বছর আটেকের কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে সালিশিতে ডেকে মাথার চুল কেটে নিলেন গ্রামবাসীরা। এই অভিযোগই উঠেছে মঙ্গলবার সকালে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের লালখান্দিয়ার গ্রামে।
খবর পেয়ে এ দিন বিকেলে গ্রামে গিয়ে ওই যুবককে আটক করে নিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে ওই কিশোরীর মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণের ঘটনাটি অবশ্য পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছে সাদ্দাম হোসেন নামে ধৃত যুবক। এ দিকে, গোটা ঘটনাটিকে ‘ধামাচাপা’ দিতে সালিশি বসানোয় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবির বলেন, “উভয়পক্ষই ঘটনাটি আপোসে মিটিয়ে নেওয়ার উদ্যোগী হয়েছিল। ওই যুবককে গ্রেফতারের পাশাপাশি এই নোংরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে আইন হাতে তুলে যারা সালিশি বসিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
পুলিশি হেফাজতে সেই যুবক। নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ জানিয়েছে, সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের ওই কিশোরীকে সোমবার বিকেলে সাইকেলে করে মেলা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল পাশের ব্যারেজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ২৪ বছরের সাদ্দাম। সেখান থেকে ফেরার সময় ওই কিশোরীর উপর অত্যাচার চালানো হয়। কিশোরীর মা বলেন, “সন্ধ্যায় মেয়ে বাড়ি ফিরে গোটা ঘটনাটি জানায়। তখনই গ্রামের লোকজনকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। গ্রামের লোকজনই আমাকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যেতে বারন করেছিলেন। গ্রামের লোকজনই সালিশি বসিয়ে ঘটনাটির বিচার করবেন বলে জানিয়েছিলেন। আমাদের পুলিশের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি।” এরপরে মঙ্গলবার সকালে ওই যুবকের বাড়িতে চড়াও হন গ্রামের মাতব্বরেরা। পুলিশ জানায়, তাকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে সালিশি বসায়। সালিশির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই যুবকের মাথা ন্যাড়া করা হয় এবং সাড়ে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু গোটা ঘটনাটি তখনও পুলিশকে জানানো হয়নি। শেষে এ দিন বিকেলে খবর পেয়ে গ্রামে যায় পুলিশ। সেখান থেকে ওই যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেই সঙ্গে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ওই কিশোরী, তার মা এবং দিদিমাকে। সেখানে পুলিশকে গোটা ঘটনাটি জানিয়ে সাদ্দামের বিরুদ্ধে এ দিন সন্ধ্যায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই নাবালিকার মা। গ্রেফতার করা হয় সাদ্দামকে। জেরায় ধর্ষণের ঘটনাটি স্বীকার করেছে সে। পাশাপাশি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সালিশির ঘটনায় গ্রামের ৬ জনের নাম পেয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। |