|
|
|
|
কর্মীদের দুষছেন সারদা-কর্তা |
জেরার জালে এ বার এল বাম জমানাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদের পর এ বার সারদা-কাণ্ডে জেরার মুখে পড়লেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক এবং হিডকোর প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক।
পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের আপ্ত সহায়ক গণেশ দে সারদা-ঘনিষ্ঠতার কথা কার্যত স্বীকার করেছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, শাসকদলের বদান্যতা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি সারদা-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছিলেন। একই অভিযোগ হিডকো-র প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক অঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও। জেরা করা হয়েছে ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষকেও। এ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন সারদা গোষ্ঠীর হিন্দি দৈনিকের শিলিগুড়ির রেসিডেন্ট এডিটর রবিশঙ্কর সিংহ।
তদন্তকারীদের দাবি: সারদা-কর্ণধার জেরার মুখে বাম আমলে সরকারি সুবিধা নেওয়ার কথা কবুল করেছেন। উঠে এসেছিল এক প্রভাবশালী সিপিএম নেতার নাম-ও। আর সেই সূত্রেই গণেশবাবু ও অঞ্জনবাবুর কথা বলেন তিনি। অভিযোগ: এঁরা দু’জনেই সরকারি ও শাসকদলের বদান্যতা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সুদীপ্তের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়েছিলেন। বুধবার দু’জনকে ডেকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ পরে বলেন, “কিছু তথ্য মিলেছে।” এ দিন রাতে গণেশবাবুকে ফের জেরা করা হয়।
রাতেই ইস্টবেঙ্গল-কর্তা দেবব্রত সরকার (নিতু)-কে ডেকে পাঠায় পুলিশ। তাঁর সঙ্গে কমিশনারেট অফিসে আসেন আর এক কর্তা সন্তোষ ভট্টাচার্যও। সুদীপ্ত সেনকে আগে চিনতেন না বলে দাবি করেন দেবব্রতবাবু। জেরার পরে তিনি জানান, সুদীপ্ত এক সময়ে ক্লাবকে স্পনসর করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। ক্লাব প্রধান হিসেবে তাঁর সঙ্গেই সুদীপ্তর চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি মাফিক পুরো টাকাও এখনও মেলেনি বলে দাবি দেবব্রতবাবুর।
জেরার মুখে সুদীপ্ত সেন তাঁর ব্যবসার পতনের জন্য সংস্থার ‘ব্যাক অফিস’-এর কর্মীদেরও দায়ী করেছেন বলে পুলিশ-সূত্রের খবর। তাঁর অভিযোগ, ওই কর্মীরা ঠিকঠাক নজর না-রাখায় বহু ভুয়ো পলিসি তৈরি হয়েছিল। বারুইপুরের অফিস থেকে সারদার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সেখানে কাজ সামলাতেন অরিন্দম দাস ও সত্যজিৎ বসু নামে দু’জন, কারচুপির জন্য যাঁদের দিকে আঙুল তুলেছেন সুদীপ্ত। তিনি ব্যবস্থা নেননি কেন?
তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, সে ক্ষেত্রে ব্যবসা আরও আগে ভেঙে পড়ত বলে সারদা-কর্ণধার আশঙ্কা করছিলেন। অরিন্দম-সত্যজিৎ তাঁকে খুনের হুমকিও দিয়েছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। বস্তুত গত এপ্রিলে তৈরি সারদার প্রায় ১৫ কোটি টাকার পলিসির বড় অংশই ভুয়ো বলে পুলিশও সন্দেহ করছে, কারণ এর অধিকাংশ তৈরি হয়েছে সংস্থা বন্ধ হওয়ার পরে। অরিন্দম ও সত্যজিৎ এখন ফেরার বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সারদা-কাণ্ডে অডিট-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলছেন গোয়েন্দারা। ঘটনাচক্রে এ দিনই দিল্লি থেকে ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস-এর দশ সদস্যের একটি দল কলকাতায় আসে। ইনস্টিটিউটের তরফে সুবোধকুমার অগ্রবাল জানান, সারদার অডিট কারা করেছিলেন, তা পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তালিকা ধরে ওই সব অডিটরদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। কোনও গলদ মিললে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইনস্টিটিউট।
তদন্তে সারদা-কর্ণধারের ‘মহিলা ব্রিগেড’ সম্পর্কেও একের পর এক তথ্য মিলছে। পুলিশ-সূত্রের খবর: সারদার টাকা লেনদেনের খবর রাখতেন দেবযানী ছাড়া সংস্থার আরও দুই মহিলা। সংবাদমাধ্যমের ব্যবসা ছিল বারাসতের বাসিন্দা এক মহিলা কর্মীর দায়িত্বে। মিডল্যান্ড পার্কে রাতে কর্মরত মহিলা ব্রিগেড সামলাতেন এক মহিলা। সারদার ডিএন-২৯ অফিসের দায়িত্বে থাকা মহিলার সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের সেক্রেটারি সেই পৌলমী সেনকে এ দিন রাত পর্যন্ত জেরা করেন তদন্তকারীরা। মহিলা ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান মনিরত্না রায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। পুলিশ জানাচ্ছে, সারদার শীর্ষ পদে থাকা মহিলারা প্রায় সবাই গত এক বছরে উল্কার গতিতে উঠে এসেছেন। যেমন, রেশমি লাহিড়ি। রিসেপশনিস্ট হিসেবে ঢোকার বছরখানেকের মধ্যে তিনি সারদা ভ্রমণসংস্থার প্রধান হয়ে যান। তিনি-ই সুদীপ্তের হয়ে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসা দেখতেন। সারদার ব্যাঙ্কিং ডেস্কের প্রধান শতাব্দী ও অ্যাকাউন্টসের প্রধান আমরিন নামে দুই মহিলার সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। এঁরাই সংস্থার সব লেনদেনের কথা জানতেন বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ-সূত্রের খবর, বুধবার রাতে বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) দুই সদস্য এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ এবং ডিআইজি (সিআইডি) বিনীত গোয়েল সুদীপ্তবাবুদের জেরা করেন। জেরা করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশও। জেলার এএসপি কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ-সহ সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধে ছ’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ-সূত্রের খবর, বারুইপুর মহকুমায় সারদার নামে থাকা ৩৫ বিঘা ও ১৮ বিঘার দু’টি জমির মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।” এ দিনই দুই মহিলার দু’টি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে সারদা-র বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা রজু করে বেহালা থানায় পুলিশ। ৪৫৫ ডায়মন্ডহারবার রোডে সারদার অফিসে অন্তরা চক্রবর্তী নামে এক মহিলা সাত কিস্তিতে ৭৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়, সারদা গার্ডেনে ৩ কাঠা ২ ছটাক জমি দেওয়া হবে। অন্য অভিযোগকারিণী সুলতা সিংহ ৪ কাঠা ১০ ছটাক জমির জন্য একই অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন। কেউই জমি পাননি বলে অভিযোগ। |
|
|
|
|
|