সম্পাদকীয়...
সান্তা ও কিছু ক্লজ
যে মুহূর্তে সান্তা ক্লজ-এর আসিবার সময় ঘনাইল, পাশ্চাত্যের উপর অদ্ভুত নীতি-দ্বন্দ্বের মেঘ উদিত হইল। তবে কয়েক বৎসর পূর্বেই এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বহিষ্কৃত হইয়াছেন, শিশুদিগকে এই কথা বলিয়া দিবার জন্য: আদতে সান্তা ক্লজ বলিয়া কেহ নাই। উহা মনগড়া কল্পনা মাত্র। সত্য সত্য এক সদাহাস্যময় বুড়া চিমনি বাহিয়া আসিয়া খেলনা রাখিয়া যান না। দ্বিধাটি তবে এই: শিশুদের অপ্রিয় সত্য বলিয়া মায়াঘোর ভাঙিয়া দেওয়া উচিত, না কি, সুন্দর ফ্যান্টাসিগুলি, মিথ্যা জানিয়াও, সযত্নে লালন করা উচিত। সত্য বলিতে পণ করিলে, সান্তাকে লইয়া যত আশ্চর্য ঝলমলে গল্পকথা, তাহার স্লেজ-টানা বল্গা-হরিণ, উজ্জ্বল লোহিত নাসা-সম্পন্ন রুডল্ফ মৃগ, শিষ্ট শিশুদের অধিক পুরস্কৃত করিবার অভ্যাসের মধ্যে ন্যায়ের দ্যোতনা, সকলই চূর্ণ হইবে। কিন্তু মূল প্রশ্নটি চিত্তভঙ্গ লইয়া নহে, ঔচিত্যভঙ্গ লইয়া। যুগ যুগ ধরিয়া গাঁজাখুরি কাহিনিকে সত্য বলিয়া শিশুদের ভক্ষণ করানো হইতেছে কীসের ভিত্তিতে?
সম্ভবত, ভালবাসার ভিত্তিতে। সৌন্দর্যের ভিত্তিতে। সত্য কঠিন এবং কঠিনেরে ভালবাসিলে প্রভূত চরিত্রোন্নতি ঘটে বটে, কিন্তু শৈশব হইতেই মানুষকে হিড়হিড় টানিয়া সেই নির্মম সত্যের প্রাঙ্গণে ছাড়িয়া দিবার চল কোনও ক্ষেত্রেই নাই। নিতান্ত কোনও ঘটনার সূত্রে অপ্রিয় প্রসঙ্গ না উঠিয়া পড়িলে কেহ কি শিশুকে মৃত্যুর ধারণায় দীক্ষিত করে? কেহ কি যাচিয়া তাহাকে বুঝায়, তোমার বাবা-মা একত্রে আছেন বটে, কিন্তু চিত্তচাঞ্চল্য ঘটিলে আর না-ও থাকিতে পারেন, তখন ডিভোর্স নামক আইনি আয়ুধ তোমাদের পরিবারটিকে ভাঙিবে? বরং মোটামুটি সকলেই তাহাকে এই চিত্রনাট্যে মগ্ন রাখেন: পৃথিবী অবিমিশ্র শ্রীময়ী, জীবন অনন্ত, উদ্যান পক্ষীময় ও শীত চিড়িয়াখানাভিযান নিমিত্ত নির্মিত। পরবর্তী কালে শিশুটি ধীরে ধীরে জীবনের কঠোর সত্যগুলিকে আবিষ্কার করিয়া মহাতিক্ত সাহিত্য রচিয়া নোবেল পাইবে কি না তাহা ভিন্ন প্রশ্ন, কিন্তু প্রথমেই সকল ইতিবাচকতা খানখান করিয়া, শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যের রিপোর্টাজ ফাঁদিলে, তাহার সুষম বিকাশ ও প্রসন্ন চিত্তবৃত্তি ব্যাহত হইবে, তাহার কোমল ও ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক যথাযথ প্রস্তুত হইবার পূর্বেই আঘাত পাইয়া বিকৃত হইয়া যাইবে। তাই সান্তা ক্লজ, পক্ষিরাজ ও চাঁদের বৃদ্ধা প্রত্যেকেই তাহার সহিত ঘুম যাইবেন ও তাহাকে কল্পনামন্ত্রে শিক্ষিত করিবেন। তাহার চারি পাশে সুন্দরের ও সার্থকতার, আশ্চর্যের ও বিস্ময়ের আবহ গড়িয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে এই পৃথিবীর প্রতি তাহার ঔৎসুক্য ও মুগ্ধতা তাহাকে অপরিসীম গ্রহিষ্ণু করে। উল্টা মত: শিশুকে প্রথমে কতকগুলি ঠুলি পরাইয়া উদ্ভট গল্প ঝুলিতে ভরিয়া পথ চলিতে দেওয়া হইল, তাহার পর এক দিন তাহাকে স্তম্ভিত করিয়া অকস্মাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে সত্য আসিয়া সেই রূপকথাগুলিকে দুমড়াইয়া হত্যা করিল, ইহাই কি তাহার কাঙ্ক্ষিত বিকাশের পক্ষে সহায়ক? দিদিমা মারা যাইবার পর ইতিউতি প্রশ্ন করিয়া সে জানিল, সে-ও এই অবসানের আয়ত্তের বাহিরে নহে, তখন তাহার তড়িদাহত হৃদয়ের আছাড়িপিছাড়ি আর্তনাদ কি এক সর্বাঙ্গসুন্দর চিত্তবৃত্তি গড়িয়া তুলিবে, না, শেষাবধি সকল তৃপ্তিময় বিশ্বাসকে সন্দেহ করিতে শিখাইবে? এই ভাবে অনবরত আঘাত বিহ্বলতা বৈকল্য সহ্য করিতে করিতে সে বড় হইলে, পৃথিবীকে স্বপ্নভঙ্গের আগার ভিন্ন অন্য কিছু তাহার মনে হইবে কি? তাহার চেয়ে শিশুকে প্রথমাবধি সত্যের সরণিতে রওয়ানা করিয়া দিলে, সে আঘাত যেমন পাইবে, তেমন এই বিশ্বাস রাখিবে: তাহার বর্ম গোঁজামিলে নির্মিত নহে, সম্যক উপলব্ধিতে গঠিত। সাহস, দৃঢ়তা ও গ্রহিষ্ণুতা ইহাতেই বরং বৃদ্ধি পাইবে, ফাঁপানো প্রসন্নতার জোলাপে নহে। কেন পক্ষ ঠিক বলিতেছে, তাহা নিশ্চয় করিয়া বলা প্রায় অসম্ভব। রঙিন ল্যাবেঞ্চুসের বদলে সান্তা এই বৎসর এই মহা-ধন্দের উত্তর আনিয়া দিলে, জগতের অধিক মঙ্গল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.