পানাগড় বাইপাসে কাজ জুলাইয়ে
জমির জন্য চেক আগামী সপ্তাহেই
তৃণমূল সরকার জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলার পরে রাজ্যে একের পর এক শিল্পপ্রকল্প আটকে গিয়েছে। অথচ প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে যে জমি পাওয়া সহজতর হয়, তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল পানাগড়ে।
বর্ধমানের জেলাশাসক জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে (এনএইচএআই) ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, জমি সংক্রান্ত সমস্যা প্রায় মিটে গিয়েছে। জুনের শেষে এনএইচএআইয়ের হাতে পুরো জমি তুলে দেওয়া হবে। জমির দাম বাবদ প্রথম দফায় ২৮ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের হাতে তুলেও দিয়েছে তারা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই জমিদাতাদের চেক দেওয়া শুরু হবে।
কলকাতা থেকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ও ঝাড়খণ্ড হয়ে সোজা নয়াদিল্লি চলে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়কে বড় কাঁটা পানাগড় বাজারের সাড়ে তিন কিলোমিটার। দু’পাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা সরতে না চাওয়ায় যেখানে আজও রাস্তা দু’লেন থেকে বাড়িয়ে চার লেনের করা যায়নি। প্রায় রোজই যেখানে যানজটে আটকে পড়ে গোটা ট্রাফিক। সেই ফাঁস এড়াতেই ওই জায়গাটুকু এড়িয়ে বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “জুনে এনএইচএআইকে জমি দিয়ে দেওয়া হবে। জুলাই থেকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।” তবে বর্ষা কাটার আগে যে কাজে গতি আসবে না, তা একরকম পরিষ্কার।
এনএইচএআই সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বারোয়া আড্ডা থেকে পানাগড় এই দফায় মোট ১১৪ কিমি রাস্তা ছ’লেনের করার পরিকল্পনা রয়েছে। মোট বাজেট ১৬৬৫ কোটি টাকা। প্রয়োজন প্রায় ১৯৩ একর জমি। এর মধ্যেই পানাগড় বাইপাসের প্রায় ৮ কিলোমিটার ধরা আছে। জাতীয় সড়ক আইন মোতাবেক জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) উৎপল বিশ্বাসকে। সর্বোচ্চ বাজারদর ও তার উপরে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত দর, সেই সঙ্গে ১২ শতাংশ সুদ ধরে জমির দাম নির্ধারিত হয়েছে। তবে কিছু জমি নিয়ে এখনও সামান্য সমস্যা রয়েছে।
পন্ডালি, ধরলা, সোঁয়াই ও কাঁকসা মৌজার যে বাসিন্দাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, দর কষাকষি ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য তাঁরা ‘জমিরক্ষা কমিটি’ গড়েছিলেন। এঁদের বেশির ভাগই জমি দিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন। তবে সোঁয়াই মৌজায় চারশো-পাঁচশো মিটার এলাকার জমি নিয়ে সমস্যা সম্পূর্ণ মেটেনি। জমিরক্ষা কমিটির পক্ষে কিষাণ কর্মকার আবার দাবি করেন, “পন্ডালি মৌজায় চারটি বাড়ির মালিকেরা আরও দাম চান। কাঁকসার মাস্টারপাড়ার বাসিন্দারাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে রাজি নন।”
জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “বাইপাস গড়ার ক্ষেত্রে সোঁয়াইয়ে সামান্য জমি নিয়ে সমস্যা ছিল। তা মেটানোর প্রক্রিয়া চলছে। আর কোথাও কোনও সমস্যা নেই।”
বুধবারই বর্ধমানে এনএইচএআই এবং নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক। তবে কাজ কবে, কোথা থেকে শুরু হবে তা নিয়ে মতান্তর ছিল। এনএইচএআই চেয়েছিল, বর্ষা শেষ হওয়ার পরে অক্টোবরে জেলার পশ্চিম প্রান্তে বরাকর থেকে কাজ শুরু করে পানাগড় পর্যন্ত এগিয়ে আসতে। তাতে সবচেয়ে সমস্যাজনক এলাকায় কাজে হাত দেওয়ার আগে বেশি সময় পাওয়া যেত। ছ’লেনের রাস্তা কেমন হচ্ছে, তা আগেভাগে দেখতে পেলে পানাগড়ের মানুষ বেশি সহযোগিতা করতেন বলেও এনএইচএআই কর্তারা মনে করছিলেন।
কিন্তু জেলাশাসক জুলাইয়েই কাজ শুরুর পক্ষে সওয়াল করেন। তা-ও বরাকর নয়, সরাসরি পানাগড়ের দিক থেকেই। যেখানে এখনও সব জমিমালিকের সম্মতি মেলেনি, এই তাড়াহুড়ো কেন? জেলাশাসকের বক্তব্য, “মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবেই যত দ্রুত সম্ভব পানাগড় বাইপাসের কাজ শুরু করার আর্জি জানানো হয়েছে। পরে বাকি রাস্তা করতে ওঁদের অনুরোধ করেছি। ওঁরা তাতে রাজি হয়েছেন।”
এনএইচএআইয়ের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (দুর্গাপুর) কৃষ্ণ মুরারী বলেন, “জমি পেলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব। পানাগড়ের সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাইপাসের কাজই আগে করা হবে।” তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “বর্ষায় কাজ করার নানা অসুবিধা। আগাম সতর্কতা নিয়ে কিছু হয়তো করা যাবে। পুরোমাত্রায় কাজ শুরু হবে বর্ষার পরেই।” বাইপাসের কাজ শেষ হতে অন্তত বছরখানেক লাগবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.