|
|
|
|
|
|
|
| কুবের উবাচ |
কুশল ভট্টাচার্য (৪৪)
• বেসরকারি সংস্থায় বিপণন বিভাগের কর্মী • স্ত্রী গৃহবধূ • সন্তান পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে • নিজের বাড়ি রয়েছে
• সঞ্চয় শুরু ২০০০ সাল থেকে •
লক্ষ্য, ৫-৬ বছরের মধ্যে ব্যবসা শুরু
• ইচ্ছে, শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ডে আরও লগ্নি
• সঙ্গে চাই সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ
 |
| আয় (বছরে): ১২,০০,০০০ |
| টাকা রাখেন (বছরে) |
খরচ (বছরে) |
• পিএফ: ১০,০০০
• পিপিএফ: ৬০,০০০
• জীবন বিমা: ২,৩০,০০০
• মিউচুয়াল ফান্ড: ১,৮০,০০০
• শেয়ার: ৫০,০০০
• পরিকাঠামো বন্ড: ২০,০০০ |
• টেলিফোন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি: ৩৫,০০০
• সন্তানের পড়াশোনা: ৭০,০০০
• খাওয়া-দাওয়া: ৯০,০০০
• বেড়ানো: ৫০,০০০
• রক্ষণাবেক্ষণ: ২৫,০০০
• পরিচারক: ৫,০০০
• চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিমা: ৩০,০০০
• অন্যান্য: ১০,০০০ |
| সম্পদ |
• স্থায়ী আমানত: ১,২৫,০০০
• রেকারিং ডিপোজিট: ৬০,০০০ |
|
|
 |
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
কুশল সঞ্চয়ী। তাঁর আয়-ব্যয়ের অনুপাত প্রায় ৪:১। বিশেষত যে-ভাবে হিসাব কষে তিনি সংসার খরচ চালান, বা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে লগ্নি করেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
বিন্দু থেকে সিন্ধু
প্রথমেই একটি বিষয়ের উপর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইব। তা হল, কী ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে অল্প অল্প সঞ্চয় করলে, তা বড় সম্পদে পরিণত হয়। এখন কুশলের আয় ভাল। তাই মোটা অঙ্কের সঞ্চয় স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তিনি সঞ্চয় শুরু করেছেন ২০০০ থেকে। তখন বছরে বড়জোর এক লক্ষ টাকা জমাতেন। আজ তা-ই বেড়ে ৭ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
তবে এখানে একটা কথা কুশলকেও বলার আছে। আপনি লিখেছেন, বছরে পিএফ কাটে মাত্র ১০ হাজার টাকা। অনেক বেসরকারি সংস্থাই পিএফ খাতে খুব কম টাকা জমা দেয়। কিন্তু আপনার আয়ের তুলনায় পিএফ-এর পরিমাণ চোখে পড়ার মতো কম। তাই সেখানে
যে-টাকা কম জমছে, অন্যত্র তা পুষিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে আপনাকে। এখানে তা মাথায় রেখে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমিও।
এক ঝলকে
এক ঝলকে দেখে নিই, কী কী খাতে টাকা রাখতে চান কুশল? চিঠি পড়ে মনে হল, সামনে লক্ষ্য মূলত দু’টি
(১) ৫-৬ বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু।
(২) স্বচ্ছল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।
এক ঢিলে দুই পাখি
ব্যবসা আর নিশ্চয়তা দুই-ই একসঙ্গে নিশ্চিত করতে চাইলে, আগে মোটা টাকার তহবিল জোগাড় করতে হবে। যাতে তা থেকে সংসার খরচ চালাতে বা প্রিমিয়াম দিতে অসুবিধা না-হয়। আবার লগ্নির টাকাও উঠে আসে।
ধরা যাক, পাঁচ বছর পরেই ব্যবসা শুরু করলেন কুশল। দেখা যাক, অন্তত এখনকার জীবনযাপনের মান ধরে রাখতে তার আগে ঠিক কত টাকা জমাতে হবে তাঁকে?
খরচের হিসেব-নিকেশ
• এখন সংসার খরচ, সন্তানের পড়াশোনা ইত্যাদি মিলিয়ে বছরে তিন লক্ষের একটু বেশি টাকা খরচ হয়। গড় মূল্যবৃদ্ধি ৬% ধরে পাঁচ বছর পর তা দাঁড়াবে প্রায় ৪ লক্ষ। তার সঙ্গে রয়েছে
• বিমা প্রিমিয়াম ২.৩ লক্ষ।
• স্বাস্থ্য বিমা ১৫ হাজার।
• পিপিএফে ৬০,০০০ (পুরো মেয়াদ চালিয়ে যাবেন ধরে)।
সুতরাং সব মিলিয়ে তখন বছরে ৭.০৫ লক্ষ টাকা লাগবে ভেবেই এগোতে হবে তাঁকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ধরে নিচ্ছি ব্যবসা শুরুর পরে নতুন রেকারিং ডিপোজিট করবেন না তিনি। তবে তার আগে পর্যন্ত চালালে ভাল।
সুরক্ষা-তহবিলের মাপ
এখন ৮% সুদে (ঝুঁকিহীন খাতে) যে পরিমাণ টাকা রেখে বছরে ৭.০৫ লক্ষ টাকা মিলবে, তা-ই হবে কুশলের তহবিলের ন্যূনতম মাপ। যা প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা। এর সঙ্গে আরও ১০ লক্ষ টাকা ব্যবসা শুরুর জন্য ধরলে, দাঁড়াচ্ছে ৯৮ লক্ষ টাকা। ব্যবসার ঝুঁকি রয়েছে। তাই অন্তত ১ কোটি টাকা পুঁজি করে মাঠে নামুন।
পাঁচ বছরের লগ্নি পরিকল্পনা
শুধু কত টাকার তহবিল গড়তে হবে, তা ঠিক করলেই তো হবে না। আসুন দেখি, কোন খাতে কী ভাবে টাকা রাখলে, আদৌ ওই অঙ্ক জমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ
• পিপিএফ-এ এক লক্ষ টাকাই লগ্নি করুন। যা তার সর্বোচ্চ সীমা।
• কুশলের বিমার প্রিমিয়াম ২.৩ লক্ষ টাকা। এই ধরনের পলিসি মূলত এনডাওমেন্ট অথবা ইউলিপ (শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত) হয়। এগুলি সাধারণত প্রিমিয়ামের ১০ গুণ কভারেজ দেয়। অতএব কুশলের ক্ষেত্রে তা দাঁড়াবে ২৩ লক্ষ। কিন্তু তাঁর উচিত অন্তত ৫০ লক্ষের বিমা করানো। এই ঘাটতি মেটাতে টার্ম পলিসি বা অবসর প্রকল্পে লগ্নি করুন।
• স্থায়ী আমানত ও রেকারিং ডিপোজিট চালিয়ে যান।
• পরিকাঠামো বন্ডে করছাড়ের ব্যবস্থা উঠে গিয়েছে। তাই এই খাতে নতুন করে লগ্নির প্রয়োজন নেই।
• ভাল রিটার্ন পেতে আরও টাকা খাটান ফান্ড আর শেয়ার বাজারে।
• স্বাস্থ্য বিমা চালিয়ে যান।
বাড়তির ঠিকানা
সমস্ত খরচ ও লগ্নির পর কুশলের হাতে থাকে বছরে ১.৫০ লক্ষ টাকা। পরিকাঠামো বন্ডে নতুন লগ্নি
না-করলে হাতে থাকবে আরও ২০ হাজার। মোট ১.৭০ লক্ষ। দেখে নিই, এই ‘বাড়তি’ টাকা কোথায় লগ্নি করতে পারেন?
• পিপিএফে বছরে আরও ৪০ হাজার টাকা রাখুন।
• বর্তমানে কুশলের যা-আয়, ৬০ পেরোনোর পর অ্যানুইটি থেকে তা পেতে বছরে অন্তত ৫০ হাজার টাকা রাখতে হবে পেনশন প্রকল্পে। তাই প্রকল্প বাছতে দেরি করবেন না।
• এসআইপি-র মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি শুরু করুন। সন্তানের জন্য মাসিক কিস্তিতে কিনতে পারেন চাইল্ড প্ল্যানও। এই খাতে রাখুন বছরে ৬০ হাজার টাকা।
• বছরে আরও ১০ হাজার টাকার শেয়ার কিনতে পারেন। তবে তা কেনা উচিত বিচার-বিবেচনা করে।
• বাকি ১০ হাজার টাকার টার্ম পলিসি করতে পারেন। যা অতিরিক্ত সুরক্ষা জোগাবে।
শেষে ছোট্ট পরামর্শ
আমি ব্যবসা বিশেষজ্ঞ নই। তবে দু’টো কথা মনে রাখলে হয়তো ঠকবেন না
(১) নিজের দক্ষতা যে-ক্ষেত্রে, সেই ব্যবসা শুরুই বুদ্ধিমানের কাজ।
(২) কম মূলধন লাগে, এমন ব্যবসা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করুন। |
|
|
 |
|
|
