পরিবর্তন কই, ভরসা রেখেও প্রশ্ন মমতাকে
তাঁর কাছে দিনটা ঐতিহাসিক। বাংলার মা-মাটি-মানুষকে সেলাম জানিয়ে তাই জনতাকেই দিনটা উৎসর্গ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দু’বছর পূর্তির সেই বার্তার প্রত্যুত্তরে শুভেচ্ছার পাশাপাশি একগুচ্ছ প্রশ্নও তাঁর জন্য রেখে গেল বাংলার ফেসবুক-জনতা!
দু’বছর আগের ১৩ মে পরিবর্তনের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল বাংলা। সেই দিনটিকেই মমতা স্মরণ করতে চেয়েছেন তাঁর ফেসবুক-বার্তায়। আর তাঁর গুণমুগ্ধ হয়েও সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জনতা পরিবর্তনের কাণ্ডারীকে স্মরণ করাতে চেয়েছে, দু’বছরে সত্যিই কি বিরাট কিছু বদলেছে? ভুল থেকে না শিখে, পথ না-শুধরে এই ভাবে চললে আরও তিন বছর পরে রাজ্যের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে, আতঙ্কিত হয়ে ফেসবুক-দেওয়ালে প্রশ্ন লিখে গিয়েছেন আম আদমির কিছু মুখ।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মমতার রাজনৈতিক বিরোধী সিপিএম বা কংগ্রেস যা বলছে, ঠিকই বলছে এমন মন্তব্য কেউ করেননি। নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর তাঁরা চেয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কাছে। দু’বছরে শিল্প কোথায়? প্রশ্ন করেছেন মোতিলাল অগ্রবাল। অশোক মণ্ডল, সঞ্জীব দাস, সুব্রত সিংহ রায়েরা জানতে চেয়েছেন, চাকরি কোথায়? স্কুল সার্ভিস কমিশনের ফলই বা বেরোচ্ছে না কেন? তৃণমূল নেত্রীকে ‘জনগণ-মন-অধিনায়িকা’ বলে সম্বোধন করে তাঁর প্রতি অগাধ ভরসা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। কিন্তু তার মধ্যেই রয়েছে সবিনয় আর্জি মুখ্যমন্ত্রী এখনই সতর্ক হোন। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “মমতা সমালোচনা শুনতে চান না, এমন প্রচার যে ভুল এই ঘটনাই তার প্রমাণ। তিনি নিজেই ফেসবুকে এসে তাঁর কাজকর্ম নিয়ে আলোচনার পথ খুলে দিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয়, আমাদের নেত্রী কতটা স্বচ্ছ।”
মমতা সোমবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দু’বছর আগে, এই ১৩ মে, বাংলার মানুষের বিপুল জনমত বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে ৩৪ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। তাঁদের রায়ের জন্য মানুষকে আমরা সেলাম করি। এই দিনটাকে বাংলার মা-মাটি-মানুষের জন্য উৎসর্গ করছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘বাংলার মা-মাটি-মানুষকে জানাই আমাদের প্রণাম ও সেলাম। সকলে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন’।
জবাবে সঞ্জয় চৌধুরী লিখছেন, ‘বিপুল জনমতের কথা আপনি গর্ব করে বলছেন। কিন্তু এই দু’বছরে আপনি কী করেছেন? সিপিএমের চেয়েও তৃণমূলের সরকার বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দেখা যাচ্ছে! আপনি একনায়কের মতো চলছেন, আপনার সরকার পুরো ব্যর্থ হচ্ছে! ভেবে ভয় পাচ্ছি, বাকি তিন বছরে রাজ্যের প্রতি আপনারা আর কী কী করবেন’! জয়দীপ বিশ্বাসের মতে, ‘শুধু মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে কিছু হবে না। রাজ্যের কথা ভেবে ইতিবাচক কিছু করুন’। সমিত ঘোষ বলেছেন, ‘এই দু’বছরে তো শুধু উৎসব-মেলা নিয়েই পড়ে থাকলেন! পারলে আমাদের অবস্থাটা একটু দেখবেন’।
এর উল্টো মতও আছে। যেমন, জয়ন্ত কর বলেছেন, ‘দু’বছর আগে বাংলার মানুষ ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। সাধারণ মানুষের নেত্রী আপনাকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিল মানুষ। আপনার জন্য শুভেচ্ছা থাকল’। প্রশান্ত দাস লিখেছেন, ‘দিদি, আমার বিশ্বাস, আপনার স্পর্শে যে কোনও জিনিস সোনা হয়ে যায়। আগামী দিনে এই বাংলাতেও সোনা-রুপো বিরাজ করবে’! সায়ক সেনের মন্তব্য, ‘অনেক ধন্যবাদ সিপিএমের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচানোর জন্য! তবে প্লিজ একটু সাবধানে পা ফেলুন। সাবধানে কথা বলুন। কারণ, মিডিয়া এখন আপনার সব কিছুতে খুঁত বার করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে’!
এই দুই মেরুর মতের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে সুরিয়া সেনের মতো কেউ মনে করেছেন, ‘হাতি তার নিজের শরীরটা দেখতে পায় না। যে বা যারা নিজের ভুল বিশ্লেষণ করে না... তৃণমূল এবং সিপিএম একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ! সব চাঁদাবাজ’!
কোনও তুলনায় না-গিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। প্রসেনজিৎ গড়াইয়ের প্রশ্ন, ‘দিদি। আপনি কি পঞ্চায়েত ভোট করতে ভয় পাচ্ছেন’? সৌম্য দে-র প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর চার পাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘যে-ই দোষ করুক, তাকে শাস্তি দিন। নিজের দলের কেউ খারাপ থাকলে প্লিজ তাদের তাড়ান! আমরা পাশে আছি’। ভবতোষ দে-র প্রশ্ন, ‘নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু আদৌ তা থাকছে কি’?
প্রীতম সিংহের মতো কেউ লিখেছেন, মমতার মতো ‘সাধারণ মানুষের নেত্রী’র হাতে যে সরকারের দায়িত্ব, তাদের উপরে ভরসা রাখাই যায়। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে বিবেক রায় লিখেছেন, ‘বেলুড়ের কাছে জি টি রোডে আধ ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে। যুব তৃণমূলের মিছিল (হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে) যাচ্ছে। সব যাত্রীই ভুগছেন। আর আমরা ‘বিপ্লবে’র বর্ষপূর্তি উদযাপন করছি’!
দু’বছরের মাথায় প্রশ্নপত্র দীর্ঘ হচ্ছে পরিবর্তনের কাণ্ডারীর জন্য!

এই দিনটাকে বাংলার মা-মাটি-মানুষের জন্য উৎসর্গ করছি। বাংলার মা-মাটি-মানুষকে জানাই আমাদের প্রণাম ও সেলাম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এই দু’বছরে তো শুধু উৎসব-মেলা নিয়েই পড়ে থাকলেন! পারলে আমাদের অবস্থাটা একটু দেখবেন।
সমিত ঘোষ
তৃণমূল এবং সিপিএম একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। সব চাঁদাবাজ।
সুরিয়া সেন
মমতার মতো সাধারণ মানুষের নেত্রীর হাতে যে সরকারের দায়িত্ব, তাদের উপরে ভরসা রাখাই যায়।
প্রীতম সিংহ

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.