পাননি সরকারি সাহায্য, মেলেনি বিপিএল কার্ড
মনে হতাশা চেপে মূর্তি গড়েন দৃষ্টিহীন শিল্পী
দুটো চোখেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। কিন্তু দৃষ্টিহীনতা তাঁকে থামাতে পারেনি। বলা ভাল, নিজের মনের জোরেই তিনি তার প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কারণ, তাঁকে তো কাজ করতেই হবে। দশ ভাইবোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তাই দৃষ্টিশক্তির প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করেই নেমে পড়েছিলেন মৃৎশিল্পের জগতে। আজ, যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে প্রতিমাশিল্পী হিসাবে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ ২৪ পরগনার রামনগরের মাথুর গ্রামের মদনমোহন ভট্টাচার্য।
বয়স প্রায় সত্তর ছুঁয়েছে। মাটির তাল নিয়ে যখন আঙুলের ছোঁয়ায় গড়ে তোলেন একের পর এক মূর্তি, তখন বিশ্বাস করা যায় না যে মানুষটি তাঁর দু’চোখের আলো হারিয়েছেন। অবশ্য এই দৃষ্টিহীনতা শৈশবের নয়। বছর পনেরো আগে স্থানীয় কড়াইবেড়িয়া গ্রামে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির সময় বিচালির ধান বাঁ চোখে ঢুকে যায়। সাধ্যমতো চিকিৎসা করেও সারানো যায়নি চোখ। পরে আস্তে আস্তে ডান চোখটিও নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসকদের পরীক্ষায় তিনি ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী।
নিজের সৃষ্টি নিয়েই মগ্ন মদনমোহনবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
ছোটবেলা থেকে মাটির পুতুল তৈরি করতে ভালবাসতেন মদনবাবু। বাবা জগানন্দ ভট্টাচার্য পুরোহিতের কাজ করতেন। দশ ভাইবোনের সংসারে বড় ভাই মদনবাবু। ফলে একার উপার্জনে এতগুলো মানুষের অন্নের সংস্থান করতে হিমসিম খাচ্ছিলেন জগানন্দবাবু। মদনবাবু তখন ক্লাস নাইনে পড়েন। বাবার কাঁধে এত চাপ দেখে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজে নেমে পড়লেন। ডায়মন্ড হারবারের বজরতলা গ্রামে প্রতিমা শিল্পী দুলাল চক্রবর্তীর কাছে কাজ করতে শুরু করলেন। যা আয় হত সবটাই তুলে দিতেন বাবার হাতে। বছর দশেক ওই ভাবে কাজ করার পর নিজেই শুরু করলেন প্রতিমা তৈরির কাজ। পেলেন প্রতিষ্ঠা। সম্মান। তাঁর হাতে তৈরি দুর্গা এলাকা ছাড়াও পাড়ি দিত কলকাতা শহরতলির বিভিন্ন মণ্ডপে। অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। কিন্তু তারই মধ্যে ঘটে গিয়েছে সেই দুর্ঘটনা। মূর্তি তৈরির ফাঁকে আচমকাই খড়ের টুকরো চোখে ঢুকে ক্ষতি হল বাঁ চোখের। সে তো সারলই না। উল্টে ধীরে ধীরে দৃষ্টি হারাল ডান চোখেরও। প্রথম দিকে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন মদনবাবু। এ বার কী ভাবে চালাবেন স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংসার। তাঁর তো অন্য কাজ জানা নেই। তবে থামলেন না। মনের জোরেই চালিয়ে গেলেন কাজ। আজও থেমে নেই তাঁর হাত। প্রতিমা কাঠামো বানানো থেকে মাটি লাগানো, এমনকী রং পর্যন্ত নিজের হাতেই করেন। চোখ এঁকে দেন স্ত্রী শক্তিদেবী। স্বামীর সঙ্গে কাজ করতে করতে তিনিও এখন পটু। সরিষা আশ্রমমোড়ে মদনবাবুর ছোট গুমটি দোকান। কিছুটা দূরে ভাড়াবাড়িতে সপরিবার বসবাস।
এ বার পুজোয় একটাই দুর্গাপ্রতিমা করেছিলেন। প্রতিমাসজ্জার জন্য মদনবাবুকে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার পক্ষ চেয়ারম্যান পান্নালাল হালদার এক হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। শিল্পীর কথায়, “চোখ দু’টো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম আর বুঝি প্রতিমা তৈরি করতে পারব না। কিন্তু উপায় কী! দুর্বল ও অসুস্থ শরীর নিয়ে অন্য পেশায় যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তাই মনের জোরেই প্রতিমা তৈরি শুরু করি।” আর এই ভাবেই অনুভূতি থেকে মূতি গড়ে চলেছেন  মদনবাবু।
প্রতিষ্ঠা, সম্মান পেলেও মনের এককোণে হতাশা, ক্ষোভ থেকে গিয়েছে শিল্পীর। স্ত্রী শক্তিদেবীর কথায়, “আজ পনেরো বছর ধরে স্বামী অন্ধ। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র রয়েছে। কিন্তু পাইনি কোনও সরকারি সাহায্য। দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি। পাইনি বিপিএল কার্ডও। বহুবার প্রশাসনের দোরে ঘুরেছি। খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে বার বার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.