উত্তরবঙ্গে ঘূর্ণাবর্তের ফলে রোদের দেখা নেই সারা দিন। কনকনে ঠান্ডা। দক্ষিণে কড়া নাড়ছে শৈত্যপ্রবাহ। সব মিলিয়ে জবুথবু গোটা রাজ্য। তুলনা শুরু হয়ে গেল উত্তরপ্রদেশের ঠান্ডার সঙ্গে। চলতি স্পেলে শীতের বাউন্সার-বৃষ্টি আরও অন্তত তিন দিন চলবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর।
কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় তাপমাত্রা নামছে দ্রুত। বড়দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি নেমে বুধবার তা হয়েছে ১১.৫ ডিগ্রি। চলতি মরসুমে সব থেকে কম। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি তো কোথাও সাত। উত্তর ভারতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে যে-ভাবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় ঢুকে পড়ছে, তাতে রাজ্যের পাঁচ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ওই পাঁচটি জেলা হল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমান (শিল্পাঞ্চল)।
রোদ উঠতে দেরি হওয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও তেমন বাড়ে ছ না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে যাওয়ার মূলে আছে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। আর ঘন কুয়াশায় দীর্ঘ ক্ষণ সূর্য মুখ লুকিয়ে রাখার কারণ উত্তরের ঘূর্ণাবর্ত। ঘন কুয়াশার জন্য তিন দিন সূর্যের আলো থেকে কার্যত বঞ্চিত হয়েছে দুই দিনাজপুর ও মালদহ। কুয়াশার দাপটে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না গোটা উত্তরবঙ্গেই। একই অবস্থা মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকারও।
পশ্চিমের জেলাগুলির কনকনে উত্তুরে হাওয়া এবং মালদহের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্ত দুইয়েরই প্রভাব পড়েছে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায়। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতে সকালে রোদের দেখা মিলছে দেরিতে। তাতে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না। আর কনকনে উত্তুরে হাওয়ার ফলে কমে চলেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। চার দিন ধরে এ ভাবে দিন-রাতে সমান ভাবে তাপমাত্রা কমার উদাহরণ খুব বেশি নেই হাওয়া অফিসের কাছে।
দিন ও রাতে শীতের এই জব্বর কামড় কত দিন স্থায়ী হবে? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বুধবার বলেন, “উত্তরের ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারছে না। তীব্র উত্তুরে হাওয়ার উপস্থিতিই তার কারণ। উত্তুরে হাওয়ার তীব্রতা কিছুটা কমলে তবেই ওই ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হতে শুরু করবে। তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে আরও অন্তত দু’দিন লাগবে।”
অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত তীব্র শীত উপভোগ করা যাবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। উত্তরবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে শনিবার থেকে। সেখানে ফিরবে ‘আসল’ শীত। |