এক দিকে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে চাপানউতোর। এই দুইয়ে মিলিয়ে আগামিকাল জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের (এনডিসি) বৈঠক ফের কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের মঞ্চ হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, আগের বাম সরকার রাজ্যের ঘাড়ে যে ঋণের বোঝা চাপিয়ে গিয়েছে, তা হাল্কা করতে কোনও সাহায্য করছে না কেন্দ্র। বারবার বলা সত্ত্বেও সুদ ও আসল পরিশোধের উপরে তিন বছর স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হচ্ছে না তারা। ইউপিএ-তে থাকার সময় থেকেই এ নিয়ে সরব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ইউপিএ ছাড়ার পরে সেই সুর আরও তীব্র হয়েছে। মমতার অভিযোগ, কেন্দ্র রাজ্যকে ভাতে মারতে চাইছে।
উত্তরবঙ্গ সফরের কারণে আগামিকাল এনডিসি-র বৈঠকে মমতা নিজে থাকবেন না। (মহাকরণ সূত্রে আগে থেকে ঠিক থাকা উত্তরবঙ্গ সফরকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে দেখানো হলেও অনেকের মতে, কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিই তাঁর দিল্লি না-যাওয়ার কারণ) রাজ্যের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাতে রাজ্যের দাবিদাওয়ার পরিবর্তন হবে না। প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রীর লিখিত ভাষণ বৈঠকে পেশ করা হবে। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের করুণ আর্থিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ফের সাহায্যের দাবি তুলবেন অর্থমন্ত্রী। যা ঘিরে বৈঠক উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।
তবে সুদ-আসল পরিশোধে স্থগিতাদেশের দাবি না মানলেও মমতার অন্য একটি দাবি কেন্দ্র মেনে নিতে চলেছে বলে খবর। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতা বলছেন, কেন্দ্র উন্নয়ন খাতে অর্থ দেয় ঠিকই। তবে তা নির্দিষ্ট প্রকল্পে। সেই টাকা অন্য কোথাও খরচ করা যায় না। এই নিষেধ প্রত্যাহার করা হোক। মনমোহন-সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় অনুদান ভিত্তিক প্রকল্পগুলি ঢেলে সাজা হবে। এখন ১৪৭টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প রয়েছে। তা কমিয়ে ৫৯ করা হবে। ছোট ছোট প্রকল্পগুলি বড় প্রকল্পের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “এতে রাজ্যগুলির সুবিধা হবে। কেন্দ্রের দেওয়া অর্থ একটি প্রকল্পের বদলে অন্য খাতে খরচ করার ক্ষেত্রে যে কঠোর বাধানিষেধ ছিল, তা শিথিল হবে।” এ বিষয়ে যোজনা কমিশনের সদস্য বি কে চতুর্বেদীর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। তার সুপারিশই এখন কার্যকর করতে চলেছে কেন্দ্র।
কিন্তু তাতে কি আখেরে লাভ হবে রাজ্যের? মন্টেক নিজেই বলছেন, বিশেষ সুবিধা হবে না। ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলিকে অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন খাতে যে অর্থ দেওয়া হয় তা অন্য খাতে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হলে তবেই তাদের উপকার হতে পারে। রাজ্যের ১১টি জেলাকে অনগ্রসর বলে ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে। দার্জিলিং ও কোচবিহারকেও অনগ্রসর জেলা হিসেবে ঘোষণা করে একই ভাবে অর্থসাহায্য দেওয়ার দাবি তুলেছেন মমতা। এই খাতেই কেন্দ্রের কাছ থেকে সব চেয়ে বেশি অর্থ পায় রাজ্য।
এ প্রসঙ্গে যোজনা কমিশনের অন্যতম সদস্য অভিজিৎ সেন বলেন, “ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির জন্য চতুর্দশ অর্থ কমিশন কী সুপারিশ করছে, তা দেখতে হবে। অর্থ মন্ত্রকের সচিবদের নিয়েও কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটিও কিছু পদক্ষেপ করতে পারে।” সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কটাই অন্যতম বিচার্য।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়েও আগামিকাল পশ্চিমবঙ্গের তরফে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠতে পারে বলে যোজনা কমিশনের কর্তাদের আশঙ্কা। দ্বাদশ যোজনার চূড়ান্ত খসড়া নথিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে শহরে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৩৩.৯ শতাংশ। যার জন্য উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থা অন্যতম কারণ। দারিদ্রসীমা নির্ধারণে তেণ্ডুলকর কমিটির সূত্র কাজে লাগিয়ে যোজনা কমিশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামিকাল এ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবেন বলেই ধরে নিচ্ছে কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গও এতে গলা মেলাতে পারে।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যে মুসলিমদের অবস্থার জন্য বামফ্রন্টের অপশাসনই দায়ী। তাদের সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯০% কাজ করে ফেলেছে। তাদের দাবি, সংখ্যালঘুদের জন্য নানা উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের জন্য দিল্লিই রাজ্যকে বাড়তি টাকা দিয়েছে। |