সংগ্রামের বছর
জানি জানি আবার দেখা হবে
মান্না দে রীতিমতো শারীরিক অস্বস্তিতে আছেন এবং ভাল করে দীর্ঘক্ষণ বসতে পারেন না। মান্না দে ছবি তুলতে দিতে চান না, “এই চেহারা আর তুলো না।” মান্না দে দুর্দশাগ্রস্ত মানসিকতায় বলেন, “আমায় এ বার নিয়ে যাক, আর কষ্ট না দিয়ে, আমি তৈরি।”
মান্না দে লড়াই ছাড়তে রাজি নন এবং এখনও টিভিতে ফুটবল-ক্রিকেট দেখা ছাড়েননি। মান্না দে তীব্র গলায় বলেন, “আমি করুণার পাত্র হতে চাই না। সরকারের টাকায় কেন আমার চিকিৎসা হবে?” মান্না দে ক্যাথিটার অগ্রাহ্য করে নতুন অ্যালবামের কথা ভাবছেন!
বেঙ্গালুরুর কল্যাণনগরে তাঁর একতলার বাড়িতে ঢুকে নতুন অতিথির রীতিমতো সংশয় তৈরি হতে পারে, কোন মান্না দে তা হলে আসল? যন্ত্রণায় ভেঙে পড়া লোকটা? নাকি যন্ত্রণাকে কাটিয়ে ওঠার কঠিন প্রতিজ্ঞা সমন্বিত মানুষটা? এক এক সময় তাঁকে মনে হবে বিষাদের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি ‘কী চেয়েছি আর কী যে পেলাম’। কখনও তিনি আবার উদ্দাম, বহির্মুখী মনন ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না’।
সুলোচনা চলে গিয়েছেন গত জানুয়ারিতে দীর্ঘ ছয় দশক সান্নিধ্যের পর। ২০১২-র শেষ দিনে তিনি তো আর নেই, তাঁদের বেডরুমটা আছে। ওই দরজাটা এখন যন্ত্রণার প্রতীক। ও দিকে তাকালেই যে সুলোচনা!
এখন মান্না দে। ছবি: উৎপল সরকার
ওই দরজাটা অধুনা সংকল্পের প্রতীক। এ বছরের শুরুতেই স্ত্রী বিয়োগে চরম রক্তাক্ত মান্না দে যে বছরের শেষ দিনে নতুন সংকল্পের কথাও জানিয়ে দিতে পারেন। “অ্যালবাম করছি ওঁর স্মৃতিতে। ‘অ্যা ট্রিবিউট টু সুলোচনা’।”
কিন্তু এই মান্না তো ঠিক গান রেকর্ড করার অবস্থায় নেই। ঘণ্টা খানেক এক জায়গায় বসে থাকতেই পারেন না। তাতেও তাঁর রোখ কমার নয়। এই লোকটার অধুনাসঙ্গী ক্যাথিটার তো কী। মানসিকতায় সে ওসব ছুড়ে দিয়ে বলতে পারে, “করতে পারব না আমাকে শিখিয়ো না। গোবর গুহর আখড়ায় কুস্তি শিখেছি। প্রবল শরীর চর্চা করেছি।” এই অনমনীয় ৯৩ ঠিক করে নিতে পারে প্লেনে কলকাতা যাওয়ার ধকল নিতে পারব না। কিন্তু কলকাতা থেকে গানের ট্র্যাকটা তো করিয়ে আনতে পারি। বেঙ্গালুরুর স্টুডিওয় সেটা ডাব করব।
স্ত্রীর বিরহে চিরবিষণ্ণ তিনি। নতুন অ্যালবামের সুর তাঁর নিজের। গান লিখেছেন দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়-পরবর্তী যুগে যাঁর লেখা তিরিশেরও বেশি গান গেয়েছেন মান্না। গানের কথা পড়ে অভিভূত মান্না, “ঠিক যেন আমারই মনের কথা লিখেছে।” অ্যালবামের শিরোনাম এখনও ঠিক হয়নি। সম্ভাব্য ‘জানি জানি আবার দেখা হবে’। ২০১৩-তে মান্না-স্বপ্নের নতুন উজান এই প্রকল্প। যাকে ঘিরে তিনি বেঁচে থাকার নতুন জ্বালানি পেয়েছেন।
‘জানি জানি আবার দেখা হবে
চোখের জলে দিন গোনা তাই
সেদিন আসবে কবে’

হালকা সুরে গুনগুন করতে করতে আরও স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন মান্না দে। চলে যান অ্যালবামের আরও একটা গানে। ডান হাতে দেখান উল্টো দিকের ঘরটাকে। “ওখানেই তো সুলোচনা থাকত।”
এর পর গাইতে শুরু করেন,
‘...এই সেই ঘর
যেদিকে তাকাই সবকিছুতে
তোমার বড় যত্নের ছোঁয়া
কী করে মানব বলো
একসাথে যেতে যেতে
তোমার এমন করে চলে যাওয়া
কী করে মানব বলো’

চোখে প্রায় জল এসে যায় তাঁর। আর তখনই আগন্তুক নিশ্চিন্ত হয়ে যান, প্রথমে ভাবা দু’টো মান্না দে-র কোনওটাই আসল নয়। আসল মান্না দে এক প্রেমিক স্বামী। জীবনের ভালবাসার জন্য চরমতম অস্বস্তিতেও নব্বই-উর্ধ্ব যে আমদানি করতে পারে নতুন রোম্যান্টিসিজমের।
‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.