রানিবাগানে রাতপাহারা দেন। সকালে দু’দন্ড বিশ্রাম নেবেন উপায় নেই। কারণ তাঁর উপরে যে রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব! ওই চক্র এ বারও সূচনা করবে কোচবিহার রাসমেলার! দায় সামলাতে পরিশ্রম করে চলেছেন কোচবিহার শহর লাগোয়া হরিণচওড়া এলাকার বছর পঞ্চাশের আলতাফ। লক্ষ্মী পূর্ণিমা থেকে এমন কাটছে সময়। কিন্তু বংশপরম্পরায়ের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এতটুকু বিরক্তি নেই মুখে। আলতাফ জানান, দাদু পান মহম্মদ মিঁয়ার পরে বাবা আজিজ মিঁয়া রাসচক্র গড়েছেন। এখন তাঁর উপরে দায়িত্ব বর্তেছে। দাদুর আগে কে ওই চক্র তৈরি করতেন? ঠিক মনে করতে পারলেন না। বাবা ও দাদুর মুখে শুনেছেন রাসচক্র অন্য কেউ গড়তে পারে না। তাঁদেরই গড়ে দিতে হয়। শুধু তাই নয়। ওই চক্র ঘোরানোর পরে শুরু হয় মেলার। আলতাফ তাই ফাঁকি দিতে নারাজ।
কোবিহারের জেলাশাসক তথা দেবত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি মোহন গাঁধী বলেন, “রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা হবে। এটাই ঐতিহ্য। গতবছর প্রথম ওই চক্র ঘোরানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এবারও মুখিয়ে আছি। কি সুন্দর কত যত্ন নিয়ে ওই চক্র তৈরি করা হয়।” ২৭ নভেম্বর মন্দির চত্বরে বিশেষ পুজোর পরে রাত সাড়ে নটা নাগাদ রাসচক্র ঘোরাবেন জেলাশাসক। তারপরে চক্র ঘোরানোর সুযোগ পাবেন ভক্তরা। রাসচক্র ঘোরাতে প্রতিদিন উপচে পড়ে ভিড়। |
কেমন দেখতে ওই চক্র! উচ্চতা প্রায় ২২ ফুট। বাঁশ, কাগজ, পাট দিয়ে তৈরি হয়। ইতিমধ্যে কাজ অনেকটা এগিয়েছে। আলতাফ বলেন, “অন্য বছর দিনরাত কাজ করার সুযোগ ছিল। এ বার সেটা নেই। কারণ, দেবোত্তরের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে রানিবাগানে নৈশপ্রহরার কাজ করছি। তাই দিনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। সময় মতো কাজ শেষ না করা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।” ওই কাজে আলতাফের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রী বাবলি বিবি, ছেলে আমিনুল হোসেন। বাঁশ কেটে দেওয়া থেকে কাগজের নানা কারুকাজ করে সাহায্য করছে তাঁরা। কিন্তু খুশির কাজেও উদ্বেগ ছুঁয়ে যায়। বাঁশ, কাগজ, পাট সহ অন্য উপকরণের দাম বেড়েছে। বরাদ্দ সাড়ে ৬ হাজার টাকা কিছুটা বাড়ানোর আর্জি রেখেছেন। কিন্তু এখনও আশ্বাস মেলেনি। আলতাফের স্ত্রী বলেন, “রাসচক্র গড়ার কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অনেকে আসে। কাজ ফুরিয়ে গেলে সম্পর্ক শেষ।” |