বারোর বাছাই
‘মাজদিয়ায় জেল’
৭ জানুয়ারি মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজের অধ্যক্ষ সরোজেন্দ্রনাথ করকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে। ওই দিনই সরোজেন্দ্রনাথবাবু পাঁচ এসএফআই সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। অধ্যক্ষকে চেয়ারের ভাঙা হাতল দিয়ে মারধর ও সোয়েটার ধরে টানা হেঁচড়া করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত ছাত্রদের নাম পুষ্পেন সরকার, প্রণব ঘোষ, তাপস দাশ, কমল বিশ্বাস ও অভিজিত হালদার। বেলা দেড়টা নাগাদ কলেজে বহিরাগতরা ভিড় করেছে এই অভিযোগে অধ্যক্ষের উপর চড়াও হয় এসএফআই সমর্থকরা। এই কলেজেই ২০০৯ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গন্ডগোলের জেরে ওই একই অধ্যক্ষকে বাড়ি ফেরার পথে মারধর করেছিল দুষ্কৃতীরা। সেবার অবশ্য অভিযুক্ত ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কাছাকাছি সময়ে রায়গঞ্জের কলেজে অধ্যক্ষকে নিগ্রহের অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। তাঁদের অবশ্য ‘বেল’ বা জামিন মিলে যায়। কিন্তু মাজদিয়ায় এসএফআই সমর্থকদের জেল হয়। প্রশ্ন ওঠে, কেন একই ধরনের ঘটনায় ‘মাজদিয়ায় জেল রায়গঞ্জে বেল’ দেওয়া হল? ইতিমধ্যে মদনপুর কেন্দ্রীয় আদর্শ বিদ্যালয়ে ঘটল শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। ফেল করা সমস্ত ছাত্রদের পাশ করিয়ে দিতে হবে- এমনই দাবি নিয়ে স্কুলে ঢুকে স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠল স্কুল পরিচালন সমিতির এক তৃণমূল সদস্যার বিরুদ্ধে। সহকারি প্রধান শিক্ষক দীপককুমার গুহ রায় এবং দিলীপ সাহা নামে ওই তৃণমূল সদস্য উভয়েই উভয়ের বিরুদ্ধে চাকদহ থানায় অভিযোগ করেন।

হার্ডল ডিঙিয়ে
সহপাঠীদের সঙ্গে চুরি করে পরের গাছ থেকে আম-কুল পেড়ে খাওয়া। কখনও বা বই-খাতা ফেলে পাড়ার মাঠে গোল্লাছুট বা লুকোচুরি খেলার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া। কিন্তু পছন্দের পাত্র ঠিক করে বাড়ির বড়রা বলে কি না বিয়ে করতে হবে! তাদের না জানিয়ে বিয়ের দিনও ঠিক করে ফেলেন তাঁরা। কিন্তু সেই মেয়েরা বড় হয়ে যায় তখনই। বড়দের কথার প্রতিবাদ করে। তাদের জেদের কাছে হার মানে পরিবার ও সমাজ। এমনই ‘প্রতিবাদী’ পাঁচ কন্যাবহরমপুরের গোয়ালজান নিয়াল্লিশপাড়ার বীথিকা দাস, নবগ্রাম থানার ঈশানপুরের আদরি প্রধান, বেলডাঙা থানার কালীতলার মধুমালা খাতুন, সামশেরগঞ্জ থানার মহিষাস্থলী গ্রামের মনিজা খাতুন ও সুতি থানার কাশিমনগরের টুকটুকি খাতুন। তাদের সঙ্গে ১৭ জানুয়ারি দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল। সেই মতো তারা দিল্লিও যায়। ওই পাঁচ কিশোরীর অনুপ্রেরণায় নিজের বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার সাহস দেখায় ডোমকলের আজিরন খাতুন, রেজিগরের রাজনেহার খাতুন, সুতি থানার টুম্পা খাতুন, কালীগঞ্জের রিঙ্কু হালদার, কান্দির জেমোর রাজনিহার খাতুন-সহ আরও অনেকে।

হাসপাতাল অসুস্থ
স্কুলে যাওয়ার সময় পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় সেনপাড়া গ্রামের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র শৌভিক মণ্ডল। তাকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সেলাই করা ডাক্তারের কাজ নয়। তার জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা আছেন। প্রায় দেড় ঘন্টা বিনা চিকিৎসায় জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে থাকার পরে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালে অবশেষে শৌভিকের চিকিৎসা শুরু হয়। শো কজ করা হয় ওই চিকিৎসককে। এই ঘটনার রেশ না মিটতেই ফের করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের আর এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আট মাসের অসুস্থ এক বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, বাচ্চাটিকে তিনি ছুঁয়েও দেখেননি। তিনি সেই শিশুটিকে কোনও শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে বলেন। সরকারি হাসপাতালের রেফার করার নিয়মও তিনি মানেননি। আবার এ বছরেই সদর হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া এক প্রসূতি যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। রাস্তায় স্থানীয় কিছু যুবক তাঁকে ওই হাসপাতালে ফিরিয়ে আনলে একই চিকিৎসকের হাতে তাঁর সন্তানের জন্ম হয়। সম্প্রতি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চার ঘন্টা ভর্তি থাকার পরেও এক রোগীকে ছুঁয়েও দেখলেন না কোন চিকিৎসক। অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। অভয়পুরের রিমা মণ্ডলকে ভুগতে হয় রেফার ভূতের জন্য। বাড়ি থেকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব খুব বেশি হলে তিন কিমি। অথচ প্রায় ১৬০ কিমি রাস্তা ঘুরে অবশেষে সেই করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালেই দিনকয়েক আগে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। গত এক বছরেও রোগ নিরাময় হল না করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, শক্তিনগর জেলা ও জেলা সদর হাসপাতালের। ওষুধ মিলছে না, চিকিৎসায় গাফিলতি, ‘অকারণে’ রেফারের মতো দফায় দফায় একাধিক অভিযোগ উঠেছে এই হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। নাম কা ওয়াস্তে হাতে গোনা দুই এক জন চিকিৎসককে শো কজ ও দায়সারা মন্তব্য ছাড়া গত এক বছরে তেমন কিছুই করে উঠতে পারেননি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও।

তেহট্টে পুলিশের গুলি
তেহট্টে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ (বাঁ দিকে)। সিআইডি শুরু করল সেই তদন্ত।
১৪ নভেম্বর তেহট্টে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল অশোক সেনের (৪৫)। গুরুতর আহত হন সুধাময় ঘোষ ও অখিলেশ ঘোষ নামে স্থানীয় দুই যুবকও। তেহট্টের ঘটনায় উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। অভিযোগ, কখনও শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা, কখনও আবার ১৪৪ ধারা দেখিয়ে প্রশাসন তেহট্ট আসতে দেয়নি মানবধিকার সংগঠন সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী ও নেতাদের। ১৭ নভেম্বর তেহট্ট কান্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। এদিনই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী তেহট্টে আসেন, ২৭ নভেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও ৩ ডিসেম্বর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও বিধায়ক আনিসুর রহমান তেহট্টে আসেন। ওই দিনই তেহট্টে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে বাম যুব সংগঠন। ৫ ডিসেম্বর বিজেপি, ৯ ডিসেম্বর কংগ্রেস ও ১০ ডিসেম্বর সিপিআইএম (লিবারেশন) তেহট্টে প্রতিবাদ সভা করে। ‘তেহট্ট ক্ষতে প্রলেপ দিতে’ ২০ ডিসেম্বর তেহট্ট হাই স্কুল মাঠে একটি জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় জনসভভাতেই মৃতের পরিবারকে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন তিনি।

হুমায়ুনের অভিযান
কেন্দ্রে মন্ত্রী হলেন অধীর চৌধুরী। রাজ্যে মন্ত্রিপদ ছাড়লেন মনোজ চক্রবর্তী।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্নে রেজিনগর থেকে জয়ী হন হুমায়ুন কবির। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘আস্থাভাজন’ বলেই পরিচিত হুমায়ুন গত ২০ নভেম্বর তৃণমূলে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন। তার মাত্র কয়েকদিন আগেও ১১ নভেম্বর পলাশি-জিয়াগঞ্জ ডবল লাইনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে হুমায়ুন জানিয়েছিলেন অধীরের নেতৃত্বের প্রতি তাঁর আস্থা রয়েছে। এবং অধীরকেই তাঁর নেতা। ওই ঘটনার ৯ দিনের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে ২১ নভেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয় হুমায়ুনের। তাঁকে প্রাণিসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়। সম্প্রতি বহরমপুরের একটি বেসরকারি সংস্থার দু’জন কর্মীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় দু’টি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

চলে গেলেন সিরাজ
গত ৪ সেপ্টেম্বর চলে গেলেন ‘অলীক মানুষ’ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ নিয়ে আসা হয় মুর্শিদাবাদের খোশবাসপুরের বাড়িতে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কলকাতাবাসও তাঁকে ভুলিয়ে দেয়নি দ্বারকা নদী, পাখির ঠোঁটে খড়কুটো, কাশফুলের বাদাবন ও হিজলকন্যাদের তাঁর স্বপ্ন ছিলতিনি এক দিন শুয়ে পড়বেন তাঁর গ্রামের মাটির শয্যায়। গ্রামের ধুলিতে যে নিবিড় জড়িয়ে ছিলেন, সেই খানে এক গাছের নিচে সবুজ ছায়ায় তিনি বিলীন হয়ে যাবেন। ঠিক সেই মাটিতে তিনিও অনন্ত ছুটির টানে ফিরে আসবেন, তা যেন পূর্ব নির্ধারিত ছিল।

পিতার আসনে
জুলাইয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন জঙ্গিপুরের সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়ী হন তাঁর পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ২০১১ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে নলহাটি বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন অভিজিৎবাবু। প্রণববাবু ২০০৪ সালে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকেই দ্বিতীয় বারের জন্যও সাংসদ হন তিনি।

ছাত্রদের সিনেমা
দ্বিতীয় কলকাতা শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মাই চেঞ্জিং এনভায়রনমেন্ট’ বিভাগে বদলে যাওয়া পরিবেশের সিনেমা বানিয়ে কলকাতার স্কুলের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে তৃতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে মুর্শিদাবাদের পিছিয়ে পড়া এলাকা খড়গ্রামের ইন্দ্রাণী হাসিনামায়ানি হাইস্কুলের ছেলেমেয়েরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.