই না (হাঃ)। পেট খালি থাকত।

আমায় একটা কথা বলুন কলকাতা আপনাকে এমন কী শেখাল যা মুম্বই পরবর্তী কালে শেখাতে পারেনি?
ওই যে বললাম, কঠিন সময়কে নরম ভাবে পরিবেশনের ক্ষমতা। কলকাতা আমায় শিখিয়েছে খারাপ সময় কী ভাবে ভালভাবে কাটিয়ে উঠতে হয়যেটা একটা অসাধারণ বিদ্যা। কলকাতা আপনাকে খারাপ সময় দেবে। টাফ সময় দেবে। পর মলম সাথ মে লেকে ঘুমতি হ্যায় ওহ সিটি। ব্যথা দেবে আবার কিনা মলমও লাগিয়ে দেবে। অনবদ্য মনন।

আপনি দিল্লি-মুম্বইতেও এত বছর কাটিয়েছেন। কলকাতার সঙ্গে শহর দু’টোর কী তফাত?
মুম্বই মানে তো স্পিড! ঝটাক (মুখ দিয়ে শিসের মতো)। সময় কোথায় মুম্বইয়ের কাউকে শুশ্রূষা করার। একটা কথা আছে না, মুম্বইয়ে কাউকে টাইম জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর দেওয়ারও টাইম নেই। আর দিল্লি হল অলস। ছড়িয়ে থাকা। ইজি লাইফ।

কিন্তু উঠতি ছেলের জন্য দিল্লিই কি ভাল নয়? তার ওপর তা হলে মারাত্মক চাপ থাকবে না।
না, দিল্লিতে ভয় আছে অলস হয়ে পড়ার। কলকাতায় হার্ডশিপ আছে। আবার তার সঙ্গে রোম্যান্সও আছে। দিনে প্রচণ্ড রগড়ালেন। লড়াই চলল।
এ বার সন্ধেটা এল কী মিষ্টি হয়ে। চারপাশে বন্ধুবান্ধব। তাদের সঙ্গে আড্ডা-গল্প। হাসি। মনেই রইল না দিনটা কত কঠিন গেছে। এটাই তো রোম্যান্স।

অক্ষয় কুমারকে কি কলকাতা তার প্রথম গার্লফ্রেন্ড দিয়েছে?
হাঃ হাঃ হাঃ

আরে বলুন না।
বলছি বলছি। কী বলব আসলে ভেবে পাচ্ছি না। একটা মেয়েকে আমার খুব ভাল লাগত। সমস্যা হল (হাঃ হাঃ), তার আমাকে মোটেই ভাল লাগত না।

প্রোপোজ করেছিলেন?
আরে না, না! চাউনি-টাউনি থেকেই তো বোঝা যায়। কেসটা নেগেটিভ হত। আমি সাহস-ই করিনি।

মহিলা কি সহকর্মী ছিলেন?
না না না (হাসি থামছে না)। প্রতিবেশী ছিল। চৌরঙ্গী লেনেই থাকত।

অক্ষয় কুমারকে কেন বলা হয় ‘দ্য বয় ফ্রম চাঁদনি চক’? আপনার তো বলা উচিত, আমি হলাম ‘দ্য টিনএজার ফ্রম চৌরঙ্গী লেন’।
কাকে বলব? কেউ তো আমায় জিজ্ঞেস করেনি। করেও না। আমার জার্নি আসলে অনেক শহর থেকে অনেক শহরে। তাল রাখতে পারবেন না। শুনলে অবাক হয়ে যাবেন আমি ঢাকাতেও চাকরি করেছি। ব্যাংককে করেছি। মুম্বইতে চাকরি করেছি। দিল্লিতে করেছি। কত কিছু করেছি জীবনে।

ঢাকা গেলেন কবে?
আই থিঙ্ক, ১৯৮৫-তে গেছিলাম। ঢাকাতে একটা বিখ্যাত হোটেল আছে পূর্বাণী।

হ্যাঁ, হ্যাঁ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সামনে।
ইয়েস, তখন ওই স্টেডিয়ামটা হয়নি। পরে হয়েছে।

পূর্বাণীতে আপনি কী চাকরি করতেন?
হাঃ হাঃ... আমি কী করতাম... একটা সাধারণ ওয়েটারের চাকরি করতাম।

কলকাতা থেকে ঢাকা কী করে গেলেন?
কোনও লজিক নেই। লাইফে অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। আর তার টানে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়। হঠাৎ কারও সঙ্গে দেখা হল, আর সে আপনাকে নিয়ে গেল কোথাও। তার পর আবার কোনও একটা লোক এসে হাত বাড়াল... সে বলল, এসো আমার সঙ্গে ব্যাংকক। শেফ হবে। ব্যাংকক থেকে হঠাৎ চলে গেলেন দিল্লি। দিল্লি থেকে ঝাঁ করে চলে গেলেন মুম্বই... সেখানে মার্শাল আর্টস শেখালেন... তার পর কেউ এসে বলল মডেল হবে, মডেল হও... সে হয়ে গেল মডেল... তার পর কেউ বলল ভাই, অভিনেতা হবে? তার পর ইতিহাস। তার পর লোকটা আপনার সামনে বসা...

থামাচ্ছি একটু। মডেল হবার পরের জায়গাটায় একটা তথ্য ঢোকাতে চাই। হঠাৎ সেই মডেল একদিন অ্যাড শ্যুটে যাওয়ার সকালে বেঙ্গালুরু ফ্লাইট মিস করল। এ বার মিস করে সে সারা দিন আর কী করে কাটাবে। স্টুডিয়োতে নৈমিত্তিক রাউন্ডে বেরিয়ে গেল। আর সেদিনই হিরোর অফার পেল...
সেটা আরও লম্বা স্টোরি। আপনার জন্য ছোট করে আনছিলাম।

জীবন আপনাকে কী শিখিয়েছে?
শিখিয়েছে সব সময় পা মাটিতে থাকতে। শিখিয়েছে কখনও নিজের সাফল্যকে সিরিয়াসলি না নিতে। বলেছে যা তোমার আসবে তা কোনও দিনই তোমার থাকবে না।

অক্ষয়কুমারের দুর্ধর্ষ ঘটনাবহুল জীবনে ভাগ্য কতটা? সে নিজে কতটা?
উ উ উ। আমি বলব ভাগ্য সত্তর ভাগ। আমার চেষ্টা আর ড্রাইভ তিরিশ ভাগ।

কলকাতায় রাজীব ভাটিয়ার অফিস।
১২ চৌরঙ্গী লেন। এখন বিউটি পার্লার
ঢাকার পূর্বাণী হোটেল।
রাজীব তখন ওয়েটার

ছবি: কৌশিক সরকার
আপনি বলছিলেন কলকাতার প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষার উপকারিতার কথা। আগামী কাল মনে করা যাক আপনার পরের ছবি ফ্লপ করল। কলকাতার শিক্ষা কী ভাবে সাহায্য করবে?
ওই যে বললাম টাফ ধাক্কাকেও নরম ভাবে সইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা পড়িয়েছে। সেটা লাইফে খুব কাজের। এই শহর আমায় শিখিয়েছে সাফল্যকে যেমন সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নেই। তেমনি ব্যর্থতাকেও সিরিয়াসলি নিতে যেয়ো না। ব্যর্থতাও চূড়ান্ত নয়। ওটা যেতে দাও। দেখবে নতুন সময় আসবেই।

একটা কথা বুঝতে পারছি না। রোলারকোস্টার রাইডের মতো অবিশ্বাস্য আপনার জীবনকাহিনি কোথাও শোনা যায় না কেন? কেন সেটা জোরালো ভাবে প্রচার হয় না? নাকি আপনিই চান না বেশি প্রচার-টচার হোক?
কেউ খুব বেশি কখনও জিজ্ঞেস করেনি এটা একটা কারণ।
নিজে খুব বেশি জাঁক করতে চাই না এটা একটা কারণ। তা ছাড়া কত লোকের জীবনসংগ্রামের কত অসামান্য কাহিনি রয়েছে। আমারটা তার মধ্যে ছোট একটা। তা নিয়ে বেশি হইচই করার কী আছে? আমার মনেই হয় না আমার কাহিনি গ্রেট স্টোরিগুলোর মধ্যে পড়বে বলে।

গ্রেট কাহিনি বলতে?
দুর্ধর্ষ সব স্টোরি। আমি যেমন গ্রেটেস্ট মনে করি সচিন তেন্ডুলকরের স্টোরি।

বলিউডে এমন কেউ আছেন যাঁকে দেখে বা যাঁর কথা শুনেটুনে আপনি এই পেশার প্রয়োজনীয় টিপস পেয়েছেন?
ঘুরে ফিরে আমি সেই একজন বাঙালির কথাই বলব। মিস্টার প্রমোদ চক্রবর্তী। প্রয়াত প্রমোদ চক্রবর্তী। যিনি আমাকে শুধু প্রথম ‘ব্রেক’ই দেননি, দারুণ একটা শিক্ষা দিয়েছিলেন। শিখিয়ে ছিলেন তুমি যত ছবিই করো না কেন, তুমি যত বিভিন্ন ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করো না কেন, সব সময় প্রোডিউসারের কথা চিন্তা করবে। সব সময় প্রোডিউসারকে হেল্প করবে। সেটা যদি করতে পারো দেখবে একসঙ্গে ২৫টা ছবি ফ্লপ করার পরেও তোমার কাজের অভাব হচ্ছে না। আজকের দিনে আমার মনে হয়, ফিল্ম ওয়ার্ল্ডের সব চেয়ে বড় সিক্রেটটাই উনি আমায় শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বিগেস্ট সিক্রেট।

তার মানে প্রযোজককে কখনও টেনশন দিও না?
নেভার। কখনও দিও না।

যেমন বলা হয় ‘মাম্মাস বয়’, আপনি তেমন এই শিক্ষাটা পাওয়ার পর হয়ে গিয়েছেন ‘প্রোডিউসার্স বয়’। তাই তো?
আমি সব সময় তাই থাকতে চাই আ প্রোডিউসার্স বয়। আমার জীবনে প্রচুর সাফল্য এসেছে। প্রচুর ব্যর্থতা এসেছে। কিন্তু একটা জিনিস কনস্ট্যান্ট থেকে গিয়েছে কাজ। আমার সব সময়ই প্রচুর কাজ ছিল। প্রোডিউসারের কথা যদি আপনি ভাবেন সে কোথাও না কোথাও গিয়ে আপনার কথা ভাববে।
প্রোডিউসারেরা কেমন কথা বলে জানেন? হয়তো নিজেদের মধ্যেই কথা বলছে। বলছে, চল ইসকো লে লে ইয়ার। পিকচার ফটাফট খতম হো জায়েগি। ইয়ে বন্দা ঠিক হ্যায়। হি উইল কাম অন টাইম। এর ওপর বিশ্বাস রাখা যায়। এই যে অজান্তে, অসাক্ষাতেও প্রোডিউসার আপনার সম্পর্কে ভাল কথা বলছে। আশা রাখছেএটাই আসল। প্রোডিউসার খুব ইম্পর্ট্যান্ট মানুষ। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এই প্রজাতির পুরুষ বোঝারই কোনও চেষ্টা হয় না।

আপনি বলতে চান নিজে কখনও তারকাসুলভ বায়নাক্কা দেখাননি? মোটে দেরিটেরি করেননি?
নেভার ইন মাই লাইফ। কোনও দিন করিনি। আমার হার্টে হাত রেখে বলতে পারি। এক জন প্রোডিউসারও সামনে এসে বলতে পারবে না যে অক্ষয় ভুগিয়েছে। বা দেরি করে এসেছে।

একটা সিন করার জন্য ততক্ষণে ডাক এসে গিয়েছে। বিপুল শাহের নতুন ছবিতে দৃশ্যটা কান্দিভেলির ওবেরয় গার্ডেন্স নামক বহুতলের ঠিক বাইরে শ্যুট করা হবে। গাড়ি থেকে ঝাঁপাচ্ছেন অক্ষয়। যথারীতি স্টান্টম্যান নয়, নিজেই করবেন। বলে গেলেন জাস্ট টেন মিনিটস। মিনিট কুড়ি হয়ে গেল অক্ষয়ের দেখা নেই। হঠাৎ সেক্রেটারি গোছের কে একটা লোক ড্রয়ার থেকে অয়েন্টমেন্ট বার করে নিয়ে গেল। তার পিছু পিছু আর এক জন। এ সি ভ্যানের আর এক দিকের দরজাটা খুলে এ বার এক বিদেশিনীর আতঙ্কিত মুখে প্রবেশ। তিনিও কী একটা বার করে ছুট লাগালেন বাইরে। হলটা কী? বাইরে নেমে দেখি, অক্ষয়ের ভ্যানটাকে ঘিরে শ’দেড়েক লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সবার মুখে টেনশন। নীচে একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, চোট লেগে গিয়েছে অক্ষয়ের। গাড়ি থেকে নীচে ঝাঁপানোর সিনটা করতে গিয়ে। ঝাঁপানোর সময় ট্রলির টায়ারে ধড়াম করে লেগেছে তাঁর ডান পায়ে। আর সেখানেই নাকি লেগেছে, যেখানে আগে চোট ছিল।
দ্রুত দু’টো জিনিস মনে হল
(১) বাকি ইন্টারভিউ আর হল না। কলকাতা থেকে একটা ইন্টারভিউয়ের জন্য উড়ে আসাটা বেকার হয়ে গেল।
(২) ৯ জুন ইস্টবেঙ্গলের শো-টাও তা হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। এর পিঠোপিঠি শেষ জিজ্ঞাসা: অক্ষয় কোথায়? তাঁকে তো দেখতেই পাচ্ছি না।
অক্ষয়ের কাজকর্ম দেখাশোনা করে একটি ফর্সা মতো শীর্ণকায় তরুণী। এ বার সে সামনে এসে দাঁড়াল। বলল, ইন্টারভিউটা তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করতে হবে। আমরা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। জীবনে এর আগে এমন কাউকে ইন্টারভিউ করার সুযোগ হয়নি যে সদ্য চোট পেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কম্বিফ্ল্যামও যার সমস্যা কমাতে ব্যর্থ।
বললাম পা-টা বেডে তুলে বসুন না। অক্ষয় বললেন, “না, নীচে বরফে পা ডুবিয়ে রাখতে হবে তো। কাতরাতে কাতরাতে ইন্টারভিউ দিচ্ছে একটা লোক, এটা অভিজ্ঞতা হিসেবে আরও সমস্যাদায়ক এই জন্য যে কঠিন প্রশ্নগুলো করতে গেলে বাধো বাধো লাগে। কিন্তু উপায়ও থাকে না। ভাবলাম শুরু করা যাক নরম সব প্রশ্ন নিয়ে। তার পর না হয়...


ইস্টবেঙ্গলের প্রোগ্রামে যে যাচ্ছেন। ময়দানে বসে কখনও ফুটবল ম্যাচ দেখেছেন?
না দেখিনি। যদিও আমি ফুটবল ফ্যান। টিভিতে খেলাটেলা দেখি। স্কুলেও চুটিয়ে ফুটবল খেলতাম। ডন বসকো মুম্বইয়ের হয়ে।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সম্পর্কে কী জানেন?
এটুকু জানি যে লাখ লাখ সমর্থক এই ক্লাবটার। কলকাতার প্রাচীনতম ক্লাবগুলোর মধ্যে একটা। যার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ক্লাবের প্রাক শতবর্ষ উদযাপনে যে যাচ্ছি, তাও আমার প্রিয় শহরে সেটা ভেবে দারুণ লাগছে।

আপনার প্রিয় রং কি লাল-হলুদ?
না। আমার প্রিয় রং নীল-সাদা।

তা হলে তো কলকাতায় নেমে দেখবেন আপনার প্রিয় রং শহর জুড়ে। এই সরকারের আমলে তাই হয়েছে।
তাই বুঝি! জানতাম না তো কলকাতা নীল-সাদা হয়ে গিয়েছে।

মনে হচ্ছে সে দিন আইপিএল দেখতে এসে এতই বিমর্ষ ছিলেন যে, শহরের নতুন রং হয়ে যাওয়াটা চোখেই পড়েনি।
বিমর্ষ কেন?

শোনা যায়, আইপিএল যে আপনি দেখতে এসেছিলেন সেটা ইচ্ছাকৃত ভাবে টিভিতে দেখানো হয়নি। আপনার ছবি ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম’য়ের প্রোডিউসর বালাজি ফিল্মস তা নিয়ে এখনও ক্ষুব্ধ। একটু আগে আপনার ভ্যানে বসেই ওঁদের পদস্থ কর্তা আমায় বলছিলেন, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’কে বাড়তি সুবিধা দিতে এই কাজটা করা হয়েছে।
(হা হা হা) সে দিনও আর একজন এই প্রশ্নটা করছিল। আমি এ সবে ঢুকতে চাই না। এত ভাবিও না। ম্যাচ দেখতে এসেছিলাম। তার আগে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম’য়ের প্রোমোশনের কাজ করেছি। ইডেনে আমি স্রেফ স্পোর্টসের জন্যই এসেছিলাম। আমাকে টিভিতে দেখানো হল কি হল না তাতে কী এসে যায়? আমার বন্ধুবান্ধব যারা ছিল। আমার ফ্যান যারা মাঠে ছিল। তারা তো সবাই দেখেছে। সেটাই যথেষ্ট। দ্যাট ওয়াজ এনাফ।

কিন্তু টিভি দর্শক তো আরও অনেক লক্ষ ফ্যান ছিল, যারা আপনাকে দেখার সুযোগই পেল না।
কী করব ডার্লিং? টিভি ক্যামেরাম্যান তো আর আমার মাসতুতো ভাই ছিল না। ওকে তো আমার বলার সুযোগ ছিল না যে, শোন আমাকে ক্যামেরায় দেখা।
আবার মুখ দিয়ে যন্ত্রণাকাতর আঃ উঃ বেরোতে শুরু করল অক্ষয়ের। সহকারীকে বললেন আর একটা কম্বিফ্ল্যাম নিয়ে এসো। কিন্তু সাক্ষাৎকার বন্ধ করার কথা বলছেন না। এই মুখ চোখ এমন একজন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানুষের যে এর পরেও নিজের অ্যাকশন সিকোয়েন্স নিজেই করবে।

নানা রকম তত্ত্ব কিন্তু বাজারে ঘুরছে। কেউ কেউ বলছে, শাহরুখ চাননি বলেই আপনাকে দেখানো হয়নি। কেউ বলছে, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর প্রোডিউসররা চ্যানেলকে বলে আপনাকে আটকেছে। কেউ বলছে বালাজি ঠিক করে সেট ম্যাক্সকে ম্যানেজ করতে পারেনি। তবে প্রথম তত্ত্বটা সবচেয়ে চলছে।
দেখুন ভাই হাজার রকম তত্ত্ব বাজারে থাকতে পারে। আমার কাছে খেলা দেখতে পারাটা। আর ইডেনের বাইরে ছবির প্রোমোশন করাটা দরকার ছিল। সেটা হয়ে গিয়েছে। আর আমার থিওরিতে কাজ নেই।

কখনও মনে হয়, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম’ বলিউড ওয়াজ আ নাইস প্লেস টু ওয়ার্ক?
বলিউড ইজ স্টিল আ নাইস প্লেস টু ওয়ার্ক।

না, কলকাতায় যা অভিজ্ঞতা হল, তার পর মনে হয় না বলিউডটা একেবারে চটকে গেছে।
এটা পুরোটাই নির্ভর করে আপনি কী চান? আপনি কতটা এর মধ্যে জড়াচ্ছেন? ইন্টারভিউটা শুরু হওয়ার আগে আপনাকে বলছিলাম না, আমি পার্টিতেই যাই না। ওখানেই তো অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

কেন?
কারণ অর্ধেক সমস্যা শুরুই হয় রাতের পার্টি থেকে। যে-ই সেই বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন, ওমনি ঝঞ্ঝাট কমে গেল।

কিন্তু আপনার যে ছবি বক্স অফিসে এত কোটি টাকার ব্যবসা করে। তার পর তো প্রোডিউসর সেলিব্রেট করেন-ই পার্টি ডেকে। তখন না-ই বা বলবেন কী করে? আর লোকের হিংসে হওয়া থামাবেন-ই বা কী করে?
হিংসের ব্যাপারটা জানি না। আমি এ ভাবে দেখি, নীরবে নিজের কাজটা করে যান। সেটাই সব চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট। বাকিটা আপনাই ঘটে যাবে। কী ভাবে ঘটবে সেটা ঈশ্বরের ওপর ছেড়ে দিন। খোদার ওপর খোদকারিটা করতে যাবেন না। ঈশ্বরকে হাসাবেন না এই বলে যে, শুনুন আমার কিন্তু অমুকটা চাই। তাতে কিছু হবে না। বরং আপনি নিজেরটা মন দিয়ে করুন, উনি ঠিক আপনাকে দেখে নেবেন।

আপনি এত নীতির কথা বলছেন। অথচ আপনি আর শাহরুখ হলেন দু’জন ব্যতিক্রমী স্টার, যাঁরা দক্ষিণা পেলে সম্পূর্ণ অপরিচিত লোকের বিয়েবাড়িতেও নেচে আসতে পারেন।
আমি এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখি না। যদি আমাকে কেউ বিনোদনের জন্য ভাড়াই করে, তাতে খারাপ কী! ফিল্মেও তো তাই করছে ভাড়া করছে। তবে আমি ঠিক করি, কোথায় যাব না-যাব? যেখানে আমি মনে করি আমার যাওয়া উচিত, কেবল সেখানেই যাই। ‘চুজি’ বলেই গত চার বছর কিন্তু আমি কোনও বিয়েবাড়িতে প্রোগ্রাম করিনি।

খিলাড়ি গ্রাফ
মুম্বই
১৯৯০
ব্যাংকক
১৯৮৭
ঢাকা
১৯৮৫
কলকাতা
১৯৮৩-৮৪
স্টপ করে দিয়েছেন?
স্টপ করিনি। তবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

শুনি আপনি ভীষণ ব্যস্ত। উইকলি ডায়েরিটা দিন তো।
উইকলি ডায়েরি খুব সহজ। শুক্র-শনিবার দুপুর দু’টো অবধি কাজ করি। রোববার কাজ করি না। এই তিনটে দিন কিছু কিছু করে ফ্যামিলি টাইম। বাকি চারদিন ভরপুর কাজ।

আপনার শ্বশুরমশাই যখন মারা গেলেন...
হ্যা।ঁ উফফফফফফফ... এই কে আছ আর একটা ট্যাবলেট দাও। আর পারছি না (যন্ত্রণাকাতর অক্ষয় ছটফট করতে করতে ঘুরে গেলেন)।
বাট আপনি গো অ্যাহেড। প্রশ্ন করে যান।

রাজেশ খন্না মারা যাওয়ার পর আপনি যেভাবে গোটা ব্যাপারটা সামলেছেন, সেটা সবার খুব প্রশংসনীয় লেগেছে।
এর মধ্যে প্রশংসনীয় লাগার কী আছে? ওঁর কোনও ছেলে নেই। আমাকে তো ছেলের কাজ করতেই হবে। ওটা আমার কর্তব্য ছিল। রাজেশের মতো এত বড় একজন

স্টারের কাছ থেকে কী শিখেছেন?

কী শিখেছি সত্যি বলতে কী ওঁর সঙ্গে আমি ফিল্ম নিয়ে কোনও দিন আলোচনাই করিনি। তাই শেখার সেরকম কোনও সুযোগ ছিল না। যখনই আমাদের দেখা হত, ফিল্মটা ডিসকাশনের বাইরে থাকত। আলোচনায় থাকত শুধুই ফ্যামিলি। ফ্যামিলি। ফ্যামিলি।
আবার ব্যক্তিগত সচিব ঘরে ঢুকেছেন, হাত দিয়ে বলছেন ‘‘আর প্রশ্ন নয়।’’ অক্ষয় তাঁকে বললেন, “না, ওষুধে হবে না। আমার একজন ডাক্তার লাগবে। আমার মনে হচ্ছে কোকিলাবেন হাসপাতালের ওই অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তারকে আমায় দেখাতে হবে। ওই অর্থোপেডিক সার্জনকে। ওঁকে বলো, আমি স্ট্রেট আসছি।”

রাজেশের মৃত্যুটা আপনার কাছে নিশ্চয়ই মর্মান্তিক ধাক্কা হয়ে এসেছিল?
মর্মান্তিক তো বটেই। নিজের শ্বশুরমশাই বলে কথা। প্লাস ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সুপারস্টার। আমার যতটা ক্ষতি, ইন্ডাস্ট্রিরও ততটাই।

‘আশীর্বাদ’ ওঁর বাড়িটা নাকি মিউজিয়াম হয়ে যাচ্ছে?
সে রকম কিছু নয়।

কাগজে যে দেখলাম।
না, না, ওটা পরিবারের জন্যই থাকছে। ওঁর স্ত্রী আর মেয়েদের জন্য।

কুমার বনাম খান। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে মরণপণ যুদ্ধ। রাজত্বলাভের জন্য সেই সংঘাতের কথা ভাবলে কী মনে হয়?
আবার বলি রাইভ্যালরি-টাইভ্যালরি কিছু নেই। যে যার মতো কাজ করে। সারা বছরে বলিউডে প্রায় ১৮০টা ছবি হয়। বড় হিরো বলতে আট থেকে ন’জন। হাতে গোনা। তারা অনেকে আবার বছরে দু’তিনটের বেশি ছবি করে না। তা হলে অঙ্কের হিসেব কী দাঁড়াল? এটাই কি দাঁড়াল না যে, প্রত্যেকের জন্যই ভরপুর কাজ আছে! তা হলে আর রাইভ্যালরি কীসের? রাইভ্যালরি তখনই হতে পারে যদি, সামান্য কয়েকটা স্পটের জন্য প্রচুর লাইন থাকে। এখানে প্রচুর স্পেস। সবার জন্য ভরপেট্টা কাজ।

তা হলে আপনার বলিউড জীবনের মডেল কী দাঁড়াল? কী ভাবে চালাতে হয় নিজেকে?
কিছু কিছু করে তো আগেও বলেছি। মন দিয়ে পরিশ্রম করে যাও। প্রোডিউসার্স বয় থাকতে চেষ্টা করো। কারও মনে আঘাত দিও না। বিতর্ক থেকে দূরে থাকো।

আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়। পার্টিতে যেয়ো না।
হাঃ হাঃ

একটা প্রশ্ন না জিজ্ঞেস করে পারছি না।
বলুন।

যে লোকটা রাত সাড়ে ন’টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। পার্টিতে যায় না। তার সঙ্গে মহিলারা ডেট করত কী করে? নায়িকারা কি তা হলে লং ড্রাইভে যেত ভোর রাতে (প্রশ্নের সোসর্, অক্ষয়েরই ঘনিষ্ঠ শিবির)?
অ্যাঁ। ডার্লিং, এটা আমার পার্সোনাল লাইফ। ঠিক আছে? তার মধ্যে না ঢোকাই কি ভাল নয়?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.