|
|
|
|
এ বার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নজরদার কমিটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ক্ষেত্রে খসড়া নীতি প্রকাশ করল সরকার। বিনিয়োগ বেসরকারি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরে নজরদারির ব্যবস্থা রাখবে রাজ্য সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশিকা মেনে রাজ্য তার নীতি প্রণয়ন করেছে।
ক্ষমতায় আসার পরে এ পর্যন্ত দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। একটি টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যার বিল পাশ হয়ে গিয়েছে রাজ্য বিধানসভায়। দ্বিতীয়টি বারুইপুরে ইআইআইএলএম গোষ্ঠীর বিশ্ববিদ্যালয়, যার জন্য এখনও আইন পাশ হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, আরও কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে।
নীতি-নির্দেশে বলা হয়েছে, আবেদন জমা পড়লে তা খতিয়ে দেখবে একটি সরকারি কমিটি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার আবেদন করতে হলে জমি সংগ্রহ, ব্যাঙ্কে দশ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রাখা-সহ কী কী করণীয়, তা-ও নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবেদন খতিয়ে দেখতে কমিটিতে থাকবেন উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব বা তাঁর মনোনীত কেউ, রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বা তাঁর মনোনীত প্রার্থী, দু’জন শিক্ষাবিদ (এক জন হবেন অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য), স্থানীয় প্রশাসনের কেউ এবং এক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সরকার চাইলে তার পছন্দের অন্য কোনও ব্যক্তিকেও এই কমিটিতে রাখতে পারে। আবেদনের সঙ্গে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখে তার পরেই অনুমতি দেবে কমিটি। |
|
একক বিশ্ববিদ্যালয়। |
রাজ্যপালই আচার্য। |
সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা পরিচালন সমিতি। |
সমিতির গড়া সার্চ কমিটির সুপারিশে উপাচার্য নিয়োগ করবেন আচার্য। |
উপাচার্যের কার্যকাল তিন বছর। তা আরও তিন বছর বাড়তে পারে। |
পরের উপাচার্য আসা পর্যন্ত আগের জনই দায়িত্বে। |
নাক-এর অনুমোদন বাধ্যতামূলক। |
বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার দশ বছরের মধ্যে বন্ধ করা যাবে না। |
বন্ধ করার জন্য লাগবে সরকারের অনুমতি। |
পড়ুয়াদের স্বাথের্ দেওয়া সরকারি নির্দেশ মানতে বাধ্য বিশ্ববিদ্যালয়। |
সরকারি ব্যাঙ্কে অন্তত ১০ কোটির ফিক্সড ডিপোজিট রাখতে হবে। |
উচ্চশিক্ষা দফতরের নামে থাকবে ১ কোটি সিকিউরিটি ডিপোজিট। |
|
বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকঠাক চলছে কি না, তার দেখার জন্য থাকবে আরও একটি সরকারি কমিটি। ওই কমিটিতে থাকবেন উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব, উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যপাল মনোনীত দু’জন শিক্ষাবিদ। এ ছাড়া, রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন উপাচার্য, আইন দফতরের এক জন আধিকারিক এবং অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দফতরের এক আধিকারিক এই তিন জনকে মনোনীত করবে সরকার। প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই কমিটির সুপারিশ মানতে বাধ্য থাকবে। কোনও অনিয়ম হলে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে আর্থিক দণ্ড দিতেও বাধ্য করতে পারে সরকার।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, “অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ঠিকঠাক বজায় থাকে না। আমরা চাই, বেসরকারি বিনিয়োগ আসুক। কিন্তু পড়াশোনার মান খর্ব করে নয়। সেটা মাথায় রেখেই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।”
কিন্তু শিক্ষানুরাগীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার নিয়ে সরব, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা সমীচীন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারি নিয়ন্ত্রণ মানেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই তার প্রমাণ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা ইউজিসি-র প্রাক্তন সদস্য সুরঞ্জন দাস অবশ্য মনে করেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে দেওয়াই উচিত নয়। তাঁর কথায়, “এতে শিক্ষা বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইউজিসি-ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রাখারই পক্ষপাতী।” রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ বলেন, “এই নজরদারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা বজায় রেখেই। তা ছাড়া এর অর্থ কিন্তু প্রতি দিনের সব কাজে দখলদারি নয়।”
সরকারি নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে মেট্রোপলিটন শহরে পাঁচ একর, অন্যান্য শহরে সাত একর এবং গ্রামাঞ্চলে অন্তত দশ একর জমি লাগবে। আবেদনকারীর সদিচ্ছা ও প্রকল্প রিপোর্ট দেখে সরকার খুশি হলে ন্যূনতম জমির পরিমাণে ছাড় দেওয়া হতে পারে। ছাত্র ভর্তি, পঠনপাঠন, পরীক্ষা সব কিছুর জন্যই সরকারের লিখিত অনুমতি লাগবে। সরকার ফি-ও বেঁধে দেবে। বেসরকারি সংস্থা যদি হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে চায়? খসড়া নীতিতে জানানো হয়েছে, অন্তত দশ বছর চালু রাখার পরেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কথা ভাবতে পারে। তার জন্য সরকারের কাছে এক বছর আগে থেকে আর্জি জানাতে হবে। পড়ুয়ারা পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যাবে না। |
|
|
|
|
|