নগদ হস্তান্তরের ফায়দা নিতে আসরে কংগ্রেস
লোকসভার ভোট সময়ে হলেও হাতে রয়েছে মাত্র দেড় বছর। সেই ভোটকে পাখির চোখ করে আস্তিন থেকে আরও একটা অস্ত্র ছাড়ল কংগ্রেস! ভর্তুকির টাকা সরাসরি আম-আদমির হাতে তুলে দেওয়ার প্রকল্প।
নগদ হস্তান্তরের প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে গত কালই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আর আজ কংগ্রেস সদর দফতর থেকে সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মোড়কে ঘোষণা করলেন কেন্দ্রের দুই শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম ও জয়রাম রমেশ। এ দিন জয়রাম বললেন, “২০০৯ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে ভর্তুকির অর্থ নগদে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। তা এ বার রূপায়ণ করছে সরকার। এটা শুধু একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, কংগ্রেসের রাজনৈতিক অভিযান।” এমনকী এই প্রকল্পের স্লোগানেও কার্যত রাজনীতির ভাষা: ‘আপকা প্যায়সা আপকে হাত’।
২০১৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্রের ৪২টি প্রকল্পের অনুদান ও ভর্তুকি বাবদ প্রায় তিন লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকা সরাসরি ‘আমআদমি’-র কাছে পৌঁছে দিয়ে আগামী লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি সেরে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। এবং দলীয় নেতাদের মতে, এটাই শেষ তাস নয়। এর পর রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পরের বাজেট হবে জনমোহিনী। আর তার পর তুরুপের তাস করা হবে খাদ্য সুরক্ষা আইনকে। বস্তুত, নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে খাদ্য সুরক্ষা আইনের ভিতই প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কংগ্রেসের এই চাল তাদের বিপদে ফেলতে পারে বুঝে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরাও। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “এটা জনগণের মন ভোলানোর চেষ্টা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়। ভোটের মুখে এসে সরকারের আমআদমির কথা মনে পড়ল!” দলের আর এক নেতা তো এ-ও বললেন যে, “ভোটের আগে মানুষকে ঘুষ দিতে চাইছে সরকার।” আর বাম নেতাদের বক্তব্য, সরকার আসলে নগদ হস্তান্তরের নামে ভর্তুকির বোঝা কমাতে চাইছে। লোককে বেকুব বানাচ্ছে কংগ্রেস।
বিরোধীদের এই সমালোচনার জবাব দেওয়ার রণকৌশলও কিন্তু কংগ্রেস ছকে ফেলেছে। ঠিক হয়েছে, এই নগদ হস্তান্তর প্রকল্প নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। সেই প্রচারের সুর কী হবে তার ইঙ্গিত দিয়ে চিদম্বরম আজ বলেন, “সামাজিক সুরক্ষার ছবিটাই পাল্টে দেবে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।” আর জয়রামের দাবি, এটা শুধু নগদ হস্তান্তর নয়, বস্তুত আম-আদমির হাতে অধিকার হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি জানান, ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম দফায় যে ৫১টি জেলায় সরাসরি নগদ হস্তান্তর প্রকল্প চালু হবে, সেখানকার কংগ্রেস সভাপতিদের নিয়ে রাহুল গাঁধী শীঘ্রই একটি কর্মশালা করবেন। সরকারের এই পদক্ষেপ কংগ্রেস কী ভাবে তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে সেই দাওয়াই বাতলে দেবেন রাহুল।
হাতে ভর্তুকি
• ৫১টি জেলায় ১ জানুয়ারি থেকে নগদ হস্তান্তর
• সারা দেশে ২০১৩-র মধ্যে
• গ্রামে মিনি এটিএম হাতে যাবেন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি
• আপাতত মিলবে বার্ধক্য ভাতা, ছাত্রবৃত্তি-সহ ১৪টি প্রকল্পের টাকা
• রান্নার গ্যাসে ভর্তুকিও নগদে কিছু দিনের মধ্যে
• খাদ্য ও সারে ভর্তুকি নগদে দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা
পরে রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, তথ্যের অধিকার আইন পাশ, একশো দিন কাজের প্রকল্প, শিক্ষার অধিকারের মতো ঐতিহাসিক সব আইন পাশ হয়েছে ইউপিএ জমানায়। কিন্তু খামতি থেকে গিয়েছে তা নিয়ে প্রচারে। সেই প্রচারটাই এ বার আগ্রাসী হয়ে করতে চাইছেন রাহুল।
তবে নগদ হস্তান্তর প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে বড় রকমের ঝুঁকিও রয়েছে, সে কথাও কবুল করছেন কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতারা। কারণ, যদি দেখা যায় যে কিছু পরিবার সুবিধা পেল না, তা হলে বৈষম্যের বাতাবরণ তৈরি হবে। এবং তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বস্তুত সে কথা মাথায় রেখে এখনই ৪২টি প্রকল্পের ভর্তুকি ও অনুদান সরাসরি হস্তান্তর করা হচ্ছে না।
চিদম্বরম আজ জানান, আপাতত ছাত্রবৃত্তি, বার্ধক্য ভাতা, স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ খাতে অর্থ নগদ হস্তান্তর করা হবে। পরে দেওয়া হবে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বাবদ ভর্তুকির টাকা। খাদ্য বা সারে ভর্তুকির টাকা নিয়ে সরকার যে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না, তা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভর্তুকির বিষয়টি জটিল, সারে ভর্তুকির বিষয়টি আরও জটিল। ওই দু’টি বিষয়ে নগদ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বাইরে অর্থনৈতিক দিক থেকেও কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, এতে সরবরাহ ব্যবস্থার ছিদ্র বন্ধ করে ভর্তুকির বোঝা কমানো সম্ভব হবে। যদিও বিজেপি-র অভিযোগ, এই প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণ মানুষের হাতে কী ভাবে ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে তা-ও আজ ব্যাখ্যা করেছেন চিদম্বরম। তিনি জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ‘ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট’ নিয়োগ করবে। ‘ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট’ কোনও স্কুল শিক্ষক বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সমবায় সংস্থা হতে পারে। ওই করেসপন্ডেন্টের হাতে একটি মিনি এটিএম মেশিন থাকবে। যা থেকে মাসের গোড়ায় ভর্তুকির টাকা সরাসরি আম-আদমির হাতে তুলে দেওয়া হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.