পঞ্চায়েত মামলায় মিলল না স্থগিতাদেশ
য়ের দু’বছর পূর্ণ হওয়ার দিনেই হাইকোর্টে জোড়া ধাক্কা।
২০১১ সালের ১৩ মে বাম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তারই দ্বিতীয় বার্ষিকী ছিল সোমবার। সে দিনই পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশে চেয়ে রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। এই যদি প্রথম ধাক্কা হয়, তা হলে দ্বিতীয়টি এল ধনেখালি কাণ্ডে। সেখানে লক আপে তৃণমূল কর্মী কাজী নাসিরুদ্দিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের ভার সিআইডি-র হাত থেকে নিয়ে সিবিআই-কে দিল হাইকোর্ট। আজ, মঙ্গলবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার ভাগ্য নির্ণয় হতে চলেছে হাইকোর্টে। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে যে জনস্বার্থের মামলা হয়েছিল, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট তার রায় দিতে পারে। পাশাপাশি, মঙ্গলবারই পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাটিরও নিষ্পত্তি করতে পারে ডিভিশন বেঞ্চ।
শুক্রবার পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় হার হয় রাজ্য সরকারের। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনেরই। রাজ্য সরকার যাতে তাদের সব রকমের সাহায্য করে, সেই নির্দেশও দেন বিচারপতি। এই রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে এ দিন প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে রাজ্য। সেই আর্জি মানেনি ডিভিশন বেঞ্চ।
রবিবারেই পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জুন মাসে বর্ষা এসে যাবে। চলবে পুজো পর্যন্ত। তাই পুজোর পরেই তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে চান। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট চায়। জুনে বেশিরভাগ পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আইনজীবী মহলের ব্যাখ্যা, ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন যা বলেছে তার অর্থ, বিচারপতি সমাদ্দারের মতো তারাও জুনের মধ্যেই ভোট চায়।
সুব্রতবাবু কিন্তু মনে করেন, “আদালত এ দিন যে পদক্ষেপ করেছে, তা স্থগিতাদেশ পাওয়ারই সামিল। আদালত মঙ্গলবার তাদের রায় জানিয়ে দেবে। তার পরে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।” মহাকরণ সূত্রের খবর, ডিভিশন বেঞ্চের রায় মনোমতো না হলে সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেরই একাধিক রায় রয়েছে। তাই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গেলে তাদের অনুকূলেই রায় যেতে পারে বলে কমিশনের সূত্রটি আশা প্রকাশ করেছেন।
পঞ্চায়েত মামলার পাশাপাশি ধনেখালি থানায় পুলিশি হেফাজতে তৃণমূল কর্মী কাজী নাসিরুদ্দিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে সিআইডি-র নিরপেক্ষতা নিয়েও কড়া মন্তব্য করেছে বেঞ্চ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি বলে মন্তব্য করেছে। সেই মন্তব্যকে অস্ত্র করে এর মধ্যেই সিবিআইয়ের বিরোধিতা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডি-র নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় রাজ্য নিজেই কিছুটা ব্যাকফুটে বলে মনে করছে আইনজীবীদের একটি অংশ।
তবে অনেকেই মনে করছেন, এ দিন হাইকোর্টে রাজ্য সব চেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তাদের স্থগিতাদেশের আর্জি বাতিল হওয়ায়। রাজ্যের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের দায়ের করা আপিল মামলার শুনানির সময় বারবার জানিয়ে দেয়, পঞ্চায়েত ভোট যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে হয়, সে জন্য হাইকোর্টও আগ্রহী। প্রধান বিচারপতি দু’পক্ষকেই বলেন, “যথাসময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার জন্য তারা হাইকোর্টকে সহায়তা করুক।” শুনানি দীর্ঘায়িত না করে আজ, মঙ্গলবার মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই তা শেষ করতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ। আজ, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টায় ওই মামলার শুনানি হবে।
এ দিন কমিশনের দু’টি দাবির ব্যাপারে সরকারের তরফে সওয়াল করেন বিমলবাবু। তিনি বলেন, কমিশন চারশো পর্যবেক্ষকের নাম পাঠাতে বলেছে। আইএএস, ডব্লিউবিসিএস (ডেপুটি সেক্রেটারি পদমর্যাদার) অফিসার চাওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ২৬৬ জনের নাম পাঠিয়েছে। চারশো নাম পাঠানোর মতো অবস্থায় রাজ্য সরকার নেই। কমিশন যদি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার অফিসার নিতে রাজি থাকে, তা হলে রাজ্য সরকার অবিলম্বে বাকি নাম পাঠাতে পারে।
এর পরে বিমলবাবুর বক্তব্য, রাজ্য সরকার প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ দিতে রাজি। কমিশন চাইছে প্রতি বুথে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ। এর আগে দু’টি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার প্রয়োজন হয়নি। তা হলে এ বার হবে কেন? কমিশন যে আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে, তার ভিত্তি কী, তা-ও রাজ্য সরকার জানে না।
প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের কাছে জানতে চান, রাজ্যে উপদ্রুত এলাকা কোথায় কোথায়? অতি-স্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর ও স্বাভাবিক এমন বুথের সংখ্যাই বা কত? মঙ্গলবার কমিশন তা জানাবে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বক্তব্য, উপদ্রুত জেলা এবং শান্তিপূর্ণ জেলা, সর্বত্রই প্রতি বুথে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে এমন ভাবনার মধ্যে কিছুটা অসঙ্গতি রয়েছে।
পাল্টা সওয়ালে সমরাদিত্যবাবু বলেন, কমিশন হঠাৎ করেই আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইল, এমন ভাবার কারণ নেই। বেশ কয়েক দফায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলে, আগের নির্বাচন ও আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখেই এই সংখ্যা স্থির করা হয়। রাজ্যের এজি-র কাছে প্রধান বিচারপতি জানাতে চান, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল? এজি মঙ্গলবার হাইকোর্টকে তা জানাবেন।
এই সময় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী প্রশ্ন করেন, রাজ্য সরকার ও কমিশন দু’পক্ষই যদি ভোট করতে চায়, তা হলে সমস্যাটা কোথায়? ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন দু’পক্ষকেই বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোনোর পরামর্শ দেয়। তাদের আরও বক্তব্য, সাংবিধানিক পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে এবং সময়ে ভোট করতে হবে। ডিভিশন বেঞ্চের ধারণা, নিরাপত্তারক্ষীর চাহিদা ও জোগানের সমস্যা মেটানো খুব কঠিন নয়। তারা দু’পক্ষকেই এ দিন জানিয়ে দেয়, মঙ্গলবার সম্ভব হলে শুনানি শেষ করা হোক। তা হলে দ্রুত রায় দেওয়া সম্ভব হবে। সংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি বলেন, ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাই সিঙ্গল বেঞ্চ শনিবার কমিশনকে পর্যবেক্ষকদের তালিকা ও নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা জানিয়ে দেওয়ার যে নির্দেশ রাজ্য সরকারকে দিয়েছিল, তা না মানায় আদালতের অবমাননা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চের কাছে এই বিষয়টিও উল্লেখ করবে কমিশন।

হাইকোর্টের ধাক্কা
সিবিআই
দাবিতে আরও
• বর্ধমানে প্রদীপ তা খুন
• বালির তপন দত্ত খুন
• সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু
• সারদা-কাণ্ড

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.