জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য মাওবাদী প্রভাবিত বলরামপুরে সারদা গোষ্ঠী এক সময় চালু করেছিল ‘মেডিকেয়ার ইউনিট’। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন নিজেও ওই বাড়ি দেখে গিয়েছিলেন। যে লজে ওই ইউনিটটি চালু হয়েছিল, সারদা-কাণ্ডের পরে সেটির মালিক পড়েছেন ফাঁপরে। তিন মাসের ভাড়া মেলেনি। উপরন্তু লজ চত্বর দখল করে রয়েছে সারদার কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স, মোটরবাইক।
এই অবস্থায় সেই লজ খালি করে দেওয়ার বন্দোবস্ত করার জন্য পুরুলিয়ার জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন লজ মালিক দয়াময় হালদার। ওই লজেই রোদ-বৃষ্টির মধ্যে সারদার একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে থাকার খবর পেয়েও জেলা পুলিশ এখনও সেগুলি বাজেয়াপ্ত না করায় প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। লজের মালিক তাই কলকাতায় গিয়ে শ্যামল সেন কমিটির কাছেও পুরো বিষয়টি জানিয়ে লজ খালি করার আবেদন রেখেছেন। |
বলরামপুরের স্টেশন রোডে দয়াময়বাবুর দোতলা ওই লজে ২০১১ সালের অগস্ট মাসে চালু হয় সারদার ‘মেডিকেয়ার ইউনিট’। দয়াময়বাবু জানান, সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর তথা দুর্গাপুর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত মনোজকুমার নেগেল (এখন পুলিশের জালে) তাঁর সঙ্গে লজ ও গ্যারাজের ভাড়া বাবদ মাসিক ৫০ হাজার টাকার চুক্তি করেছিলেন। অ্যাম্বুল্যান্সগুলি ‘মোবাইল মেডিকেয়ার ইউনিট’, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’-সহ নানা নামে চিহ্নিত ছিল। বাইরে থেকে চিকিৎসকদের এনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করানো হত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, ইদানীং গ্রামে গ্রামে রোগী দেখতে যাওয়া কমে গিয়েছিল। তার বদলে অল্প টাকার টিকিট করিয়ে বলরামপুরের ওই লজেই রোগী দেখা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, তার আগেই ২০ এপ্রিল অফিসের কর্মীরা চলে যান। দয়াময়বাবু বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভাড়া বকেয়া রয়েছে। ইতিমধ্যে ২১ হাজার ৪০০ টাকা বিদ্যুতের বিলও আমাকেই মেটাতে হয়েছে। আরও বিল আসছে বলে শুনেছি। কর্মীরা সকলেই ছিলেন বহিরাগত। এখন ওই খেসারতের টাকা কার কাছে চাইব?” বেতন বকেয়া অফিসের রাঁধুনি ও রক্ষীদেরও। রাঁধুনি তারাপদ লাহা বলেন, “মাসে ৫০০০ টাকা পেতাম। তিন মাসের টাকা পাওনা রয়েছে।” দয়াময়বাবু বলেন, “এখনও ছ’টি অ্যাম্বুল্যান্স, দু’টি মোটরবাইক, একটি এক্স-রে মেশিন, একটি ডেন্টাল চেয়ার, কিছু যন্ত্রপাতি আর কিছু ওষুধপত্র পড়ে রয়েছে। শ্যামল সেন কমিটিকে লিখিত ভাবে সব জানিয়েছি। বিধাননগর থানাতেও মৌখিক ভাবে জানিয়ে এসেছি। প্রশাসন বাড়ি খালি করে দিলে নতুন করে ফের ব্যবসা শুরু করব।”
লজ খালি করার আর্জি জানিয়ে দয়াময়বাবু গত ৩০ এপ্রিল জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি অবশ্য বলেন, “ওই চিঠি পাইনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সারদার ওই সম্পত্তি নিয়ে নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেব।” পুলিশ সুপার সি সুধাকরও বলেন, “নির্দেশ পেলেই কাজ করা হবে।”
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ যখন সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে, পুরুলিয়া জেলা পুলিশ কেন চুপ করে বসে রয়েছে? এই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। জেলার একাধিক পুলিশ কর্তাই বলছেন, “স্থানীয় থানা ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার কেন নির্দেশ দিচ্ছেন না, বুঝতে পারছি না।” বলরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর মন্তব্য, “ভাল করে খোঁজ না নিয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলব না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ বলেন, “সারদা গোষ্ঠীর সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবি তুলেছি আমরা। অথচ পুলিশ বলরামপুরে সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে না? এতে প্রশাসনের মনোভাব নিয়েই সন্দেহ জাগছে।”
পিছিয়ে পড়া এই জেলার মানুষের আরও প্রশ্ন, এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি পুলিশ দ্রুত বাজেয়াপ্ত করে তা জেলারই স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে লাগাতে পারে। পুলিশ কেন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না, ক্ষোভ তাঁদের। |