বকবেন না, ও পড়ছে...

সিন ১: মেয়ে বাড়ির ডেস্কটপ কম্পিউটার বা বাবার ল্যাপটপ খুলে খাটের ওপর শুয়ে কিছু একটা করছে। এমন সময় মা-বাবার প্রবেশ ঘটল বাড়িতে বা ঘরে, এবং মা, “সারা দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার খুলে শুয়ে-বসে থাকো, পড়াশোনাটা কে করবে? আলমারিতে তালাবন্ধ করে রেখে দেব ল্যাপটপ...”

সিন ২: পড়ার টেবিলে অর্ধসমাপ্ত হোমওয়ার্কের খাতা খোলা পড়ে রয়েছে অথচ ছেলে কম্পিউটার-এ ডাউনলোড করা ‘মেন্টাল ম্যাথস’এর একটি কম্পিউটার গেম খুলে আপাতদৃষ্টিতে ‘খেলে’ চলেছে। বাবা ঘরে ঢুকে কোনও কথা না বলে সোজা দেওয়াল থেকে কম্পিউটার-এর মেন স্যুইচটাই অফ করে দিলেন!

উপরোক্ত দু’টি ঘটনাই অনেক বাবা-মায়ের কাছে আদর্শ মনে হবে। এবং মনে মনে তাঁরা হয়তো ইতিমধ্যে ধরেও নিয়েছেন যে এই আর্টিকল-টি তাদের সমর্থনে। মাপ করবেন, তা একেবারেই নয়! সিন এক এবং সিন দুই দু’টোই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনার নিদর্শন।
সাম্প্রতিক কালে নিশ্চয় শুনেছেন আমির খান, ওঁর ‘তালাশ’ ফিল্মের জন্য গুগল-এর সঙ্গে একটা প্রোমোশনাল টাই-আপ করতে চেয়েছিলেন। আমির খানের ইউএসপি-র যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা, তেমনই তাঁর ফিল্মের নাম ‘তালাশ’-এর এ যুগের সমার্থক শব্দ গুগল। আর আজ আমাদের রোজকার জীবনে গুগল-এর প্রাসঙ্গিকতা যেমন টুথপেস্ট/টুথব্রাশের মতন, তেমনই তার বিশ্বাসযোগ্যতা মায়ের স্নেহের মতো।
আমাদের সময় অর্থাৎ আশির দশকের শেষে বা নব্বই দশকের শুরুর দিকে আমরা কিন্তু প্রায়ই ‘সার্চ মোড’-এ থাকতাম জীবনের নানা অলিন্দে উঁকিঝুঁকি মারার জন্য এবং অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াতাম। কিন্তু আজকের বাচ্চারা কিন্তু আর সার্চ মোডে বেশিক্ষণ থাকে না, কারণ তারা ‘খুঁজে’ নিতে জেনে গেছে। আর তাই তারা আপনার/আমার থেকেও অনেক বেশি জেনে গেছেভাল এবং মন্দ-দুটোই! কাজেই কম্পিউটার বা সে অর্থে স্মার্ট ফোন থেকে তাদের বকেঝকে সরিয়ে না রেখে, ‘স্মার্ট’-লি ওটা ওদের হাতে তুলে দিন, এবং কৌশলে চিনিয়ে দিন ভাল-মন্দ দু’টো দিকই। আজ নানান ‘অ্যাপ্লিকেশনস্’ বা রকমারি কম্পিউটার গেমস এসে গেছে যেগুলির সঙ্গে যদি আপনি আপনার বাচ্চার পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন তাহলে তাদের আই কিউ এবং মেন্টাল অ্যালার্টনেস উপকৃত হবেই হবে। মেন্টাল ম্যাথস, আই কিউ টেস্ট, গুগল ম্যাপস, বিভিন্ন রকমের ভূগোল ও ইতিহাস সম্পর্কিত অ্যাপ্লিকেশনস আর নানা রকম পাজল্স, বুদ্ধি করে, এবং অবশ্যই কিছুটা রিসাচর্র্ করে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে ওদের স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিন।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমার মেয়ে এখন তেরো, কিন্তু ওর বারো বছরের জন্মদিনেই ওকে আমি ম্যাকবুক উপহার দিয়েছি এবং দু’মাস আগে ওর তেরো-তম জন্মদিনে দিয়েছি আই ফোন; আমার বাড়ির সকলের তীব্র অমতে। কিন্তু এই এক বছরেই শুধু নিজের স্কুল-এর প্রোজেক্ট নয়, (যে প্রোজেক্টগুলো আগে মায়েদের রাত জেগে করে দিতে হত) আমার বহু খুচরো কাজও ও করে দেয় - ‘বি ইট ফোটো’ অ্যাপস-এ ছোট্ট একটা এডিট জব বা ‘লজিক’-এ মিউজিকাল ট্র্যাকে অলটারেশন। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি আজকালকার ছেলেমেয়েদের ম্যানুয়ালও লাগে না আর বিশেষ কিছু শিখিয়েও দিতে হয় নাকারণ ওই ‘তালাশ’ বা গুগল! আমরা ‘খুঁজতাম’ আর ওরা খুঁজে পেয়ে গেছে। তাই এ যুগের ফেলুদাকে আর সিধুজ্যাঠাকে বিরক্ত করতে হত না। সত্যজিৎ রায়ও বোধহয় ফেলুদার হাতে একটা ল্যাপটপ রাখতেন। আমরাও গুগল-রূপী সিধুজ্যাঠাকে স্ক্রিনে দেখতে পেতাম। কে জানে ‘সোনার কেল্লা’ ছবিটাই বোধহয় হত নাহয়তো তোপসে গুগল সার্চ করে, গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেই ফেলুদাকে দেখিয়ে দিত ‘সোনার’ কেল্লাটা কোথায় কেল্লা ফতে!
তবে শেষ করার আগে একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কথা কিন্তু নিশ্চয়ই বলব। ইন্টারনেটের যুগে ছেলেমেয়েদের কম্পিউটার-এর ‘ইনফায়নাইট’ দুনিয়ায় আরও বেশি প্রবেশাধিকার বা ‘লিবার্টি’ দেওয়ার মানে কিন্তু পেরেন্টহুড-এর ঢিলেঢালা উপস্থিতি নয়। বরঞ্চ বাবা-মায়ের দায়িত্ব আরও বেড়ে যাওয়া। সজাগ দৃষ্টিতে খোঁজ রাখুন কী কী সাইট-এ বিচরণ করছে আপনার বাচ্চা বা টিন-এজার। নিয়মিত ভাবে মুছে ফেলুন সার্চ হিসট্রি এবং অপ্রয়োজনীয় বুকমার্কস, কুকিজ আর ক্যাশেস। চুপি চুপি ব্লক করে দিন যদি নজরে পড়ে এমন কিছু সাইট বা পেজ যা আপনার মতে আপনার বাচ্চার বয়সোপযোগী নয়। কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন হয়ে উঠুক আপনার বাচ্চার ‘স্মার্টলি- নলেজেব্লি’ বেড়ে ওঠার সঙ্গী, কিন্তু এটাও ওদের জানিয়ে রাখতে ভুলবেন না যে ‘ইউ আর ওয়াচিং’। আর হ্যাঁ, মনে রাখবেন, সঠিক নজরদারি রাখতে গেলে কিন্তু কম্পিউটার-এর একটু খুঁটিনাটি আপনাকেও জানতে হবে। ঠিক যেমন বাচ্চাকে মহেঞ্জোদরো-হরপ্পা পড়াবার আগে আপনাকে নিজে একটু পড়ে নিতে হয়েছিল!
কম্পিউটার প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আজ খোদ মানুষের মনের ব্যাপ্তি ঘটাচ্ছে আর তাই আপনার বাচ্চার মন যাতে ডানা মেলতে পারে তার জন্য ওকে সঠিক ‘রাস্তা’টির সঙ্গে বন্ধুর মতো পরিচয় করিয়ে দিন। তারপর দেখুন কী ভাবে “হি অর শি গুগলস অর কম্পিউটস হিস অর হার ওয়ে-আউট ইন তালাশ অব নিউ হরাইজনস...”। অবাক হয়ে দেখুন তাদের ছোট্ট হাতের ‘কুট্টি মামার খেল’।
মানুষের মন আজ একা নয়। মনের সঙ্গে টেকনোলজির সঠিক মিশ্রণে, সে বাস্তবিক অর্থেই হয়ে উঠতে পারে ‘সিটিয়াসঅল্টিয়াসফর্টিয়াস’। চেনা চেনা লাগছে শব্দগুলো? লাগবেই তো। এটাই তো অলিম্পিকের মটো: ‘ফাস্টারহায়ারস্ট্রংগার’। আর সেই দিবাস্বপ্নই তো দেখেন আপনি আপনার বাচ্চার জন্য। তাই না?
জয় বাবা কম্পিউটারনাথ।
স্মার্ট অ্যাপস
• আই কিউ গেমস: উইন ওয়ান মিলিয়ান, ব্রেন ওয়েভ, নো ইয়োর প্ল্যনেট।
• মেন্টাল ম্যাথ গেমস: হিট দ্য বটন, লুপ কার্ড, স্পিড চ্যালেঞ্জ।
• পাজেলস: হলিডে এক্সপ্রেস, লুক্সর।
• আই ফোন অ্যাপস: ফোটো-সিঙ্ক , পালস, রান-কিপার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.