সম্পাদকীয় ২...
পশ্চিমবঙ্গ শিখিবে কি
ত পাঁচ মাসের মধ্যে তিন-তিন বার বিষম দুর্ঘটনা, তাহার মধ্যে তৃতীয়টি ভয়ঙ্করতম। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প-কারখানা লইয়া নূতন করিয়া ভাবনা প্রয়োজন। শেষ ঘটনাটিতে বিশাল বহুতল বাড়ি ভাঙিয়া পড়িয়া কত শত মানুষ নিহত হইলেন, এবং কত শত মানুষ গুরুতর আঘাত ও অঙ্গহানি লইয়া বাঁচিয়া গেলেন, তাহার যথাযথ হিসাব এখনও মিলে নাই, মিলিবে বলিয়া মনেও হয় না। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষে এই বিপুল ধ্বংসস্তূপ হইতে সব দেহ কিংবা দেহাংশ উদ্ধার করা অসম্ভব, অথচ তাহার মধ্যেই শুরু হইয়াছে ক্ষতিপূরণের চমত্‌কারী প্রতিশ্রুতি। এমনকী যে বিদেশি কোম্পানিগুলির শ্রম-কারখানা হিসাবে বাংলাদেশের এই বস্ত্রশিল্প-গুমটিগুলি চালিত হয়, ক্রয়মূল্য ন্যূনতম রাখিবার হুমকি ছাড়া যাহাদের সহিত এই শ্রম-কারখানার বিশেষ সংযোগ আছে বলিয়া মনে হয় না, তাহাদেরও অনেকে ক্ষতিপূরণের কথা বলিতেছে। এত দিন তাহারা এই সব শ্রম-কারখানার অমানবিক অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনও প্রকার অবধান কিংবা কৌতূহল পোষণ করিয়াছে বলিয়া শোনা যায় নাই। বিপর্যয় ঘটিলে হয়তো বিবেক জাগ্রত হয়, অথবা কূটবুদ্ধি।
তবে বিদেশি কোম্পানিগুলির দায়দায়িত্ব যতটাই হউক, বিবেকের এবং জনক্ষোভের প্রধান ভার বহন করিতেই হইবে বাংলাদেশ প্রশাসনকে। সে দেশের রফতানি-খাতে উপার্জনের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে এই সকল শ্রমনিবিড় কারখানা হইতে। প্রায় ত্রিশ লক্ষ শিল্পশ্রমিক বস্ত্রশিল্প-কারখানাগুলিতে কাজ করিয়া থাকে, তাহার মধ্যে নব্বই শতাংশ নারীশ্রমিক বলিয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাহবাও পায়। অথচ সরকারি কর্তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করিবার দায় বোধ করেন না। বরং সরকারি আনুকূল্যে আইন ফাঁকি দিবার বন্দোবস্ত অবাধে চলিতে থাকে: যেখানে চার তলার বেশি বাড়ি তৈরির কথা নহে, সেখানে আট, দশ, বারো তলা বহুতল বানাইবার স্পর্ধা সরকারি দাক্ষিণ্যেই বিতরিত হয়। অবশ্য এই বার সামান্য ব্যতিক্রম দৃষ্ট হইল। উত্তাল প্রতিবাদের ফলেই হয়তো, শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশ: সরকার যেন সংশ্লিষ্ট বহুতল-মালিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং তাহা হইতে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ দেয়। দৃষ্টান্তযোগ্য শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ, উভয়ই ইহার ফলে সম্ভব।
পশ্চিমবঙ্গেও এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা বহু বার ঘটিয়াছে। বাড়ি ভাঙিয়া পড়াই হউক আর অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনাই হউক, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইবার ফলেই যে সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় নামিয়া আসিয়াছে, তাহা অপ্রকাশিত বা অপ্রমাণিত থাকে নাই। অথচ, পশ্চিমবঙ্গের চিরাচরিত ধারা অনুযায়ী, রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে শাস্তি কিংবা বিহিতব্যবস্থা উভয়ই কালের অতলে হারাইয়াছে। অবৈধ বাড়িসম্পত্তির মালিকরা পূবর্বত্‌ ঔদাসীন্য কিংবা অপরাধপ্রবণতায় নিমজ্জিত থাকিয়াছেন। বাংলাদেশের এই শাস্তিপর্ব পশ্চিমবঙ্গকে কিছু শিখাইবে কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.