ব্যাঙ্কঋণ না পেয়ে সঙ্কটে বহু চাষি
দলিল-পরচার জটে কিষান কার্ড অমিল
মির দলিল-পরচার জটিলতায় বহু চাষিই কিষান ক্রেডিট কার্ড পাচ্ছেন না। কিষান ক্রেডিট কার্ড না থাকায় চাষের জন্য ব্যাঙ্কঋণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। এমনকী ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাষিকে ব্লক কৃষি আধিকারিকের প্রদত্ত শংসাপত্রকেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। হুগলির খানাকুল-১ ব্লকের রামনগর, ঠাকুরানি চক ও ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ঋণ দানের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের পারদ ক্রমশ চড়ছে। ক্ষুব্ধ চাষিরা ঋণ-সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহার দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই ব্লক কৃষি দফতরে ধর্না দিচ্ছেন। খানাকুল-১ ব্লক কৃষি আধিকারিক হরষিত মজুমদার বলেন, “চাষিদের ঋণ দেওয়ার জন্য জমির আসল দলিল-পরচা জমা রাখতে চাইছে ব্যাঙ্ক। আর তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সমস্যা। কারণ, পৃথক অন্ন হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ বাড়িতেই একটিই দলিল। প্রত্যেক ভাইয়ের নামে পৃথক ভাবে পরচা করানো নেই। তাই সেই দলিল তাঁরা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখতে অনিচ্ছুক। চাষির হলফনামায় ব্লক কৃষি আধিকারিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে পাঠালেও কাজ হচ্ছে না। ব্যাঙ্ক ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যা জানিয়ে সুরাহার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় রোজই চাষিদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।”
জেলা মুখ্য কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ রকম হওয়ার কথা নয়। চাষিদের অভিযোগের বিষয়গুলি জেলাশাসককে জানানো হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।”
ঠাকুরানি চক, কাছরা, ঘোষপুর এবং রামনগর এলাকার ঋণ না-পাওয়া চাষিদের অভিযোগ, গত বছর তাঁরা ব্লক কৃষি আধিকারিকের শংসাপত্রের ভিত্তিতেই আলু এবং বোরো ধান চাষে ব্যাঙ্কঋণ পেয়েছিলেন। সেই ঋণ শোধও করেছেন তাঁরা। অথচ এ বছর দলিল, পরচা, এবং কিষান কার্ডের জটে ঋণ মেলেনি। ফলে তাঁদের অনেকেই চড়া সুদে বাইরে থেকে ঋণ করতে বাধ্য হয়েছেন। চড়া সুদের কারণে অনেকে আলু ও বোরোধান চাষের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে এই জটিলতায় ঋণ না পেয়ে চাষ বন্ধ রেখে দিনমজুরি করছেন। ঠাকুরানিচক গ্রামের বলাই মিদ্দার অভিযোগ, “আমাদের চার ভাইয়ের পৃথক ভাবে জমির কোনও পরচা নেই। দলিল বাবার নামে। মৌখিক ভাবেই আমরা এই জমিকে পৃথক পৃথক ভাগ করে বছর পাঁচেক ধরে তাতে চাষ করছি। চার ভাই-ই প্রতিবছর নিজের নিজের জমিতে আলু চাষের ঋণ পেয়েছি। সেই ঋণ শোধও করেছি। কিন্তু এ বার ব্যাঙ্ক বলছে, আসল দলিল বা পরচা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখতে হবে। ব্লক কৃষি আধিকারিকের শংসাপত্র নিয়ে গেলেও তা গ্রাহ্য করছে না।”
এ ব্যাপারে ঠাকুরানি চকের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার দীপক দেবনাথ বলেন, “ব্যাঙ্কের নিয়মবিধি মেনেই কাজ করছি। কৃষক ঋণের ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসাবে জমির দলিল, পরচা, খাজনার রিসিটএ সব আবশ্যিক। ১২ ডিসেম্বর ব্লক স্তরের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে আমরা এ সব বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়ে দিয়েছি। নইলে ঋণগ্রহীতাকে পরবর্তী কালে খুঁজব কোথায়?” একই কথা বলেছেন ঘোষপুর এবং রামনগরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলি থেকে চাষিদের উদ্দেশে জানানো হয়েছেআলু চাষের জন্য ঋণদান প্রক্রিয়া বন্ধ করা হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে বোরো চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়া থেকেই ঋণদান প্রক্রিয়া শুরু হবে। ঋণের আবেদনের জন্য জমির খাজনা-রসিদ এবং পরচা আবশ্যিক। খানাকুল-১ ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক এলাকায় জমি আছে এমন চাষির সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার ৭২০ জন। এঁদের মধ্যে ব্যাঙ্ক, সমবায় এবং কৃষি দফতরের মাধ্যমে কিষান ক্রেডিট কার্ড পেয়েছেন ১৬,৪৯৩ জন। বাকি ৬,২২৭ জন জমি জটের কারণে কিষান ক্রেডিট কার্ড পাননি। এ ছাড়াও ভাগচাষির সংখ্যা অসংখ্য। তাঁদের কিষান ক্রেডিট কার্ডের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় নানা আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন। এমনকী সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বা আলুও বিক্রি করতে পারেন না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.