৬ মাসে ১৮ চিঠি, সৌগতকে একটাও জবাব দেননি মমতা
ঢাকঢোল পিটিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু কান দেননি একটি উপদেশেও।
কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে দলীয় মন্ত্রীদের রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্প দফতরের উপদেষ্টা হওয়ার পরে গত ছ’মাসে শিল্পায়নের সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ১৮টি চিঠি লিখেছেন সৌগত রায়। একটিরও জবাব পাননি।
দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট শিল্পপতিকেও চিঠি লিখেছিলেন সৌগতবাবু। রাজ্যের শিল্পায়নের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছিলেন তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উপদেষ্টার চিঠি উপেক্ষা করলেও শিল্পপতিদের সকলেই কিন্তু সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা আছে বলে তাঁরা মনে করেন, সে কথাও জানিয়েছেন সবিস্তার।
সৌগতবাবুকে রাজ্যের খসড়া শিল্পনীতি তৈরি করতে বলেছিলেন মমতা। বিভিন্ন শিল্প ও বণিকসভার মতামত নিয়ে সেই খসড়া তৈরি করেন তিনি। জমা দেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ব্যস ওই পর্যন্তই। খসড়া শিল্পনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য সৌগতবাবুকে আর ডাকেননি মমতা। শিল্পনীতি ঘোষণাও হয়নি। যদিও হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিডস’-এর মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পনীতি প্রকাশ করবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন খোদ শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শিল্পায়নের পথে কোন কোন সমস্যার দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নজর টেনেছিলেন সৌগতবাবু?
জানুয়ারি মাসে একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের অধীনে ২২০০ একর জমি রয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে রয়েছে ২০০ একর জমি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই জমি শিল্পের জন্য বণ্টন করা হচ্ছে না। এর পরে কলকাতা শহরতলিতে বন্ধ কলকারখানার জমিতে আবাসন গড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সৌগতবাবু। তিনি লেখেন, ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত-সহ বিভিন্ন এলাকায় বহু বন্ধ কলকারখানার জমিতে আবাসন তৈরি হচ্ছে। পুরসভা যদি নির্দেশ দেয় যে ওই সব জমিতে আবাসন নয়, শুধু কারখানাই গড়া যাবে তা হলে শিল্পপতিরা বাড়তি উৎসাহ পেতে পারেন। সৌগতবাবুর আরও বক্তব্য ছিল, যদি বন্ধ কারখানার জমি আবাসন একান্তই গড়তে হয়, তা হলে শিল্প দফতরের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক হোক। বিষয়টি নিয়ে নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। কিন্তু কোনও পক্ষই এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়নি।
কলকাতার আশেপাশে এবং হাওড়ার বহু কারখানায় যে বাড়তি ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে, তা কী ভাবে শিল্পের কাজে লাগানো যায়, সেই পরামর্শও মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন সৌগতবাবু। বলেছিলেন ২০১২ সালের তথ্যপ্রযুক্তি নীতি পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তার কথাও। কিন্তু সবই অরণ্যে রোদন। উল্টে এই অতিসক্রিয়তাই তাঁর বিদায় নিশ্চিত করল বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা।
বিদায়ের উপলক্ষ হয়ে অবশ্য দেখা দিয়েছে রাজ্যে বড় শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে জমির সমস্যা নিয়ে সৌগতবাবুর মন্তব্য। ভূমি এবং ভূমি সংস্কার সচিব আর ডি মীনাকে চিঠি লিখে তিনি জানতে চান রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্ক-এ কত জমি রয়েছে এবং জমি অধিগ্রহণের শর্তগুলি কী কী। গত ৭ জানুয়ারি সচিব তাঁকে জানান, রাজ্যে সেই অর্থে কোনও ল্যান্ড ব্যাঙ্ক নেই। জমি অধিগ্রহণের কোনও বিশেষ শর্তও নেই। এর পরেই সৌগতবাবু একাধিক বণিকসভার বৈঠকে বলেন, রাজ্যের জমির যা চরিত্র এবং জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে সরকারের যা নীতি, তাতে বড় শিল্পের জন্য জমি পাওয়া কঠিন। তাই তিনি খসড়া শিল্পনীতিতে ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ার উপরেই জোর দিয়েছেন। এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ পার্থবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, এর ফলে রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পার্থ-সৌগত সংঘাতের আরও উদাহরণ দিয়ে পদত্যাগী শিল্প উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হচ্ছে, এক শিল্পপতি রাজ্যে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি শিল্প দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেন সৌগতবাবু। কিন্তু শিল্প দফতর সক্রিয় না-হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি হতে পারেনি। এই অভিযোগের জবাবে পার্থবাবু অবশ্য বলেন, “আমার দফতরের কোনও ঢিলেমি নেই। প্রকল্প না-হওয়ার অন্য অনেক কারণ রয়েছে।” শিল্প দফতর সূত্রের বক্তব্য, একটিমাত্র টেন্ডারের ভিত্তিতে এই ধরনের প্রকল্প গড়ার অনুমতি দেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনও পাওয়া যায়নি। এই সংঘাতের আবহে পার্থবাবুর পক্ষ নিয়েই সৌগতবাবুকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ফোনেই সৌগতবাবু মমতাকে জানিয়ে দেন তাঁর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। তার পর নিজের হাতে চিঠি লিখে ঠিক কোন পরিস্থিতিতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না, তা জানিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ওই চিঠিতে নিয়মমাফিক ইস্তফার কথা সৌগতবাবু লেখেননি বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। ফলে মমতার পক্ষেও ইস্তফা গ্রহণ করে এই জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সৌগতবাবুর এই চিঠিরও কোনও জবাব দেননি। আর যোগাযোগও করেননি তাঁর সঙ্গে।
গোটা ঘটনা নিয়ে সৌগতবাবু মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু তাঁর সতীর্থ আর এক উপদেষ্টার তির্যক মন্তব্য, “আমরা জানতাম এটা (উপদেষ্টা পদ) নিছকই সান্ত্বনা পুরস্কার। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু অধ্যাপক মশাই এই কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েই বিপদ ডেকে এনেছেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.