কিষেণজি নেই, ‘অশরীরী’
আনাগোনা তবু থামেনি
ঠিক এক বছর পর জামবনির বুড়িশোল। গত বছর ২৪ নভেম্বরের সন্ধ্যায় এবড়ো-খেবড়ো এই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েছিলাম। অন্ধকারে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর হঠাৎই নাগাড়ে গুলির আওয়াজে আতঙ্কে পুলিশের গাড়ির আড়ালে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। গভীর রাতে পুলিশকে অনুসরণ করে সরু মাটির রাস্তা ধরে খানিক হেঁটে গিয়ে দেখেছিলাম, উই ঢিবির আড়ালে দু’টো খেজুর গাছের চারার কাছে পড়ে রয়েছে কিষেণজির দেহটা।
সেই খেজুর চারা দু’টো এখন কোমর সমান। মাটির রাস্তায় মোরাম পড়েছে। পাশে ধানজমির ধার বরাবর তৈরি হয়েছে সরু পাকা সেচনালা। অন্য পাশে খোঁড়া হয়েছে বিশাল পুকুর। গুলি-লাগা গাছগুলো কই? একটা-দুটো গাছ খুঁজে পাওয়া গেল, কিন্তু তাতে গুলির দাগ বেয়ে উই ধরেছে। ফুটেছে বনশিমুল। শাল জঙ্গলের ভিতর সেই জায়গাটা আজ যেন অচেনা!
এমন করেই কি বদলে গিয়েছে জঙ্গলমহল?
কিছু বদল তো এসেছেই। ‘মাওভূমি’ বলে পরিচিত বেলপাহাড়ি, লালগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও এখন বিনা বাধায় যাওয়া যাচ্ছে। এক সময় গ্রামের যুবকরা আতঙ্কে ভিন্ রাজ্যে দিনমজুরের কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। সেই যুবকদের অনেকেই এখন গ্রামে ফিরেছেন। তালপুকুরিয়া গ্রামের অনিল সর্দার বলেন, “সুখ না থাক, অশান্তিও নেই। তাই গ্রামে ফিরেছি।”
অশান্তি নেই, শান্তি আছে কি? পুলিশ আগের মতো স্কুল দখল করে না ঠিকই। কিন্তু গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সরকারি অতিথিশালায় ক্যাম্প করে রয়েছেন সিআরপি, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের জওয়ানেরা। শুধু ঝাড়গ্রাম মহকুমার আটটা ব্লকেই তিরিশেরও বেশি ক্যাম্প রয়েছে। খাস ঝাড়গ্রাম শহরে সিআরপি-র একটি হেড কোয়ার্টার। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্যই এই আয়োজন। তবু ভিন্ রাজ্যের এই সব জওয়ান আর তাঁদের হাতে উঁচিয়ে থাকা ইনসাস, মেশিনগানের জন্য এলাকাকে ‘শান্তিপূর্ণ’ বলতে হোঁচট খেতে হয়।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে নানা রকম ভাবে চেষ্টা অবশ্য চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের উদ্যোগে গ্রামে-গ্রামে পুরুষ ও মহিলা ফুটবল দল গড়ে উঠেছে। চোখের ছানি অপারেশন থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, বস্ত্র বিলি, দুঃস্থ পড়ুয়াদের আর্থিক সাহায্য করার কর্মসূচি নিচ্ছে পুলিশ। তবু গ্রামবাসীদের মনে অস্বস্তির একটা কাঁটা কিন্তু রয়েই গিয়েছে।
বদলায়নি জঙ্গলমহলে রাজনীতির অঙ্কটাও। বাম জমানায় বিরোধী তৃণমূলের সঙ্গে তলায়-তলায় মাওবাদীদের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করত সিপিএম। আজ বিরোধী দল সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ করছে শাসক দল তৃণমূল। সিপিএম থেকে ‘সন্ন্যাস’ নেওয়া প্রবীণ এক নেতার কথায়, “রাষ্ট্রবিরোধিতা ছাড়া মাওবাদীদের যেমন অস্তিত্ব নেই, তেমনই সংসদীয় রাজনীতিও মাওবাদীদের ছাড়া চলতে পারে না। মাওবাদীরা নির্মূল হোক, এমনটা চায় না কোনও রাজনৈতিক দলই।”
অনুন্নয়ন আর বঞ্চনাকে কেন্দ্রে রেখেই সেই রাজনীতির আবর্তন। লালগড়ের নির্মল কিস্কু, বেলপাহাড়ির সনৎ মাহাতোদের কথায়, “আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেখানেই আছি।” হয়তো সেই জন্যই আজও মাওবাদীদের আনাগোনা টের পেলেও গ্রামবাসীরা তা নিয়ে শোরগোল করেন না। লালগড় ও বেলপাহাড়ির জঙ্গলঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা শুধু জানালেন, “ওরা গ্রামে এলেও বেশিক্ষণ থাকছে না।”
তা হলে কি কিষেণজির মৃত্যুর এক বছর পরেও আসেনি মাও-মুক্তি? আবার কি সংগঠন গড়ছে মাওবাদীরা? পঞ্চায়েত ভোটের হাওয়া গরম হলেই তা টের পাওয়া যাবে, আশঙ্কা গোটা জঙ্গলমহলে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.