ওয়েম্বলি দেখবে জার্মান-গৃহযুদ্ধ
তিকিতাকা মুছে দিল রামধনু
বায়ার্ন মিউনিখ-৩ : বার্সেলোনা-০
(সব মিলিয়ে বায়ার্ন ৭-০)
রিয়াল মাদ্রিদ-২ : বরুসিয়া-০
(সব মিলিয়ে বরুসিয়া ৪-৩)
‘মেসির বার্সেলোনা বিশ্বের সর্বকালের সেরা টিম!’ মার্সেলো লিপ্পি থেকে অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতো বিদগ্ধ কোচ। ইব্রাহিমোভিচ থেকে রোনাল্ড কোমানের মতো কিংবদন্তি ফুটবলার, সবার এক রা ছিল বুধরাতের আগে পর্যন্ত। বায়ার্ন যে বেলুনকে চুপসে দিল আট দিনের মধ্যে তিকিতাকাকে সাত গোল মেরে। ন্যু কাম্পে ২১ ম্যাচ অপরাজিত বার্সা তিন গোল হজম করছে, মেসি যতই নব্বই মিনিটই রিজার্ভ বেঞ্চে কোচ ভিলানোভার পাশে বসে থাকুন, অবিশ্বাস্য স্কোরলাইন! জার্মান ফুটবলের দুর্দান্ত পরিকাঠামো, অত্যাধুনিক ট্রেনিং, বিভিন্ন দেশের ফুটবল সংস্কৃতির মিলন বায়ার্নের মতো শীর্ষ ক্লাবেএ সব ভাবলে কিন্তু আধাফিট মেসি-সহ বা সম্পূর্ণ মেসি-হীন বার্সার ০-৭ হারটা অলৌকিক দেখাবে না।
যেন ট্রফি জেতাও হয়ে গিয়েছে। বার্সেলোনায় বায়ার্ন-দাপট। ছবি: এএফপি
বিখ্যাত ইংরেজ ফুটবলার-কাম-সাংবাদিক গ্যারি লিনেকার একটা তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। “পঞ্চাশের দশকে অ্যালফ্রেড ডি’স্তেফানো রিয়াল মাদ্রিদের টানা পাঁচ বার ইউরোপিয়ান কাপ জেতা না হয় ছেড়েই দিলাম। ’৭১-৭৩ জোহান ক্রুয়েফের আয়াখসের পরপর তিন বার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা তার ঠিক পরের তিন বছর বেকেনবাউয়ারের বায়ার্নের টানা তিন বার (’৭৪-৭৬) ইউরোপ সেরা হওয়ার পাশে গুয়ার্দিওলা-ভিলানোভার বার্সেলোনার ২০০৮ থেকে পাঁচ মরসুমে দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় আর বাকি তিন বার সেমিফাইনালে হার সত্যিই কতটা উজ্জ্বল?”
বিলার্ডো বলেছেন, “ফুটবল খেলাটাই হয় ট্রফি জেতার জন্য। এখানে সেকেন্ড হওয়া মানেও তুমি পরাজিত। সেটা মানলে বার্সেলোনার তিকিতাকা গত পাঁচ মরসুমে তিন বার শেষ চারে মুখ থুবড়ে পড়ল। কীসের সর্বকালের সেরা তা হলে? আর বার্সাকে সেরা মানতে হলে তো ষাটের দশকে ইউসেবিওর আমলে বেনফিকা-র আট বছরের মধ্যে পাঁচ বার ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনাল খেলে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্সের মধ্যে পড়বে!”
বিরল-মেসি। বায়ার্ন ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে।
বিশ্ব জুড়ে ফুটবল পণ্ডিতদের টুইটারে আছড়ে পড়া বার্সা-হেনস্থার অজস্র ব্যাখ্যার সারমর্ম: মিউনিখে প্রথম লেগে ০-৪ হারার পর ঘরের মাঠে বার্সেলোনা বড্ড তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিয়েছে। মেসিকে ডাগআউটে বসিয়ে রাখার মধ্যেই জাভি-ইনিয়েস্তা-দাভিদ ভিয়া-ফাব্রেগাস-পিকে-পেদ্রো’দের আত্মসমর্পণের স্পষ্ট চিহ্ন ফুটে উঠেছে। অথচ এই মহাতারকারাই স্পেনকে গত পাঁচ বছরে দু’টো ইউরো কাপ আর একটা বিশ্বকাপ দিয়েছেন! তা হলে এঁরা কী করতে ছিলেন বুধরাতের মরণপণ যুদ্ধে? বিশেষজ্ঞদের সমবেত মত, গত চার বারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারকে শুরু থেকে খেলানো উচিত ছিল। বার্সার এটাই মরসুমের শেষ সত্যিকারের বড় ম্যাচ ছিল। লা লিগা তাদের শিবিরে কার্যত ঢুকেই পড়েছে। আর্জেন্তিনাও বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় মেসি বার্সাকে উদ্ধার করতে গিয়ে চোট পেলেও সেরে ওঠার প্রচুর সময় হাতে পেতেন। যেটা কোটি ইউরোর পেশাদার ফুটবলে এক জন অন্যতম হায়েস্ট পেড প্লেয়ারের কাছে কাম্য।
রবেনের শরীরী ভাষায় ফাইনালের হুঙ্কার। ছবি: এএফপি
রিয়ালকে জেতাতে না পারলেও আধাফিট রোনাল্ডো সারাক্ষণ মাঠে ছিলেন। তাঁর দিকে বাড়তি নজর রাখতে গিয়েই বের্নাবৌতে বেঞ্জিমা, সের্জিও র্যামোসের গোলে প্রায় ছিটকে যাচ্ছিল প্রথম লেগে ৪-১ জেতা বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। কিন্তু মেসি-হীন বার্সা ঘরের মাঠে ৯০ মিনিটে এক বার জাভির শট নয়্যারের প্রতিরোধ আর এক বার ক্রসবারের উপর দিয়ে দাভিদ ভিয়ার হেড ছাড়া গোলের মুখ খুলতেই পারেনি। উলটে শেষ ৪৫ মিনিটে রবেন, পিকে (আত্মঘাতী) এবং মুলারের গোলে মুছে গিয়েছে।
বায়ার্নে ব্রাজিল থেকে শুরু করে ইউক্রেন। ফ্রান্স থেকে ক্রোয়েশিয়া। ডাচ থেকে সুইস৭/৮ দেশের ফুটবলারে ভর্তি। যে জন্য নাম ‘রেনবো টিম’। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলেও রামধনুর সাত রঙের ছ’টা। যার ঔজ্জ্বলে তিকিতাকা একদম ম্লান।

শত্রু শিবিরের দিকে পা বাড়িয়ে লেওয়ানডস্কি
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব আর বায়ার্ন মিউনিখের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আর বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সেই রবার্ট লেওয়ানডস্কিই কিনা ফাইনালের আগে বায়ার্নে যাওয়ার ব্যাপারে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন! তাঁর সতীর্থ মারিও গোটজে পরের মরসুমে বায়ার্ন জার্সি পরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে রিয়ালের বিরুদ্ধে চার গোল করার পর ইউরোপ জুড়ে সারা ফেলে দেন ২৪ বছরের লেওয়ানডস্কি। এই পোলিশ স্ট্রাইকারকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আনার জন্য সর্বশক্তি লাগিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কোচ স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন। কিন্তু ছবিটা বদলে গিয়েছে। ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বায়ার্নেই সই করার কথা বলছেন লেওয়ানডস্কি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের মতে বায়ার্নের সঙ্গে নাকি প্রাথমিক কথা সেরে নিয়েছেন পোলিশ স্ট্রাইকারের এজেন্ট। এমনকী জার্মান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তিতেও নাকি ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছেন লেওয়ানডস্কি। যাঁকে বায়ার্নে বিক্রি করতে অনিচ্ছুক কোচ যুরগেন ক্লপ। কিন্তু আর এক বছর পর লেওয়ানডস্কি ‘ফ্রি এজেন্ট’ হয়ে যাবেন বলে তাঁকে বিক্রি করতে বাধ্য হতে পারে বরুসিয়া।

পুরনো খবর:

মেসির বার্সা যুগ (২০০৪-১৩)
’০৪-০৫ (১) লা লিগা
’০৫-০৬ (৩) লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
’০৬-০৭ (১) স্প্যানিশ সুপার কাপ
’০৭-০৮ (০) ট্রফিহীন
’০৮-০৯ (৩) লা লিগা, স্প্যানিশ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
’০৯-১০ (৪) লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ
’১০-১১ (৩) লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
’১১-১২ (৪) স্প্যানিশ কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ
’১২-১৩ (০) এখনও ট্রফি নেই
 
তিতো ভিলানোভা: মেসির চোট ছিল না। তবে ওকে পরিবর্ত নামিয়েও হ্যামস্ট্রিংয়ে ফের চোট লাগার ঝুঁকি নিইনি। ওর ভবিষ্যৎ ফুটবলজীবনের কথা ভেবে। মেসি ছাড়া বার্সা কম ব্যবধানে জিতে এসেছে এত দিন। কিন্তু এ মরসুমে আমরা ৫-০, ৩-০ জিতেছি মেসি না খেলা সত্ত্বেও।
জেরার্ড পিকে: আমি মনে করি না মেসি থাকলেও বুধবার বায়ার্ন ম্যাচের রেজাল্টে কোনও তারতম্য ঘটত।
গ্যারি লিনেকার: বার্সা-যুগের শেষের শুরু আর বায়ার্ন-যুগ শুরুর প্রক্রিয়ার শেষ দেখলাম।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা: বার্সার গড়পরতা খেলাটাও আমরা খেলতে পারিনি, এটাই মনকে বারবার কামড়াচ্ছে।
জাভি: বার্সেলোনায় এটাই সম্ভবত আমার সবচেয়ে তিতকুটে রাত।
বরিস বেকার: ম্যাচটা দেখে মনে হচ্ছিল, অতীত বিদায় নিচ্ছে আর ভবিষ্যৎ যেন খেলছে ।
আর্জেন রবেন: সে-ভে-ন নিল!! ইতিহাস! তবে আমাদের টিমের এত দক্ষতা যে, এ রকম স্কোরলাইন হওয়া আর এ ভাবে জিততেই পারি।
জুপ হেইনকেস: আমরা আগাগোড়া দুর্ধর্ষ খেলেছি। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, মেসি-হীন বার্সেলোনা অন্য টিম!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.