জমছে বিষ্ণুপুর-কিরীটেশ্বরী মেলা
পৌষের শেষলগ্নে মেলায় মেতেছে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন দু’টি জনপদ-- বহরমপুর শহরের বিষ্ণুপুর ও নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী।
ওই দু’টি এলাকাতেই এ বছরের পৌষ মাসের শেষ মঙ্গলবারের ভিড়ের ঠেলায় মাছি গলার উপায় ছিল না। দু’টি কালীমন্দিরকে ঘিরে সুদূর অতীত থেকে ওই দু’টি এলাকায় প্রতি বছর পৌষ মাস জুড়ে মেলা হয়ে আসছে। পৌষ মাস জুড়ে মেলা হলেও মানুষের ঢল নামে মূলত মঙ্গলবার ও শনিবার। তার মধ্যে আবার মঙ্গলবারের ‘মাহাত্ম্য’ই বেশি বলে বিশ্বাসী লোকজনের ঢল নামে ওই দিন। প্রাচীন দু’টি কালীমন্দির ঘিরে নানান কিংবদন্তী প্রচারিত থাকায় মুর্শিদাবাদ ও লাগোয়া ৪টি জেলা বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া ও মালদা থেকে দলে দলে পূণার্থীরা এখানে ভিড় করেন। দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেওয়ার পাশাপাশি বন্ধু অথবা পরিবারের লোকজনদের নিয়ে তাঁরা মন্দির চত্বর জুড়ে পৌষ মাসের বনভোজনেও মেতে ওঠেন। ফলে দিনভর ভিড়ে ঠাসা ওই এলাকার অন্তত পৌষ মাসে যথেষ্ট আর্থিক উন্নতি ঘটে।
ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়ের ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ১১৫ বছর আগে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে। ওই গ্রন্থের‘ ‘কিরীটেশ্বরী’ র্শীষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “প্রবাদ আছে যে, দক্ষযজ্ঞে বিশ্বজননী পতিপ্রাণা সতী প্রাণত্যাগ করিলে, ভগবান বিষ্ণু তাঁহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করিয়া সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, সেই সময় দেবীর কিরীটের একটি কণা এই স্থলে পতিত হয়; তজ্জন্য ইহা উপপীঠ মধ্যে গণ্য এবং ইহার অধিষ্ঠাত্রী কিরীটেশ্বরী বলিয়া কীর্তিতা।” ‘রিয়াজুস্-সালাতীন’ গ্রন্থে, মেজর রেনেলের কাশিমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে ও তন্ত্রচূড়ামণির ‘পাঠনির্ণয়’-এ কিরীটেশ্বরী উল্লেখ রয়েছে বলেও নিখিলনাথ তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন। নবাব মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার কানুনগো ছিলেন দর্পনারায়ন রায়। নিখিলনাথের মতে, “দর্পনারায়ন রায় কিরীটেশ্বরী মেলার সৃষ্টি করেন।”
কিরীটেশ্বরী মন্দির কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ দাস বলেন, “আগে দেবীর অনেক সম্পত্তি ছিল। ছিল ১০০টি মন্দির। বর্তমানে অধিকাংশ জমিই বেহাত হয়ে গিয়েছে। পোড়ামাটির বাংলা ইটের তৈরি মন্দির গুলিরও অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর রয়েছে মূল মন্দির ছাড়াও আরও ২৫-৩০টি মন্দির।” কিরীটেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুন্দরী খান বলেন, “৪টে নাগরদোলা ছাড়াও ওই মেলায় রয়েছে মনোহারি, রেস্টুরেন্ট, তেলেভাজা, জিলাপি, খেলনা, কাঠের আসবাব, গৃহস্থালির উপকরণ-সহ বিভিন্ন জিনিসের প্রায় দেড়শোটি দোকান। ওই সব দোকানের কেনাকাটা ছাড়াও ৪-৫টি জেলা থেকে আগত পূণ্যার্থীদের বনভোজনের জন্য ব্যাপক কেনাবেচা হয়। ফলে ওই মেলাকে ঘিরে পৌষ মাস জুড়ে প্রত্যন্ত ওই তল্লাটের অর্থনীতি অনেকটাই চাঙা হয়।”
বহরমপুর শহরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়ীকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিষ্ণুপুর মেলা কিরীটেশ্বরীর মেলাকে টেক্কা দিয়েছে। মঙ্গলবারের মেলায় মন্দিরের দু’ দিকে এক কিলেমিটার করে মোট দু’ কিলোমিটার রাস্তার দখল চলে নিয়েছিল পূণ্যার্থীদের ঢল। নবাবি আমলে কাশিমবাজার ইংরেজ কুঠির গোমস্তা ছিলেন কৃষ্ণেন্দু হোতা নামে জনৈক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়ের মতে, “বিষ্ণুপুরের কালীমন্দির কৃষ্ণেন্দু হোতা নামক জনৈক ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মনের নির্মিত বলিয়া কথিত।” পরে ওই মন্দির সংস্কার করেন কাশিমবাজারের রানি আর-না কালী ও লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়। ওই মন্দির রয়েছে বিষ্ণুপুর বিল লাগোয়া বিঘা পাঁচেক জমির উপর। মন্দিরের বর্তমান সেবাইত ও মেলা কমিটির কর্তা বিশ্বতোষ পাণ্ডে বলেন, “পুজো দেওয়ার পর দর্শনার্থীর বিলের পাড় লাগোয়া এলাকায় বনভোজনে মেতে ওঠে। এতটাই মানুষের ঢল নামে যে, সব আয়োজন করেও পৌষ মাসের মঙ্গলবার ও শনিবার জায়গার অভাবে অনেকে এখানে বনভোজন করতে পারেন না। তাঁরা তখন হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সারেন।”
তিনি বলেন, “বহরমপুর শহরের বিষ্ণুপুর মেলায় হারিয়ে যাওয়া গ্রামীন মেলার স্বাদ আনতে আমরা বরাবর সচেষ্ট রয়েছি।” ওই মেলায় রয়েছে নাগরদোলা-সহ বিনোদনের বিভিন্ন উপকরণ। রয়েছে প্রসাধনী সামগ্রীর ও মনোহারি দোকান থেকে খেলনা, জিলাপি-পেঁয়াজি থেকে রোল-কাটলেটের দোকান। প্রতিদিনের গৃহস্থালির সরঞ্জাম থেকে লোহা-কাঠ-বেতের আসবাবের দোকানও রয়েছে মেলা জুড়ে। মেলা কমিটির কর্তা বিশ্বতোষ পাণ্ডে বলেন, ‘মেলাকে ঘিরে মোটর বাইক ও সাইকেলের গ্যারেজই রয়েছ ১৩টি। বিভিন্ন জিনিসের দোকান রয়েছে শতাধিক। ফলে কেনাকাটায় পৌষ মাস জুড়ে এলাকার অর্থনীতি চাঙা হয়ে ওঠে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.