বের্নাবৌতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ন্যু কাম্পে লিও মেসি। জার্মান বম্বিং-এ বিধ্বস্ত স্প্যানিশ ফুটবল ঘরের মাঠে প্রাণ ফিরে পেতে পর্তুগিজের মতোই আর্জেন্তিনীয় মহাতারকার দিকেও তাকিয়ে। বার্সেলোনাকে যদি বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে প্রথম লেগের ০-৪-এর লজ্জা থেকে উদ্ধার করে ফিরতি ম্যাচে ন্যূনতম ৫-০ জিতিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কেউ তুলতে পারেন, তিনি হলেন এল এম টেন!
কিন্তু মেসি যতটা আশা, ততটাই আশঙ্কা বুধবারের মহাম্যাচে। স্বয়ং বার্সা কোচ ভিলানোভা স্বীকার করছেন, “চার গোলের ব্যবধান মুছে আমাদের ফাইনালে ওঠা নির্ভর করছে মেসির ফিটনেসের উপর।।” সহকারী কোচ ইয়র্দি রৌরা যোগ করেছেন, “হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে মেসি উন্নতি করছে। আশা করছি ফিরতি ম্যাচে সেরা ফর্মের লিওকে দেখা যাবে।” যার মানে, মেসি এখনও পুরো ফিট নন। পাশাপাশি তিন দিন আগেই লা লিগায় অ্যাথলেটিক বিলবাও ম্যাচে পরিবর্ত নেমে মেসির বিপক্ষের চার-পাঁচ জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একক দক্ষতায় গোল করা দেখে মেসিভক্তরা আশাবাদী, ‘বার্সার ভগবান’ স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। |
বায়ার্ন-সেনা। মার্টিনেজ ও মুলার। |
আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় বিরাট কোনও পরিবর্তন না ঘটলে মেসি প্রথম থেকেই খেলবেন। যার জন্যই চার গোলে এগিয়ে থেকে অ্যাওয়ে ম্যাচে নামার আগেও বায়ার্ন শিবির গুটিয়ে আছে। গোলকিপার নয়্যার থেকে শুরু করে উইঙ্গার রবেন। কোচ হেইনকেস থেকে শুরু করে জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাউয়ার, সবাই সতর্ক। নয়্যার: বার্সা ওদের ঘরের মাঠে সাংঘাতিক চাপ তৈরি করবে। রবেন: চার গোলের ব্যবধান মুছে ফেলার ক্ষমতা বার্সার আছে। হেইনকেস: আমাদের প্রথম দলের ছ’জন ফুটবলার আর একটা হলুদ কার্ড দেখলে ফাইনাল খেলতে পারবে না। তা-ও বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। নইলে আমাদের গাড়ি থেমে যেতে পারে। আর বার্সেলোনায় এসে বায়ার্নের গাড়ি আটকে যাক চাই না। আক্রমণাত্মকই খেলব। বেকেনবাউয়ার: ঘরের মাঠে বার্সেলোনা বেশি গোল করার জন্য যত রকম কায়দা আছে সব নেবে। যা শুনে বার্সা শিবির ক্ষিপ্ত। বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। |
মেসি বনাম জার্মানি |
• চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জার্মান ক্লাবের বিরুদ্ধে মেসির মোট গোল ১২
|
|
• বনাম লেভারকুসেন ৬ গোল (’১১-১২ প্রি কোয়ার্টারে অ্যাওয়ে ম্যাচে ১, হোমে ৫)
|
• বনাম স্টুটগার্ট ৩ গোল
(’০৭-০৮ গ্রুপ ম্যাচে ১, ’০৯-১০ অ্যাওয়ে প্রি-কোয়ার্টারে ২)
|
• বনাম বায়ার্ন মিউনিখ ২ (’০৮-০৯ অ্যাওয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ২)
|
• বনাম ওয়ের্ডার ব্রেমেন ১ (’০৫-০৬ গ্রুপ ম্যাচে ১)
|
|
অধিনায়ক লাম ছাড়াও দাতে, সোয়াইনস্টাইগার, জাভি মার্টিনেজ, গোমেজ, গুস্তাভোর ২৫ মে ওয়েম্বলির ফাইনালে সাসপেন্ড থাকা একটা কার্ড দূরে। তবু বার্সার চেয়ে বায়ার্ন ড্রেসিংরুমে সমস্যা কম। টনি ক্রুজ ছাড়া কারও চোট নেই। বরং ফর্মে থাকা মান্ডজুকিচের সাসপেনশন উঠে গিয়েছে। অন্য দিকে, বার্সার ইয়র্দি আলবা সাসপেন্ড থাকায় সেন্ট্রাল ডিফেন্সে পিকে-র সতীর্থ কে হবেন তা নিয়ে বার্সা কোচ অস্বস্তিতে। সদ্য ট্রেনিংয়ে ফেরা মাসচেরানোকে শুরুতে নামানো প্রবল ঝুঁকি হতে পারে। পিকে-র পাশে ক্যানসারজয়ী আবিদাল অথবা অ্যালেক্স সং খেলতে পারেন। কিন্তু বার্সার ডিফেন্স-সমস্যা নিয়ে আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।
তা সত্ত্বেও দুটো অতীত নজির বার্সাকে অলৌকিক ঘটানোর ব্যাপারে সাহস দিতে পারে। ’৮৫-৮৬ উয়েফা কাপে রিয়াল মাদ্রিদকে হোম ম্যাচে ৫-১ গোলে উড়িয়ে বরুসিয়া মোনসেনগ্ল্যাডব্যাক স্পেনে গিয়ে নিজেরা ০-৪ দুরমুশ হয়। সেই জার্মান ক্লাবের কোচ ছিলেন বায়ার্নের বর্তমান বস হেইনকেস। যিনি বলছেন, “আমার জীবনের জঘন্যতম মুহূর্ত ছিল সেটা। কোচিং ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম।” কোচিং না ছাড়ুন, স্পেনে গিয়ে অবচেতনে সেই দুঃস্বপ্ন কি তাড়া করবে না? অন্যটা, দশ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের কাছে ১-৪ হারার পর ঘরের মাঠে ৪-০ জিতে আর এক স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভো-র অলৌকিক কাণ্ড। যে ম্যাচের পাঁচ মিনিটে প্রথম গোল করা ওয়াল্টার ‘দ্য রাইফেল’ পান্দিয়ানি এ দিন বলেছেন, “মেসিও গোড়ার দিকে গোল পেয়ে গেলে উজ্জীবিত বার্সাও অলৌকিক ঘটাতে পারে।”
|