‘অপারেশন এক্স’ সফল।
কিন্তু ‘অপারেশন কে জে’?
‘অপারেশন এক্স’ কী, পুণের ইয়েরওয়াডা জেলে আজমল আমির কসাবের ফাঁসির পরে জেনেছে দেশ।
ঠিক এক বছর আগে ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান শুরুর সময়ে তার কোনও নাম দেওয়া হয়নি। কিষেণজি নিহত হওয়ার পরেই সিআরপি ওই অভিযানকে অভিহিত করেছিল ‘অপারেশন কে জে’ নামে।
কিন্তু ‘অপারেশন এক্স’-এর মতো ‘অপারেশন কে জে’-ও যে পুরোপুরি সফল, বুক বাজিয়ে তা বলতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা।
কেন? কারণ, কিষেণজির ছায়াসঙ্গীদের আতঙ্ক এখনও তাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এক বছর তল্লাশি চালিয়েও ধরা যায়নি আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল এবং বিকাশ ওরফে সিঙ্গরাইল টুডুকে। দু’জনেই মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য। বিকাশ আবার পার্টির সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনেরও সদস্য। অধরাদের তালিকায় রয়েছে পার্টির রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সদস্য রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতার নামও। |
এখনও অধরা |
বিকাশ ওরফে সিঙ্গরাইল টুডু
কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের সদস্য |
আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল
রাজ্য কমিটির সদস্য |
রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুল
রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সদস্য |
জয়ন্ত ওরফে সাহেবরাম হেমব্রম
ঝাড়গ্রামের এরিয়া কম্যান্ডার |
তারা বিকাশের স্ত্রী
লালগড়ের এরিয়া কম্যান্ডার |
|
কিষেণজির মৃত্যুর পরে পুলিশ-কর্তাদের ধারণা হয়েছিল, ছত্রভঙ্গ মাওবাদী নেতাদের সহজেই কাবু করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে প্রথমে সুচিত্রা মাহাতোর আত্মসমর্পণ, মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম, কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক অভিষেক মুখোপাধ্যায় ওরফে অরণ্য এবং নয়াগ্রাম-গোপীবল্লভপুরে মাওবাদীদের এরিয়া কম্যান্ডার রঞ্জন মুন্ডাকে গ্রেফতার করা ছাড়া তেমন কোনও সাফল্য আসেনি বলে ধারণা পুলিশ-কর্তাদের একাংশেরই।
এর মধ্যেই নতুন একটি বার্তায় ফের উদ্বেগ বেড়েছে স্বরাষ্ট্র দফতরের। কিষেণজি-হত্যার বদলা নিতে এবং সমর্থকদের চাঙ্গা করতে কিষেণজির জায়গায় আসছেন কাদরি সত্যনারায়ণ রাও ওরফে কোসা। ২০১০-এর এপ্রিলে দান্তেওয়াড়ায় সিআরপি-র প্রায় ৮০ জন জওয়ানকে হত্যার অন্যতম মূল চক্রী কোসা, জঙ্গলমহলে ফের আঘাত হানতে চলেছেন বলে গোয়েন্দা-বার্তায় জানানো হয়েছে। তাই ‘অপারেশন কে জে’-র বর্ষপূর্তিতে সাফল্য উদ্যাপন করবেন কি, উল্টে ব্যর্থতার কাঁটাই যেন খচখচ করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের মনে।
সিআইডি-র ডিরেক্টর জেনারেল ভি ভি থাম্বির কথায়, “কিষেণজি নিহত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জঙ্গলমহলে সুচিত্রা মাহাতো ছাড়া তার ছায়াসঙ্গীদের প্রায় কেউই ধরা পড়েনি। রঞ্জিত পাল আকাশ, বিকাশ, জয়ন্তেরা জঙ্গলমহলের কোনও গ্রামে রাত কাটিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাচ্ছে। ফের সমস্যা তৈরিতে এই ক’জনই তো যথেষ্ট। ওদের সকলকে ধরার আগে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই।” থাম্বির বক্তব্য, কিছু দিনের মধ্যেই পুরোদমে শীত পড়ে যাবে। রাত বড়, দিন ছোট। নাশকতা ঘটানোর উপযুক্ত সময়। “এই সময়ে ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে আমাদের,” বলছেন সিআইডি-প্রধান। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা আইবি-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বাণীব্রত বসুও বললেন, “কিষেণজির মৃত্যুর পরে এক বছর কেটে গেলেও ওই সব মাওবাদী নেতাকে ধরতে না-পারাটা অবশ্যই সমস্যার বিষয়।”
অন্য সমস্যাও আছে। সেটা হচ্ছে প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলোয় মাওবাদীদের জনভিত্তি নির্মূল করতে না পারা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, কিষেণজি এবং তাঁর সঙ্গীরা পিছিয়ে পড়া ওই সব এলাকার মানুষদের আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। ঘনঘন চিকিৎসা শিবির করতেন। বিনামূল্যে ওষুধও বিলি হত। এই সব কাজের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। কিষেণজির সঙ্গীরা এখনও তারই সুফল পাচ্ছে, ধারণা গোয়েন্দাদের। তাঁরা বলছেন, বাসিন্দাদের সহানুভূতি কিছুটা অটুট আছে বলেই রাতে গ্রামে সভা করেও সহজেই ঝাড়খণ্ডে গা-ঢাকা দিতে পারছে বিকাশ, রঞ্জিতেরা। |