সম্পাদকীয় ২...
অধীরবাবুর আধ পা
নামে কী আসিয়া যায়, বলা কঠিন। তবে নামের মধ্য দিয়া নামকরণ-কর্তা তাঁহার নিজের স্বভাব, চরিত্র বা অভিপ্রায়ের ছাপ রাখিতে সচেষ্ট হন। বিশেষত যখন পুরানো নাম বদল করিয়া নূতন নামকরণ করা হয়। স্বাধীন ভারতে যখন পরিচিত পথ-ঘাট, বাগিচা-উদ্যানের বিদেশি নাম বদল করিয়া দেশীয় মহাত্মাদিগের নাম তাহাতে জুড়িয়া দেওয়া হয়, তখন তাহার নেপথ্য যুক্তি সহজেই অনুধাবন করা যায়। ইতিহাসের নিরিখে বিচার করিলে অবশ্য পুরানো নাম বহাল রাখাই বিচক্ষণতার পরিচয়, যেহেতু নাম-বদলের সঙ্গে-সঙ্গে সেই নামের সহিত জড়িত ইতিহাসটুকুও মুছিয়া যাওয়ার শঙ্কা থাকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ সবের ধার ধারেন না। তাই রেলমন্ত্রী থাকা কালে তিনি মেট্রো রেলের স্টেশনগুলির নাম একের পর এক বিশিষ্টের নামে দাগাইয়া দেন।
বিশিষ্টরা সকলেই সমগোত্রের নন। কেহ যদি স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কেহ তবে কবি, আবার অন্য কেহ সিনেমার নায়ক। এ ভাবেই কলিকাতার পাতালস্থ রেল-স্টেশনগুলির স্থাননাম পাল্টাইয়া সুভাষ-ক্ষুদিরাম-নজরুল-উত্তমকুমার-নেতাজি প্রমুখের নামে রাখা হইয়াছে। তখনই এই মর্মে মৃদুস্বরে কিছু আপত্তি শুনা গিয়াছিল যে, ব্যক্তির নাম দিয়া স্থান বুঝানো হইবে কেমন করিয়া? কী ভাবে উত্তমকুমার বলিলে টালিগঞ্জ বুঝাইবে, মাস্টারদা বলিলে বাঁশদ্রোণী, নজরুল বলিলে গড়িয়া-বাজার আর গীতাঞ্জলি বলিলে নাকতলা? সুভাষের সহিত নেতাজি (অর্থাৎ নিউ গড়িয়ার সহিত কুদঘাট) কিংবা নজরুলের সহিত গীতাঞ্জলি (অর্থাৎ গড়িয়ার সহিত নাকতলা) গুলাইয়া যাইবে না তো? কিন্তু পরিবর্তনের কাণ্ডারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তখন নাম-পরিবর্তনের নেশায় পাইয়াছে। তাঁহাকে থামায় কে? ফলে যাত্রীরা নিত্য উত্তমকুমার হইতে ক্ষুদিরামে চলিয়াছেন। অবশ্য নেত্রীর ভক্তবৃন্দ বলিতেই পারেন, ছাতার নাম যদি অবিমৃশ্যকারিতা হইতে পারে, তবে স্টেশনের নাম মাস্টারদা নয় কেন?
এই হযবরল হইতে মুক্তি দিতে রেল দফতরের নূতন প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী উদ্যোগী হইবেন, এমন প্রত্যাশা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি রাখিবার দায় তাঁহার নাই। অধীরবাবু অর্ধেকটা আগাইলেনও, কিন্তু অর্ধেকটাই। তিনি বলিলেন, স্টেশনের পুরানো নামগুলিও ফিরাইয়া আনা হইবে, কিন্তু নূতন মনীষী-নামের পাশাপাশি। নূতন নামকরণের স্বেচ্ছাচারকে কুলার বাতাস দিয়া বিতাড়িত করাই যেখানে উচিত ছিল, সেখানে অধীরবাবুর এই দ্বিধার কারণ স্পষ্ট নয়। তিনি কি ভাবিতেছেন যে, কুলার বাতাস দিয়া মাস্টারদা আদি নামাবলিকে বিদায় করিলে বাঙালি ক্ষুব্ধ হইবে? বলিবে, মনীষীদের অপমান? বলিতে পারে। কিন্তু সেই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক নিন্দা বা ক্ষোভকে অগ্রাহ্য না করিতে পারিলে আর পরিবর্তনের অর্থ কী? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নিতান্ত হাস্যকর নামকরণ-যজ্ঞ করিয়াছিলেন। তাহার বোঝা বহন করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই। রেল-প্রতিমন্ত্রী যথাযথ স্থাননামগুলি ফিরাইয়া দিন। এই স্থাননামগুলি এই শহরের ভৌগোলিক ও স্থানিক ইতিহাসের সহিত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াইয়া আছে। এগুলির উপর খোদকারি করার প্রয়োজন নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.