এন্ডোসালফানের পরে এবার ‘ক্লোরো-পাইরি-ফস’। সম্প্রতি তিস্তায় যে এলাকায় প্রচুর মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে সেখানকার জলের নমুনা পরীক্ষায় ‘ক্লোরো পাইরি ফস’ জাতীয় কীটনাশক মিলেছে। বুধবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত এ কথা জানান। তিনি বলেন, “তিস্তা থেকে সংগ্রহ করা জল এবং মৃত মাছের নমুনা সংগ্রহ করে মারাত্মক পরিমাণে ক্লোরো পাইরি ফস জাতীয় একটি কীটনাশকের উপস্থিতি মিলেছে। ওই কীটনাশকের জন্যই মাছের মৃত্যু হয়েছিল।”
পর্ষদ জানিয়েছে, গত বছর জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদীতে নিষিদ্ধ কীটনাশক এণ্ডোসালফান মিশে যাওয়াতে বিষক্রিয়া ঘটেছিল। গত সপ্তাহে তিস্তা নদীতেও প্রচুর মৃত মাছ ভেসে ওঠে। নদীর প্রায় ২০০ মিটার এলাকার জল বিষিয়ে যায়। তবে এণ্ডোসালফা নিষিদ্ধ হলেও ক্লোরো পাইরি ফস নিষিদ্ধ নয়। এর দামও তুলনামুলকভাবে বেশি নয়। সার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, মাত্র ২০০ টাকায় সাধারণ সংস্থার ১ লিটার ক্লোরো পাইরি ফস বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এই কীটনাশক সরাসরি মানুষের পেটে গেলেও বিষক্রিয়া ঘটবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
সার বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারে সহজলভ্য এবং সস্তার ক্লোরো পাইরি ফস জাতীয় কীটনাশক সাধারণত মাটির নিচের পোকা, পিঁপড়ে মারতে ব্যবহার করা হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত আলু চাষের ক্ষেত্রে এই কীটনাশকের ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়। দলে বেশি করে জলে মিশিয়ে দেওয়াতে বিষের প্রভাবে মাছের মড়ক স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির মৎস্য আধিকারিক পার্থপ্রতিম দাস। তিনি বলেন, “আমাদের হাতে এখনও রিপোর্ট আসেনি। তবে কীটনাশক ব্যবহার করেই যে মাছ মারা হয় তা আগেই জানতে পেরেছি।”
এই কীটনাশকের প্রভাবে মৃত মাছ খেলে পেটের রোগ হতে পারে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সন্দীপ সাহা বলেন, “শুধু ক্লোরো পাইরি ফস জাতীয় কীটনাশক নয়, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মৃত মাছ খেলে পেটের রোগ হতেই পারে। চর্মরোগও হওয়ার আশঙ্কা থাকে।” গত সপ্তাহের শুরুতেই তিন দিন ধরে জলপাইগুড়ি শহরের তিস্তা বাঁধের ১ নম্বর স্পার লাগোয়া নদী জুড়ে প্রচুর মৃত মাছ ভেসে ওঠে। বেশি মাছ ধরার জন্যই নদীতে বিষ মেশানো হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত পুলিশ-প্রশাসন। |