|
|
|
|
বিদ্যুৎ-কৃষি-সার |
কেন্দ্রের তিন নীতির পক্ষে সওয়াল স্বামীনাথনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জিন পরিবর্তিত শস্য (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ক্রপ) এবং পরমাণু বিদ্যুতের পক্ষেই জোরালো সওয়াল করলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের খরচ বাঁচাতে কী ভাবে সার ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। স্বামীনাথন সোমবার বলেন, “জিন পরিবর্তিত শস্য ও পরমাণু বিদ্যুৎ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে পরমাণু বিদ্যুৎ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগে।”
কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘ দিন ধরেই এই তিনটি নীতির পক্ষে সওয়াল করে আসছে। কিন্তু এ রাজ্যের শাসক দল অবশ্য তিনটিরই বিরুদ্ধে। কলকাতায় দাঁড়িয়ে এ দিন স্বামীনাথন সেই তিনটি নীতি নিয়ে জোরালো সওয়াল করাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে স্বামীনাথনের বক্তৃতায় জিন পরিবর্তিত শস্য ও পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে দেশের জনগণের একাংশের বিক্ষোভের কথাও উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে সঠিক তথ্য জনসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না। প্রশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগে একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাপানে সুনামির পর ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপর্যয় মানুষের মধ্যে একটা ভয় তৈরি করেছে। ভয় রয়েছে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য নিয়েও। সংসদে পরমাণু বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিল পাশ হওয়াকে সৌভাগ্যজনক বলেন তিনি। |
|
তরুণ বিজ্ঞানীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন এম এস স্বামীনাথন।
পাশে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। সোমবার বিজ্ঞান কংগ্রেসে।নিজস্ব চিত্র |
দীর্ঘ দিন ধরেই খাদ্য সুরক্ষার পক্ষে সওয়াল করছেন এই কৃষিবিজ্ঞানী। সেই প্রসঙ্গেই এ দিন তিনি জিন পরিবর্তিত শস্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, আগামী দিনে খাদ্য শস্যের উৎপাদন বাড়াতে হলে কৃষির সঙ্গে জিন প্রযুক্তির মেলবন্ধন দরকার। এই কাজে দেশের তরুণ গবেষকদের এগিয়ে আসতেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ করেছেন কলকাতার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদানের কথাও। জিন পরিবর্তিত শস্য নিয়ে গত অগস্টে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোটেরও উল্লেখ করেছেন স্বামীনাথন।
কৃষি প্রসঙ্গেই তিনি তুলেছেন সার ব্যবহারের কথা। সারে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পর এ রাজ্য-সহ গোটা দেশেই বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে দাবি করেছিল রাজনৈতিক দলগুলি। এই প্রবীণ কৃষিবিজ্ঞানী বলেন, আমাদের দেশে সার অনেক সময়ই অপ্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। ঠিক মতো সার ব্যবহার করলে খরচ কমানো সম্ভব। কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে ‘ঘুমন্ত দৈত্য’ বলেন তিনি। স্বামীনাথনের দাবি, কৃষিতে পশ্চিমবঙ্গ আরও উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম।
এ ছাড়াও তাঁর বক্তৃতায় উঠে এসেছে ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা’ বিলের প্রসঙ্গ। তিনি জানিয়েছেন, ছত্তীসগঢ় রাজ্যে সরকার তাদের রাজ্যের ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে অনেক মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছয় না। কিন্তু ১৯৪৩ সালের পরে কোনও দুর্ভিক্ষ হয়নি সেটাও মনে রাখতে হবে।” তাঁর বক্তৃতায় জীব-বৈচিত্রের কথাও উঠে এসেছে। ভারতকে ২০২০-র মধ্যে বিশ্বে প্রথম পাঁচটি বিজ্ঞানে উন্নত দেশের মধ্যে থাকতে গেলে দেশে বহু গবেষণাগার তৈরি করা প্রয়োজন তিনি মনে করেন। এই প্রসঙ্গেই বিজ্ঞান কংগ্রেসের আয়োজক কমিটির প্রধান, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন জানান, মেধাবী গবেষকেরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানে উন্নতি করতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে। সার্নের ঈশ্বর কণা সংক্রান্ত গবেষণায় যোগ দেওয়ার আগে বিদেশ থেকে চার বাঙালি বিজ্ঞানীকে ফিরিয়ে এনেছিল কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। সেই উদাহরণ টেনে নারায়ণন বলেন, “মেধাবী গবেষক-বিজ্ঞানীদের ফেরাতে তাঁদের উজ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।” |
|
|
|
|
|