বিয়ে বা কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাচার বাড়ছে মুর্শিদাবাদে
মুর্শিদাবাদ জেলায় মূলত অর্থনৈতিক কারণে নারী ও শিশু কন্যাদের পাচার হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে মোটা টাকার বিনিময়ে ভিন রাজ্যে অল্পবয়সী কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। কাজের লোভ দেখিয়ে জেলা থেকে নারী ও শিশুকন্যা ভিন রাজ্যে পাচার করার ঘটনাও ঘটছে। জেলাশাসক রাজীব কুমার বলেন, “সচেতনতার অভাবে নারী-শিশু পাচারের মত ঘটনা ঘটে। জেলাবাসী সচেতন হলে ওই পাচারের সংখ্যা কমে যাবে।”
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ে দেওয়ার নাম করে অথবা বিয়ে করে জেলা থেকে নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, কাশ্মীর, মুম্বাই-এ পাচার করে দেওয়া হয়। এর আগে উত্তরপ্রদেশের সাহারনপুর থেকে বেশ কিছু নারী ও অল্পবয়সী মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ। জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত দু-বছরে প্রায় ৬৫ জন নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটেছে। পাচারকারিরা কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও বিয়ে করে নিয়ে গিয়ে নারী ও শিশুদের বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বেশ কয়েকবার হাত বদল হতে হতে হারিয়ে যাচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা, আহিরন, লালগোলা, রানিনগর, ডোমকল, জলঙ্গি, ইসলামপুর, বহরমপুর, বেলডাঙা, রেজিনগর, আন্দুলবেড়িয়া, খড়গ্রাম, শক্তিপুর থানা এলাকা ‘পাচার প্রবন’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ফরাক্কা থেকে শুরু করে ধুলিয়ান, অরঙ্গাবাদ, লক্ষ্মীপুর, সেকেন্দ্রা, জঙ্গিপুর সৈয়দপুর-শ্যামমাটিনগর, বড়জুমলা, লালগোলা, বসুপাড়া, রানিতলা থানা, লোচনপুর, নবিপুর, সাগরপাড়া, জলঙ্গি পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা পাচারকারীরা ব্যবহার করে থাকে। জেলাপ্রশাসন ওই এলাকাগুলোকে ‘ক্রশ বর্ডার ট্র্যাফিকিং জোন’ বলেও চিহ্নিত করেছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “নার পাচারের মত ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য জেলার প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। অনেক সময়ে নারী পাচারের মত ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ হেনস্থা করে বলে অভিযোগ শোনা যায়। পুলিশকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।” নারী ও শিশু পাচারের বিষয়টি দেখার জন্য নোডাল অফিসার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ডিএসপি (সদর)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ সালে হরিহরপাড়ায় ৩টি, জলঙ্গিতে ১টি, ডোমকলে ৪টি, ইসলামপুরে ৪টে, সামসেরগঞ্জে ১টি, সালারে ২টি, লালগোলায় ২টি, জিয়াগঞ্জে ১টি, নবগ্রামে ২টি, রানিনগরে ২টি নারী পাচারের ঘটনা ঘটেছে। বাকি থানাগুলিতে নিখোঁজের ডায়েরি হলেও পাচার সংক্রান্ত কোনও নথি পাওয়া যায়নি। তবে যত সংখ্যক নিখোঁজ হয়েছেন, তার মধ্যে ৬০ শতাংশ মহিলা। তার মধ্যে আবার ৭০ শতাংশ নাবালিকা। পুলিশ সুপার বলেন, “অনেক সময় নারী পাচারের ঘটনা ঘটলেও সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে অভিভাবকরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ কেস না করে জেনারেল ডায়েরি করতে বাধ্য হয়।”
জেলা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, যে পরিবারে অনেক ভাইবোন রয়েছে, অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত এবং নিরক্ষর পরিবারের মেয়েরাই নারী পাচারের শিকার। তবে অতীতে পাচার হয়েছেন, এমন মহিলা গ্রামে ফিরে এসেই কিশোরী-যুবতীদের টার্গেট করে অভিভাবকদের হাতে বেশ কয়েক হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বিয়েকে পাচারের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন।”
ওই ধরণের মহিলা যখন ভিন রাজ্য থেকে গ্রামে ফিরছে, তাদের সঙ্গে ৮-১০ জন পুরুষও আসছে। তারা প্রথমে হোটেলে থাকে। পরে ‘টার্গেট’ ঠিক করার পরেই ওই পুরুষদের গ্রামে নিজের বাড়িতে ঠাঁই দেয়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়ে মহিলা ওই পুরুষদের শ্বশুরবাড়ির সদস্য বলে জানায়। ফলে বিশ্বস্ত পাত্র বাড়িতে এসে থাকছে মনে করে গ্রামবাসীদেরও বিশ্বাস জন্মায়। তাঁরাও ভরসা করে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হন।
বাল্য বিবাহের সঙ্গে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর সঙ্গে পাচার ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ জেলায় ৭৩% বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে।” জয়ন্তবাবু বলেন, “শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা ওই মহিলা গ্রামে ফিরে এসে দেখেনরাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, পোশাক পরার ক্ষেত্রে কোনও স্বাধীনতা নেই, অবাধ মেলামেশার ক্ষেত্রেও কোথাও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিবার-সমাজ। সেই সঙ্গে ‘নষ্ট মেয়ে’ বলে গ্রামবাসীরাও ভাল চোখে দেখেন না। সব মিলিয়ে ওই মহিলা ফের পাচারকারীর হাত ধরে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যাওয়ার সময়ে আর্থিক ভাবে অসুরক্ষিত জায়গায় রয়েছে, এমন মহিলাদেও নিয়ে যাচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.