দু’কিলোমিটার দূরে পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের দফতর, বাংলোও। আড়াই কিলোমিটার দূরে থানা। অথচ ছ’মাস ধরে রাতের অন্ধকারে নার্সিং হস্টেলে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ছাত্রী আবাসে চুরি, ছিনতাই চালিয়ে দরজা-জানলাও রড দিয়ে দুষ্কৃতীরা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। বার বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও বন্ধ করা যায়নি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য।
শুক্রবার এই অভিযোগ তুলে বাঁকুড়া নার্সিং কলেজের লোকপুর ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা যখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, সেই সময় স্থানীয় এক যুবককে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতেও দেখা গেল। পরে পুলিশ কর্মীরা তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। গ্রেফতার করা হয় লোকপুরের বেতাব সহিস, টুকুল সহিস ও সুকুমার সহিসকে।
বাঁকুড়া কলেজ অব নার্সিং-এর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ৩৮ জন ছাত্রী লোকপুরে চক্ষুবিভাগের পাশে আংশিক ভাবে ঘেরা একতলার হস্টেলে থাকেন। বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁদের হোস্টেলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলছে। জুন মাস থেকে তা আরও বেড়ে যায়। নার্সিং ছাত্রী মহুয়া সাহা, সোনালি গড়াইরা বলেন, “রাতে হস্টেলের ছাদে উঠে এক দল দুষ্কৃতী উপদ্রব করে। প্রতিবাদ করলে কটূক্তি করে। এমনকী দরজা ভেঙে আমাদের ঘর থেকে জিনিসপত্রও চুরি করে নিয়ে যায়।” হস্টেলের ১৫ নম্বর ঘরের জানালার কাঠ ছাড়ানো। ওই ঘরে থাকেন পূর্ব মেদিনীপুরের অনিতা রানা ও জৈতা মাঝি। তাঁদের বক্তব্য, “দুষ্কৃতীরা রড দিয়ে জানলার কাঠ ভেঙে দিয়েছে। রাতে ওই ফাঁক থেকে ঘরের ভিতরে উঁকি মারে। আমাদের ভয় দেখায়।” অনিতা মুলা, নন্দিতা পালরা বলেন, “গত অক্টোবর মাসে ১৪ নম্বর ঘরের দরজা ভেঙে লুঠপাট হয়। তারপর থেকে ওই ঘরে কেউ আর থাকেন না।” কিছু ছাত্রী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগও এনেছেন। |
দুষ্কৃতীদের দাপট দেখা গেল এ দিনও। লোকপুর ক্যাম্পাসে এক দিকে বিক্ষোভ চলছিল। ওই ক্যাম্পাসের অন্যত্র ছিলেন কিছু পুলিশকর্মী। সেই পরিস্থিতিতেও কিছু ছাত্রী সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় এক অভিযুক্ত মদ্যপ অবস্থায় বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের কাছে এসে গালিগালাজ করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। সেই সময় হস্টেলের পিছনে গিয়েও কিছু ছেলেকে জটলা করতে দেখা যায়। ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রায় দিনই হস্টেলের পিছনে কিছু ছেলে নেশা করতে আসে।
নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষা বিষ্ণুপ্রিয়া বিশ্বাসও ওই ছাত্রী আবাসের ক্যাম্পাসেই থাকেন। তাঁর আশঙ্কা, “দুষ্কৃতীরা যে ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে, তাতে ছাত্রীরা মোটেই নিরাপদে নেই। এ নিয়ে পুলিশের কাছে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে পুলিশ আসে, টহল দেয়। তখন কিছু দিন দৌরাত্ম্য বন্ধ থাকে। টহল বন্ধ হলেই ফের ওরা উপদ্রব শুরু করে।” সমস্যার সমাধানের জন্য হোস্টেল চত্বরে তিনিও ছাত্রীদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। ছাত্রীরা বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু ও মহকুমাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে (বাঁকুড়া সদর) একই দাবিতে স্মারকলিপি দেন। তবে ওই হস্টেলে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তাঁর আশ্বাস, “পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। বাসিন্দাদের সঙ্গেও আলোচনায় বসা হবে। তবে নার্সিং কলেজ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই সেখানে আলাদা করে নিরাপত্তা কর্মী রাখতে হবে।” বাঁকুড়া সদর থানা দাবি করেছে, ওই হোস্টেলে দৌরাত্ম্যের অভিযোগে ইতিপূর্বে কয়েকজনকে ধরা হয়েছে।
মহকুমাশাসক বলেন, “দুষ্কৃতীদের ধরপাকড়ের জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” জেলাশাসক বিজয় ভারতীও আশ্বাস দিয়েছেন। হাসপাতাল সুপার বলেন, “নার্সিং ছাত্রীদের জন্য নতুন হস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে ওদের নিরাপত্তার বিষয়েও নজর রয়েছে।’’ ওই কাজের দায়িত্বে থাকা পিডব্লউডি-র মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্টান্ট ইঞ্জিনিয়ার রূপেশ কুমার বারুই জানান, মার্চ মাসের মধ্যেই নতুন হস্টেল তৈরি হয়ে যাবে।
তত দিন কি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলবেই? প্রশ্ন তুলেছেন নার্সিং হস্টেলের ছাত্রী ও তাঁদের পরিজনেরা। |