সিঙ্গুরের জেলায় দাঁড়িয়ে টাটা গোষ্ঠীর নতুন কর্ণধারের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসার বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। একই সঙ্গে তুলোধোনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জমি-নীতিকেও।
হুগলির পোলবার আলিনগরে সিপিএমের কৃষক সংগঠনের ৩৪তম জেলা সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে রবিবার সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ এনেছিলেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, “টাটাবাবুর সঙ্গে না হয় বিরোধ ছিল। কিন্তু উনি তো এখন অবসর নিয়েছেন। সাইরাস মিস্ত্রি দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে তো দেখতেই পারেন।” মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “গুজরাতের হাতে আপনি গাড়ি কারখানা উপহার দিয়েছেন! আর এখানে সিঙ্গুরের পাশ দিয়ে যখন যাই, শ্মশান দেখি!” প্রসঙ্গত, হলদিয়ায় জানুয়ারিতে ‘বেঙ্গল লিড্স’ শীর্ষক শিল্পপতি সম্মেলনে টাটা গোষ্ঠীর নতুন কর্ণধার মিস্ত্রিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। |
পোলবার জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র |
পক্ষান্তরে, সিঙ্গুর থেকে হলদিয়া রাজ্য সরকারের শিল্প ও জমি নীতির সমালোচনায় সবক’টি দৃষ্টান্তই ব্যবহার করছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। হলদিয়ায় এবিজি-বিতাড়নের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের দাবিতে যুব পদযাত্রার আয়োজন করছে তারা। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী এ দিন জানিয়েছেন, ‘হলদিয়া বাঁচাও, শিল্প বাঁচাও’ দাবিকে সামনে রেখে আগামী ৭ থেকে ১৩ জানুয়ারি কলকাতা থেকে হলদিয়া পদযাত্রা হবে।
কর্মসূচির শুরুতে কলকাতায় সমাবেশে থাকবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম। পদযাত্রার শেষে হলদিয়ার জমায়েতে থাকবেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন, পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। আভাসবাবু জানিয়েছেন, দেড়শো যুবকর্মী আগাগোড়া পদযাত্রায় থাকবেন। এ ছাড়াও, পথে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে পদযাত্রায় যোগ দিতে পারেন।
সিঙ্গুর নিয়ে আলোচনার প্রস্তাবের পাশাপাশিই কৃষক সমাবেশে সূর্যবাবু এ দিন রাজ্য সরকারের জমি-নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, “শিল্পের জন্য যেখানে যা-ই জমি দরকার হোক না কেন, সরকার অধিগ্রহণ করবে না। কে করবে? দালাল! কাটোয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তো সরকারি কারখানা। অথচ তার জন্যও জমি অধিগ্রহণ হবে না। সল্টলেকে ইনফোসিস চলে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা জমি পাচ্ছে না।
আর অনুগত কিছু ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা (চিটফান্ড) জমি কেড়ে নিচ্ছে!” রাজ্য সরকারকে ‘চিটফান্ডের সরকার’ বলেও কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা।
চতুর্দিকে বিরোধীদের উপরে শাসক দল তৃণমূল আক্রমণ করছে বলে সূর্যবাবুর অভিযোগ। প্রসঙ্গত, এ দিন দুপুরে সম্মেলনে আসার পথে গুড়াপে সিপিএম সমর্থকদের একটি গাড়ি তৃণমূলের লোকজন আটকে দেয় বলে অভিযোগ। গাড়ির কাচ ভাঙচুর হয়। দুই সিপিএম সমর্থককে মারধর করা হয়। শ্রীকান্ত টুডু এবং অমিত ঘোষ নামে ওই দুই আহত সমর্থককে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সূর্যবাবু বলেন, “শুধু যে বামপন্থীদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে, তা নয়। কংগ্রেসের উপরেও আক্রমণ হচ্ছে। গতকাল আরামবাগে আমাদের পার্টি আফিসে তৃণমূল হামলা করল। বলল, ওখানে নাকি অস্ত্র আছে। এ রকম অস্ত্র রাখার নাটক অনেক দেখেছি আমরা! এক বার স্থানীয় পুলিশও আক্রমণ করেছে এই পার্টি অফিস। আমি যেখানকার নির্বাচিত বিধায়ক, সেখানকার দু-তিনটি বাদে অধিকাংশ পার্টি অফিসই তালা বন্ধ। সব জায়গায় তা-ই হচ্ছে।” সরকারি টাকায় মুখ্যমন্ত্রী দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে এ দিন ফের অভিযোগ করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর আরও অভিযোগ, “প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক পদে নিয়োগ, পুলিশে নিয়োগ এ সব প্যানেল নিয়ে ওদের চিন্তা নেই। বরং যদি বরবাদ হয়ে যায়, গোল্লায় যায় তাতে ওদের ভাল! কেননা লোক নিয়োগ করে মাইনে দেওয়ার মতো পয়সা ওদের হাতে নেই!” সমাবেশে এ দিন উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী, প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ পাল প্রমুখ। জেলা কৃষক সমিতির নতুন সভাপতি হয়েছেন দেবকুমার মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক হয়েছেন ভক্তরাম পান। |