|
|
|
|
ঠান্ডায় আশ্রয়হীনদের জন্য ব্যবস্থার নির্দেশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল ও দুর্গাপুর |
ঠান্ডা থেকে গৃহহীনদের বাঁচাতে আশ্রয়স্থলগুলিতে উপযুক্ত ব্যবস্থার নির্দেশ দিল জেলা প্রশাসন। বুধবার জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা আসানসোলে জানান, গৃহহীনদের রক্ষা করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলার সব মহকুমা ও ব্লক প্রশাসনকেও সতর্ক করা হয়েছে। সজাগ থাকতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদেরও।
গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা নেমেছে হু হু করে। সঙ্গে কনকনে হাওয়া। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। ইতিমধ্যে আসানসোলে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। আসানসোল স্বাস্থ্যজেলার মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টরাজ জানান, ঠান্ডার হাত থেকে আশ্রয়হীনদের রক্ষা করতে মহকুমা ও ব্লক স্তরের সরকারি ডাক্তারদের নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠান্ডায় অসুস্থ মানুষজনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা মাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অরিতাদেবী বলেন, “আসানসোল হাসপাতাল ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির আধিকারিকদের ভর্তি থাকা রোগীদের পর্যাপ্ত কম্বল সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, আসানসোলে পুরসভার উদ্যোগে পরিচালিত গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়স্থলগুলিকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে। তিনি বলেন, “ঠান্ডা থেকে মানুষজনকে বাঁচাতে আমরা এখনও পর্যন্ত আড়াই হাজার কম্বল বিতরণ করছি। আরও কিছু কম্বল বিতরণ করা হবে।” শিল্পাঞ্চলে আরও কত কম্বল দরকার তা মহকুমা প্রশাসনকে জানাতে বলেছেন তিনি। |
|
শীতের দাপটে কাবু আট থেকে আশি। আসানসোলে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি। |
গত ৯৬ ঘণ্টায় দুপুরবেলাতেও রোদের দেখা বিশেষ মিলছে না। ঘন কুয়াশা থাকায় সমস্যা বাড়ছে। ভর দুপুরেও মানুষজনকে শীতবস্ত্রে শরীর মুড়ে রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে। আসানসোল ও দুর্গাপুরের নানা এলাকায় গরিব মানুষজনকে খড়কুটো, গাছের পাতা, শুকনো ডাল জড়ো করে জ্বেলে তাপ নিতে দেখা গিয়েছে। বিকেল হওয়ার পরেই মানুষজন বাড়ির পথ ধরছেন। কার্যত জবুথবু হয়ে পড়ছে গোটা শহর। সন্ধ্যা নামতেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে গোটা শিল্পাঞ্চল। দোকানপাটের ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও একেবারে কমে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আরও কিছু দিন এমন অবস্থা চলবে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর।
শীতের কবলে সব থেকে বেশি কাবু হয়ে পড়ছেন স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষজন। আসানসোল মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই আশ্রয়হীন ছিলেন। তাঁদের নাম-পরিচয় এখনও মেলেনি। মঙ্গলবার আসানসোল স্টেশনের কাছে, আসানসোল উত্তর থানার তপসি বাবমন্দিরের কাছে ও আসানসোল দক্ষিণ থানার হাটন রোড এলাকায় তিনটি দেহ উদ্ধার হয়। |
|
ডান দিকে, দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারে ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান। |
বুধবার সকালে আসানসোল দক্ষিণ থানার রাহা লেন এলাকায় আরও একটি দেহ উদ্ধার হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক পরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরা জানান। এলাকায় পারদ সব চেয়ে বেশি নামে পানাগড়ে। ২০১০-এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পানাগড়ে তাপমাত্রা নেমেছিল ৫ ডিগ্রিতে। ২০১১ সালে ডিসেম্বরর মাঝামাঝি এক দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ৫.৭ ডিগ্রিতে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, এ বার তাপমাত্রা এখনও ততটা না নামলেও সেই আশঙ্কা রয়েছে। ফলে, শঙ্কায় রয়েছেন পানাগড়বাসীও। স্থানীয় বাসিন্দা সত্যপ্রকাশ সাউ, মহেশ মণ্ডলেরা বলেন, “তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি যে ভাবে হু হু করে হাওয়া বইছে, বেশ ভয় লাগছে। কষ্টও বাড়ছে। তাপমাত্রা আরও নামলে কী হবে জানি না!” |
|
|
|
|
|