লাখ টাকা পেয়ে ফেরালেন যুবক
সারা দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফলেট বিলি করে দিনান্তে হাতে মেলে ১১৬ টাকা। স্ত্রী, মা-বাবাকে নিয়ে চার জনের সংসার ওই টাকায় চালাতে হিমসিম অবস্থা বিল্টু সেনের। এ হেন অভাবী পরিবারের যুবক বিল্টু রাস্তায় ১ লক্ষ টাকার বান্ডিল পেয়ে সোজা মালিকের মাধ্যমে থানায় গিয়ে জমা দিয়েছেন।
প্রায় হতদরিদ্র তরুণের সততায় এলাকার ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা তো বটেই, পুলিশও অভিভূত। শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে-এর কথায়, “দারুণ কাজ করেছে ছেলেটি। এত দারিদ্র সত্ত্বেও যে ভাবে প্রলোভন সামলেছে তার জন্য কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়। এখনকার যুব সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে বিল্টু। আমরা পুলিশের তরফে ওঁর জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।” রাতে শহরের পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লির সমীর দত্ত থানায় গিয়ে প্রমাণ দিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন। তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশের মাধ্যমে বিল্টুকে ছ হাজার টাকা দেন।
যাঁকে ঘিরে এত প্রশংসার বন্যা বইছে শিলিগুড়িতে, সেই বিল্টু কিন্তু মনে করেন, এটাই স্বাভাবিক। তাঁর কথায়, “ঘরে যতই অভাব থাকুক, অন্যের টাকা না বলে নিতে পারব না। তাতে পাপ হয়। আমি গরিব হতে পারি, তা বলে পাপী হতে চাই না।”
বিল্টু সেন।
শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মাটিগাড়ায় সাদামাটা বাড়ি বিল্টুদের। বাবার আয় যৎসামান্য। মা গেরস্থালি সামলান। বিল্টুর স্ত্রী দু’মাসের অন্ত্বঃসত্ত্বা। সে জন্য বাড়তি খরচ রয়েছে। কোনও মতে সংসার চলে। এক সময়ে বিল্টু সিকিমে একটি হোটেলে কাজ করতেন। ভূমিকম্পের পরে সেখানে সব কিছু ভেঙেচুরে যায়। এর পরে বিল্টু শিলিগুড়িতে ফেরেন। সেই থেকে সেবক রোডের পানিট্যাঙ্কি মোড়ে একটি বেসরকারি ভেষজ ওষুধের সরবরাহকারী সংস্থায় কাজ করেন। ওই সংস্থার কর্তা চতুর্ভুজ গিরির কথায়, “এত সহজ-সরল ছেলে এখনকার দিনে বিরল। সকালে রাস্তায় লিফলেট বিলি করছিল। সেবক রোডেই। হঠাৎ একটা নোটের বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখে। সেটি পেয়ে সোজা আমার কাছে এসে থানায় জমা দেওয়ার জন্য যেতে চায়। গুনে দেখি ১ লক্ষ টাকা রয়েছে। পুলিশের কাছে জমা দিই।”
ঘটনা হল, এই প্রথম বিল্টু অন্যের টাকা পেয়ে ফিরিয়ে দিলেন এমন নয়। সিকিমে যখন কাজ করতেন, একটি হোটেলের রেস্তোরাঁর টেবিলে একটি টাকা ভর্তি ব্যাগ কুড়িয়ে পান। সেটি তুলে ফ্রিজে রেখে দেন বিল্টু। পরে যাঁদের ব্যাগ তাঁরা খুঁজতে গেলে, সেই পর্যটকদের ব্যাগটি ফিরিয়ে দেন বিল্টু। সেবার পর্যটকেরা বিল্টু খুশি হয়ে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি নেননি। এ বার অবশ্য জোর করেই পুলিশের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন সমীরবাবু। এত অভাব থাকা  সত্ত্বেও এমন ছেলের জন্য গর্বিত বাবা বিজয়বাবু। তাঁর কথায়, “আমাদের মতো মানুষের সংসারে অভাব থাকবেই। তা বলে সততা খুইয়ে দেব সেটা হতে পারে না। ছেলের জন্য আমরা সকলে গর্বিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.