রাজ্যের আদালতগুলিতে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি-সহ নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দেড় লক্ষ ছুঁতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, মামলা দ্রুত মেটাতে আরও বেশি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করতে হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা দিল্লির ঘটনার পর তৃণমূলের কৌশল হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের মতে, দেড় বছরে ধর্ষণের ঘটনায় কড়া মনোভাব নেওয়ার বদলে তাকে অস্বীকার করার ঝোঁকই বেশি দেখা গিয়েছে রাজ্য সরকারের মধ্যে। তা সে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডই হোক, অথবা কাটোয়া বা বারাসত।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেবমতো, ২০০২-এ রাজ্যে নারী নির্যাতন মামলা ছিল ৩৯,৪৬২টি। ২০১১-তে তা হয় ১,৩১,৮২৪। ’০৫ সালে সব রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালুর জন্য প্রায় ৫০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। তার পর রাজ্যে প্রায় দেড়শো ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট খোলা হয়। তবে ২০১১-এর মার্চের পরে ওই খাতে আর বরাদ্দ হয়নি।
এখন নতুন করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট খুলে দ্রুত নারী নিগ্রহ মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, রাজ্যে যত ধর্ষণের মামলা চলছে, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশে চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। মামলাকারীদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা, তদন্তে দেরি হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শেষও করতে পারছে না। আবার পুলিশের একাংশের যুক্তি, নারী নির্যাতন মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরেন্সিক রিপোর্ট যথাসময়ে মিলছে না। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মতে, অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে অভিযোগকারিণীকে পরীক্ষা করানোর উপযুক্ত সরঞ্জাম, বিশেষজ্ঞ না থাকাতেও সমস্যা হচ্ছে। আইনজীবীদের একাংশ সময় চাওয়ায়ও মামলার গতি শ্লথ হচ্ছে। |
নারী নিগ্রহ ২০১১ |
|
• ধর্ষণ ১৩,০৩২
• অপহরণ ১০,৯৫৪
• পণের বলি ২,৩২৪
• শ্লীলতাহানি ১৩,০৯২
• যৌন নির্যাতন ১১৯
• বধূ নির্যাতন ৯২,৩০৩ |
|
গত এপ্রিলে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্বরাষ্ট্র, আইন, স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সময়ের আগেই চার্জশিট দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর এক পদাধিকারীর বক্তব্য, “তার আট মাস পরেও রাজ্য পদক্ষেপ করেনি। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গড়ার কথা বলছেন। এটা আশ্চর্যের।”
সরকারি সূত্রের অবশ্য খবর, খুব সম্প্রতি নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মামলায় ডাক্তারি পরীক্ষা, ফরেন্সিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য দফতরকেও ওই প্রক্রিয়ায় সামিল করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে হাইকোর্টের সম্মতি সাপেক্ষে ২০১৩-র গোড়ায় রাজ্যের সব জেলায় আরও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট খোলা হবে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা এটা করব।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রত্যয় নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন তুলছেন রাজ্য সরকারের মানসিকতা নিয়েও। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, “গত দেড় বছরে বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিছু প্রকাশ্যে এসেছে। বহু ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।” কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ বলেন, “আরও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির টাকা রাজ্য কোথা থেকে দেবে? এ সব হচ্ছে পয়সা খরচ না করে সংবেদনশীল সাজার চেষ্টা!” |