সম্পাদকীয় ১...
নূতন সংকটে মিশর
হিংসার সহিত গণতন্ত্রের সম্পর্কটি কস্মিন্কালেও ভাল নয়। এমনকী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হিংসার আশ্রয় লইলেও দেখা যায় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর হিংসা পুনরুজ্জীবিত হইয়া গণতন্ত্রের বিনষ্টির সুযোগ সন্ধান করে। পৃথিবীর ইতিহাসে নানা সময়ে নানা দেশে এমন দেখা গিয়াছে, গত সপ্তাহে মিশরেও আবার একই ট্র্যাডিশন দেখা গেল। মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের কয়েক দশকব্যাপী স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিবার পর যে মহম্মদ মুর্সি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন, সেই মুর্সিই আবার গত সপ্তাহে দেশের সকল ক্ষমতা, আইন-বিভাগীয়, বিচার-বিভাগীয় ও শাসন-বিভাগীয় সকল কার্যভার নিজের হাতে লইবার ঘোষণায় দেশবাসীকে স্তম্ভিত করিলেন। বুঝা গেল এই নূতন নেতা প্রাক্তন একনায়কের অপেক্ষাও অধিকতর ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ চাহিতেছেন। কায়রো উত্তপ্ত উত্তাল হইয়া উঠিল, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মিছিলে ছাইয়া গেল। জনতার রোষের সামনে প্রেসিডেন্ট মুর্সি আপাতত খানিকটা ধীরগতিতে আগাইলেও এই গতি সম্ভবত অপ্রতিরোধ্য, অদম্য। যথেষ্ট আটঘাঁট বাঁধিয়াই তিনি (এবং তাঁহার দল, মুসলিম ব্রাদারহুড) যাত্রারম্ভ করিয়াছেন। দেশের ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে তাঁহাদের অ্যাজেন্ডা স্পষ্ট ও দৃঢ়। সুতরাং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের দাবি স্বীকার করিয়া বিচারপতিদের সহিত প্রেসিডেন্ট মুর্সি বৈঠকে বসিবেন ঠিকই, কিন্তু তাহাতে সিদ্ধান্তসমূহ পুনর্বিচারের কতখানি সুযোগ থাকিবে, সে বিষয়ে সংশয় থাকিয়াই যায়।
দুর্ভাগ্য ইহাই যে, এই সবে বিপ্লবধ্বস্ত মিশরের সাধারণ মানুষের জীবন ক্ষণিক স্বস্তি পাইয়াছিল, তাহার মধ্যেই আবার এই রাজনৈতিক অস্থিরতা। আশঙ্কা,পরিস্থিতি ক্রমশই গুরুতর আকার ধারণ করিবে, দেশকে একটি সংকট-বিন্দুতেও লইয়া যাইতে পারে। প্রেসিডেন্টের ঘোষণাটি কেন্দ্র করিয়া মিশরীয় সমাজ এখন দ্বিধাবিভক্ত, ইসলামি-পন্থী ও অ-ইসলামি প্রগতিশীল, গণতন্ত্রীদের মধ্যে। প্রেসিডেন্ট-এর সাম্প্রতিক ডিক্রির লক্ষ্য ছিল প্রধানত দুটি সংস্কার: বিচারবিভাগকে ক্ষমতাহীন, এবং কনস্টিটিউট অ্যাসেম্বলি-কে সাময়িক ভিত্তিতে অবিসংবাদী করিয়া দেওয়া। কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি যেহেতু সংবিধান প্রস্তুত করিতেছে, এবং সেই সংবিধান ইসলামি-ভাবাপন্ন হইবারই সম্ভাবনা, লিবারেল গণতন্ত্রকামীরা তাই আশঙ্কায় অস্থির, তাঁহাদের এত কষ্টার্জিত বিদ্রোহের ফলে প্রাপ্ত গণতন্ত্র ‘হাইজ্যাক্ড’ হইবার ভয়ে কাঁটা। প্রসঙ্গত দুইটি জরুরি কথা। প্রেসিডেন্ট-এর মুখে এই ডিক্রি হইতে পুনরায় একনায়কত্বের আশঙ্কা তৈরি হইলেও, বাস্তবিক, প্রভূত প্রমাণ রহিয়াছে যে তাঁহার দল মুসলিম ব্রাদারহুডও তাঁহার সিদ্ধান্তের সরাসরি অংশীদার। দ্বিতীয়ত, মুর্সির এই ডিক্রি আকস্মিক নহে, হোসনি মুবারকের পতনের পর মিশরের সামরিক বাহিনী ‘স্কাফ’-এর হাতে যে অতিরিক্ত ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হইয়াছিল, মহম্মদ মুর্সি আসিয়াই তাহার পরিবর্তনের চেষ্টা করিয়াছেন। ইতিমধ্যেই দেখা গিয়াছে, স্কাফ-এর ক্ষমতাহ্রাস ও ফিল্ড মার্শাল তান্তাওয়ি প্রমুখ বিভিন্ন শীর্ষ সামরিক নেতার অপসারণের মাধ্যমে দেশের প্রেসিডেন্টের হাতে সামরিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ।
প্রেসিডেন্ট মুর্সি-কে সম্মুখে রাখিয়া ইসলামপন্থী মিশরের সহিত বিরোধীদের এই তীব্র রাজনৈতিক টক্করের কূটনৈতিক গুরুত্বও প্রচুর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই জানাইয়া দিয়াছে, মুর্সি তাঁহার ঘোষণানুযায়ীই অগ্রসর হইলে প্রতিশ্রুত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ মকুব ও পাঁচ বিলিয়ন ডলার আই এম এফ ঋণ, সবই বাতিল হইবে। একমাত্র গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে থাকিলেও মার্কিন সহায়তা থাকিবে, নতুবা নহে: এই হুমকির পশ্চাতে অনুচ্চারিত আসল কথাটি হইল, ইসলামিকরণের চেষ্টা থামিলে তবেই নূতন মিশরের সহিত মার্কিন কূটনৈতিক সংস্রব সম্ভব। তীব্র সংকটদীর্ণ পশ্চিম এশিয়ার এত দিনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিত্রদেশটির সহিত যদি আমেরিকার সম্পর্ক চুকাইতে হয়, তাহা ওয়াশিংটনের পক্ষেও দুঃসংবাদ হইবে। সব মিলাইয়া আরব বসন্তের পর, গাজা-ইজরায়েল সংঘর্ষের পর পশ্চিম এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্য এমনিতেই টলোমলো, মিশরের বর্তমান সংকট তাহাকে আরও বিপন্নতার দিকে ঠেলিয়া দিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.