|
|
|
|
ইস্তফা দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন চাইলেন মুন্ডা |
নয়া জোট গড়তে তৎপর কংগ্রেস-জেএমএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি ও নয়াদিল্লি |
আবহাওয়া যত ঠান্ডা হচ্ছে, ঝাড়খণ্ডে রাজনীতির উত্তাপ তত বাড়ছে। সোমবার বিজেপি জোট সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) জানিয়েছিল, মঙ্গলবারই রাজ্যপালের কাছে গিয়ে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দেবে তারা। সেই মতো সকালেই তারা সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি জমা দেয় রাজ্যপালের কাছে।
পাল্টা জবাবে মঙ্গলবার সকালেই বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা রাজ্যপালের দফতরে ফ্যাক্স করে জানিয়ে দিলেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা বিধানসভা ভেঙে দিতে চান। রাজ্যে ফের ভোটের সুপারিশ করেছেন তিনি। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর এই সুপারিশের ব্যাপারে রাজ্যপাল কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বলেই জানিয়েছেন তাঁর প্রধান সচিব আদিত্য স্বরূপ।
রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন করার যে কৌশল বিজেপি নিয়েছে, তা ভেস্তে দিতে রাজ্যপালের কাছে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি জমা দেওয়ার পরপরই নতুন সরকার গড়ার ব্যাপারে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন জেএমএম নেতৃত্ব। এমনকী নতুন সরকারের সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ জোট শরিক লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি-র সঙ্গেও আলোচনা শুরু করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। জেএমএমের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল ঝাড়খণ্ডের গণতন্ত্র রক্ষায় সচেষ্ট হবে বলেই আশা করা যায়। পরিস্থিতি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সরকার তৈরি করতে কোনও সমস্যা হবে না।” |
|
রাজ্যপালের হাতে ইস্তফাপত্র জমা দিচ্ছেন অর্জুন মুন্ডা। মঙ্গলবার রাঁচির রাজভবনে। —নিজস্ব চিত্র |
ঝাড়খণ্ড বিধানসভার মেয়াদ শেষ হতে এখনও প্রায় দু’বছর বাকি। তাই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার আগে রাজ্যে নতুন সরকার গড়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের একটা বড় অংশ। এমনকী রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে আজ ইস্তফা দিলেও অর্জুন মুন্ডা এবং বিজেপি-র কিছু কেন্দ্রীয় নেতা নতুন জোট সমীকরণ গড়ে তোলার ব্যাপারে তলে তলে তৎপর। সে ক্ষেত্রে বিধায়ক কেনাবেচার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জেএমএম সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবু সোরেনের ছেলে হেমন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লি উড়ে গিয়েছেন। গত কালই দিল্লি উড়ে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ বালমুচু। আজ কংগ্রেসের ১৩ জন বিধায়কের মধ্যে ১০ জনই দিল্লি উড়ে যান। হাইকম্যান্ডের কাছে তাঁদের দাবি, শিবু সোরেনকে মুখ্যমন্ত্রী করে রাজ্যে সরকার গঠনে রাজি হয়ে যাক কংগ্রেস। রাতে শিবুর বাড়িতে আসার কথা প্রদীপ বালমুচুর। রাজনীতির জল এখান যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে জেএমএম-কংগ্রেস জোটের সরকার গড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
এ দিন সকালে জেএমএম রাজভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই সেখানে হাজির হন রাজ্যে কংগ্রেসের একমাত্র সাংসদ সুবোধকান্ত সহায়। তিনি বলেন, “রাজ্যে জোট সরকার টিকল না বিজেপির ভুলে।” তবে মোর্চার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কংগ্রেস সরকার গড়তে সচেষ্ট হবে কিনা, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এক কংগ্রেস নেতার কথায়, “জোটের সম্ভাবনা প্রবল। কারণ রাজ্যে শক্তি বাড়ানোর চেয়েও কেন্দ্র নিয়ে বেশি চিন্তিত হাইকম্যান্ড। কারণ এক বছর পরেই লোকসভা নির্বাচন। মোর্চার সমর্থন পেলে ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেসের আসন এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে। বিজেপিও এখানে অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যাবে।” দলেরই অন্য এক অংশ আবার মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দেওয়াই ভাল। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস ঝাড়খণ্ডে রাজনৈতিক ছড়ি ঘোরাতে পারবে। তাতে লোকসভা ভোটে সুবিধা হবে দলের। যদিও এআইসিসি-র তরফে ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ-সহ অনেকে এর বিরোধী। তাঁদের বক্তব্য, তাতে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হতে পারে। তা ছাড়া ঝাড়খণ্ডে এখন সরকার গড়লে জাতীয় স্তরে এই বার্তাও দেওয়া যাবে যে, বিজেপি একটি রাজ্যে ক্ষমতা হারালো এবং কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করল। |
|
মুণ্ডা সরকারকে আর সমর্থন নয়। রাজ্যপাল সৈয়দ আহমেদের হাতে
সমর্থন প্রত্যাহরের চিঠি জমা দিলেন জেএমএম নেতা শিবু সোরেন ও
তাঁর পুত্র হেমন্ত সোরেন। মঙ্গলবার রাঁচিতে। ছবি: মুত্রা কামদা। |
এ দিন সকালে অর্জুন মুন্ডা রাজভবনে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে বেরোনোর সময় বলেন, “এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, বারবার চেষ্টা করেও এ রাজ্যে স্থায়ী সরকার তৈরি করা যাচ্ছে না। আমরা উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাজ করার সুযোগ পেলাম না।” রাজনৈতিক মহলের ধারণা, কংগ্রেসকে ঠেকাতে বিজেপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই এ দিন বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে কংগ্রেসকে ফের নির্বাচনের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়। সদ্য ভেঙে যাওয়া জোট সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা আজসু নেতা সুদেশ মাহাতোকেও ভোটের পক্ষে রাজি করাতে পেরেছে বিজেপি। সুদেশ এ দিন বলেন, “দুই বড় দলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে সরকার টিকল না। আজসু নতুন করে জোটে যাবে না। আজসু নির্বাচনের পক্ষে।”
তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, অর্জুন মুন্ডা তলে তলে যতই তৎপরতা চালান, ঝাড়খণ্ডে রাজনীতির রাশ এখন কংগ্রেসের হাতে। ঘোড়া কেনাবেচা শুরু হলে রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ গ্রহণ করে নিতে পারেন। তাতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি শাসন ও তার পর বিধানসভা ভোটই অনিবার্য হয়ে পড়বে। না হলে হয়তো নতুন এক জোট সরকার শপথ নিতে চলেছে ঝাড়খণ্ডে। |
|
|
|
|
|