শেষরাতে বাইপাসে ধর্ষিতা কিশোরী, গ্রেফতার পাঁচ জন
হরে ফের গণধর্ষণের অভিযোগ। এ বারের ঘটনা শিবরাত্রিতে।
অভিযোগ, রবিবার রাত তিনটে নাগাদ পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকায় ই এম বাইপাস লাগোয়া নির্মীয়মাণ একটি বাড়িতে এক নাবালক-সহ পাঁচ দুষ্কৃতী মিলে সতেরো বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুই যুবক পলাতক ছিল। রাতে তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। ধৃত চার যুবকের নাম সুরজিৎ দাস, সন্তু হালদার, রাজেশ হালদার ও প্রীতম নস্কর। মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ প্রথমে ওই কিশোরীর অভিযোগ নিতে চায়নি। সংবাদমাধ্যম থেকে খোঁজখবর শুরুর পরে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ সাবার্বান) সুজয় চন্দ থানায় আসেন এবং তাঁর হস্তক্ষেপে মেয়েটির অভিযোগ নেওয়া হয়। মেয়েটির পুরো বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। লালবাজারের পুলিশকর্তারা প্রথমে অভিযোগ না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ধর্ষণে অভিযুক্তেরা। সোমবার, পূর্ব যাদবপুর থানায়।—নিজস্ব চিত্র
সুজয়বাবু বলেন, “পাঁচ জনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা দায়ের হয়েছে।” শিবরাত্রির জন্য ওই এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা সত্ত্বেও কী করে এই ঘটনা ঘটল? সুজয়বাবু জানান, ঘটনাটি ঘটেছে অন্ধকার, নির্জন একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে। তা সত্ত্বেও, পুলিশি পাহারায় কোনও ফাঁক ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিপিএমের স্থানীয় কাউন্সিলর রুমকি দাস এবং লাগোয়া ওয়ার্ডের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর সুব্রত দাশগুপ্তের অভিযোগ, ওই যুবকেরা সকলেই তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক। তা অস্বীকার করে কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, “অভিযুক্তেরা নিছকই দুষ্কৃতী। আমাদের দলের কেউ নয়।” তিনিও ঘটনার যথাযথ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, মেয়েটির বাবা বিধাননগরের একটি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। মেয়েটির মা পেশায় পরিচারিকা। মেয়েটি বিবাহিতা হলেও স্বামীর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। বাইপাস সংলগ্ন একটি হোটেলের কর্মী ওই মেয়েটি রাতে সেখানেই থাকে। বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় মেয়েটির বাবা একটি ঘর ভাড়া নিয়ে রেখেছেন। মাঝেমধ্যে তিনি সপরিবার সেখানে থাকেন। রবিবার শিবরাত্রি উপলক্ষে মেয়েটি ওই বাড়িতেই ছিল।
পুলিশের কাছে অভিযোগে মেয়েটি জানিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে শিবরাত্রির পুজো দিতে যাওয়ার জন্য প্রতিবেশী একটি মেয়ের সঙ্গে শহিদ স্মৃতি কলোনির একটি পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল সে। ফেরার পথে ওই পাঁচ যুবক তাদের টেনে নির্মীয়মাণ ওই বাড়িতে নিয়ে যায়। প্রতিবেশী মেয়েটি হাত ছাড়িয়ে পালায়। কিন্তু সে পালাতে পারেনি। এর পরেই পাঁচ যুবক মিলে তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ মেয়েটির।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মেয়েটির বান্ধবী পালিয়ে পাড়ার একটি পানের দোকানের মহিলাকে সব কথা জানায়। তিনি স্থানীয় এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছে ওই কিশোরীর নাম ধরে ডাকতে থাকে। লোকজন এসে পড়ায় ওই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই কিশোরী ও তার বান্ধবীর কাছ থেকে অভিযুক্তদের চেহারার বিবরণ জেনে পাড়ার লোকজন এক জনকে ধরে। ওই কিশোরী শনাক্ত করার পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পাড়ার লোকজন মেয়ে দু’টিকে নিয়ে পূর্ব যাদবপুর থানায় পৌঁছয়। মেয়ে দু’টি হঠাৎই থানার ভিতরে চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘ওই ছেলেটাও ছিল।’ থানার এক পুলিশকর্মী পাড়ার লোকজনের মধ্যে থেকে সেই যুবক, সুরজিৎকে আলাদা করে মেয়ে দু’টির সামনে আনেন। মেয়ে দু’টি তাকে শনাক্ত করে। পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করে। কিন্তু অভিযুক্ত বাকি তিন যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় থানায় যান। অভিযুক্তদের রাজনৈতিক রং না দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। থানার বাইরে সিপিএমের সমর্থকেরাও জড়ো হন। তিনি সকলকে সংযত থাকতে বলেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সন্তুকে আটক করেছিল পুলিশ। সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে গ্রেফতার করা হয় বাকি দু’জন, রাজেশ ও প্রীতমকে। সকালে ধৃত দু’জনকে এ দিন আদালতে তোলা হয়। তাদের এক জন নিজেকে নাবালক বলে দাবি করায় আদালত তাকে হোমে পাঠায়। অন্য জনকে ২২ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.